ভাগ্যকুল-কদুখোলা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষা সফর অনুষ্ঠিত


প্রকাশের সময় :৩০ মার্চ, ২০১৮ ৩:৫১ : পূর্বাহ্ণ 2063 Views

বান্দরবান অফিসঃ-ভাগ্যকুল-কদুখোলা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষা সফর অনুষ্ঠিত হয়েছে।গতকাল বৃহস্পতিবার (২৯ মার্চ উক্ত) শিক্ষা সফরটি অনুষ্ঠিত হয়।সুয়ালক ইউনিয়নের কাইচতলী হলুদিয়া এলাকায় জেলা প্রশাসন স্থাপিত প্রান্তিক লেকের মনোরম পরিবেশে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের নিয়ে সফরটি অনুষ্ঠিত হয়।শিক্ষা সফরের মূল অনুষ্ঠান টি তিনটি পর্বে ভাগ করা হয়।পর্ব গুলো ছিলো প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীদের সংবর্ধনা,বিদ্যালয়ে কর্মরত প্রাক্তন শিক্ষকদের সংবর্ধনা,ভাগ্যকুল-কদুখোলা উচ্চ বিদ্যালয়ে পূর্ববর্তী সময়ে অনুষ্ঠিত বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরষ্কার বিতরণ।শিক্ষা সফরে পাশাপাশি শিক্ষক,শিক্ষার্থী,স্থানীয় বিভিন্ন ওয়ার্ড এর নির্বাচিত সদস্য সহ সর্বমোট আড়াইশ জনকে নিয়ে দুপুরে বনভোজন অনুষ্ঠিত হয়।বনভোজন এর অন্যতম আকর্ষণ ছিলো বিভিন্ন বিনোদনমূলক ডিসপ্লে,লাকী কুপন লটারির ড্র এবং প্রান্তিক লেকের সবুজ পানিতে নৌকা ভ্রমণ।দিনব্যাপী শিক্ষা সফরের এই আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বান্দরবান সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা আব্দুল কুদ্দুছ।এসময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ৪নং সুয়ালক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জনপ্রিয় তরুণ উদীয়মান জনপ্রতিনিধি উ ক্যা নু মার্মা,সুয়ালক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল কবীর,সুয়ালক উচ্চবিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক নার্গিস আক্তার,সুয়ালক উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক পাঁচকডি দাশ,সিনিয়র শিক্ষক দিপু কুমার বড়ুয়া,গয়ালমারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফরিদ উদ্দিন ভুইয়া,তরুণ ব্যাবসায়ী মুশফিকুর রহমান সোহেল,সুয়ালক ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড সদস্য সবুর মেম্বার,২নং ওয়ার্ড সদস্য জসিম উদ্দিন,মালেক মেম্বার,কামাল মেম্বার সহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও অত্র এলাকার বিভিন্ন পেশাজীবী নেতৃবৃন্দ।উদ্যোক্তা সুত্রে জানা যায়,প্রাথমিকভাবে সফরটি সফল করার জন্য বিদ্যালয়ের তরফ থেকে শুরুতে ছাত্রছাত্রীদের প্রত্যেক এর জন্য ১৫০ টাকা করে চাদা নির্ধারণ করা হলেও পরবর্তীতে অনুষ্ঠান চলাকালীন সময় বান্দরবান সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা আব্দুল কুদ্দুছ চাদা সংগ্রহের কার্যক্রম টি তাৎক্ষণিক স্থগিত করার নির্দেশনা দেন এবং শিক্ষা সফরের যাবতীয় খরচ নিজের ব্যাক্তিগত তহবিল থেকে পরিশোধ করার ঘোষণা দেন।শিক্ষা সফরে সর্বমোট দেড়শো কোমলমতি শিক্ষার্থী অংশ নেয়।পাশাপাশি প্রান্তিক লেকের কাছাকাছি নিকটবর্তী বেশকয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক,কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাও উপস্থিত ছিলেন এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মসূচী উপভোগ করেন।দুপুর দেড়টায় ছাত্রছাত্রীরা বনভোজনের অন্যতম অংশ হিসেবে দুপুরের খাবার গ্রহন করেন এবং শিক্ষার্থীরা খাবার গ্রহনকালে বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা আব্দুল কুদ্দুছ ঘুরে ঘুরে শিক্ষার্থীরা পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার পাচ্ছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করেন।শিক্ষার্থীদের খাবার গ্রহন শেষে সফরের অতিথিবৃন্দরা দুপুরের খাবার গ্রহণ করেন।এর পরপরই সফর উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভা এবং লাকী কুপন ড্র অনুষ্ঠিত হয়।উল্লেখ্য দুপুরের খাবারের মেনুতে ছিলো সাদা ভাত,মুরগির মাংস,খাসির মাংস,ডিম ও এক ধরনের ডাল।বনভোজনের আনুষ্ঠানিকতা শেষে আলোচনা সভা শুরু হয়।ভাগ্যকুল কদুখোলা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুমল দাশের সভাপতিত্বে আয়োজিত আলোচনা সভায় বান্দরবান সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুছ প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন।বক্তব্য রাখতে গিয়ে বক্তব্যের শুরুতেই বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার শুরুর ঘটনা বলতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পরেন এবং মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে অশ্রুসিক্ত হয়ে পরেন।এসময় আলোচনা সভায় পিনপতন নিরবতা নেমে আসে।পরে তিনি নিজের আবেগ সংবরণ করে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করেন।এসময় তিনি সুয়ালক উচ্চবিদ্যালয় ও ভাগ্যকুল কদুখোলা উচ্চ বিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় পার্বত্য চট্রগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি’র ভূয়সী প্রশংসা করে প্রতিমন্ত্রী মহোদয়ের প্রতি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।প্রতিমন্ত্রী মহোদয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে গিয়ে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাতা আব্দুল কুদ্দুছ আরও বলেন,আমার হাতে প্রতিষ্ঠিত এই দুটি বিদ্যালয়ের বেশিরভাগ পাকা দালানগুলো পার্বত্য প্রতিমন্ত্রীর দেয়া বরাদ্দে তৈরী করা।যখন যেকোনও সময়েই বিদ্যালয়ের প্রয়োজনে পার্বত্য প্রতিমন্ত্রীর কাছে গিয়েছি তিনি কখনও নিরাশ কিংবা খালি হাতে ফিরিয়ে দেননি।দলমতের উর্ধ্বে উঠে সবসময় তিনি সহায়তা ও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।তিনি যখন পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড এর চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বশীল ছিলেন তখনও তিনি সুয়ালক উচ্চবিদ্যালয় কে আধুনিক অবকাঠামো সম্পন্ন বিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তোলতে ব্যাপক সহযোগিতা করেছেন আবার পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী হওয়ার পর আমি যখন ভাগ্যকুল কদুখোলা উচ্চবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কথা তাঁর সামনে তুলে ধরলাম সাথে সাথে তিনি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন।যদি তিনি এই অবকাঠামো গুলো নির্মাণে সহযোগিতা না করতেন তবে তাহলে আজকে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করার জন্য এতো উন্নতমানের শ্রেনী কক্ষের দেখা পেতোনা এবং শিক্ষা কার্যক্রমও বাধাগ্রস্ত হতো।তাই সমগ্র সুয়ালক ইউনিয়নের জনগণের পক্ষ থেকে বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি কে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।এসময় উপস্থিত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা জোড় করতালির মধ্য দিয়ে বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা আব্দুল কুদ্দুছ চেয়ারম্যান এর বক্তব্য কে স্বাগত জানান।পাশাপাশি তিনি পুনরায় অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম ও পাঠদান এর মান উন্নয়নে অতীতের ন্যায় আগামীতেও সবরকমের সহযোগিতা দিবেন বলে ওয়াদা সহকারে প্রত্যয় ব্যাক্ত করেন।এসময় তিনি শিক্ষকদের প্রতি যত্ন সহকারে পাঠদান নিশ্চিত করার অনুরোধ করেন পাশাপাশি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়মিত বিদ্যালয়ে উপস্থিত ও পড়াশোনার প্রতি মনযোগ বাড়াতে আহবান জানান।এসময় তিনি আরও বলেন এই সুয়ালক ইউনিয়ন এর সর্বস্তরের জনগণের ভালোবাসা ও দোয়ায় আমি অতীতে সুয়ালক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হিসেবে সুয়ালকবাসীর খেদমত করার সুযোগ পেয়েছি এবং সুয়ালক ইউনিয়নের এর জনগণের ভালোবাসা ও দোয়ায় সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে এখনও আপনাদের খেদমত করে যাচ্ছি।এটা আমার জীবনকে গর্বিত করেছে।আমি এবং আমার পরিবার আপনাদের কাছে চিরকৃতজ্ঞ।আপনাদের ভালোবাসার দোয়া আমার জনপ্রতিনিধিত্বের জীবনকে সফল করেছে এবং অবশ্যই স্বার্থক করেছে।বান্দরবান সদরের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে সবসময় আপনাদের পাশে ছিলাম,বর্তমানেও আছি এবং আগামীতেও থাকবো ইনশাল্লাহ।সুয়ালক ইউনিয়নে শিক্ষার আলো ঘরে ঘরে পৌছে দিতে আমি আমার জায়গা থেকে বিন্দু পরিমাণ অবহেলা করিনি।আজকে সুয়ালক উচ্চবিদ্যালয় যেমন শিক্ষা ক্ষেত্রে দিনকে দিন উন্নতি করেছে ঠিক একইভাবে ভাগ্যকুল-কদুখোলা উচ্চ বিদ্যালয়ও একদিন সফলতার মুখ দর্শন করবে বলে আমি গভীরভাবে বিশ্বাস করি।বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখতে গিয়ে উক্যানু মার্মা ৪নং সুয়ালক ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে সকল শিক্ষক,শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা কর্মচারীদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।এসময় তিনি সুয়ালক ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে শিক্ষার মান উন্নয়নে যখন যে সহযোগিতার প্রয়োজন হবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি হিসেবে তিনি তা নিশ্চিত করবেন বলে ঘোষণা দেন।আলোচনা সভা শেষে ভাগ্যকুল-কদুখোলা উচ্চবিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের হাতে পুরষ্কার তুলে দেয়া হয় এবং লাকী কুপন ড্র অনুষ্ঠিত হয়।লাকি কুপন ড্র এর প্রথম পুরষ্কার টি সুয়ালক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লটারি প্রক্রিয়ায় জিতে নেন।এছাড়াও শিক্ষা সফরে ছাত্রছাত্রীরা প্রান্তিক লেকে নৌকা ভ্রমণ করে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন।

ট্যাগ :

আরো সংবাদ

ফেইসবুকে আমরা



আর্কাইভ
November 2024
M T W T F S S
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031  
আলোচিত খবর

error: কি ব্যাপার মামা !!