বান্দরবান অফিসঃ-বান্দরবানের থানচি আলীকদম সীমান্তে মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী দল আরাকান আর্মির (এএ) তৎপরতা বৃদ্ধিতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে প্রশাসন।দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম সশস্ত্র-প্রশিক্ষিত এই দলটি বাংলাদেশ থেকে তাদের সদস্য সংগ্রহ শুরু করেছে।ইতোমধ্যে বান্দরবানের থানচি ও আলীকদমের বিভিন্ন পাড়ায় যুবকদের রিক্রুট করার জন্য বার্মিজ ভাষায় লেখা চিঠি দিয়েছে সংগঠনটি। এতে সীমান্তে বসবাসকারী লোকজন এখন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। সীমান্তের বিভিন্ন পাড়া থেকে পাহাড়ি যুবকরা থানচি সদরে এসে আশ্রয় নেয়ারও খবর পাওয়া গেছে।এদিকে উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় থানচিতে জরুরি বৈঠক করেছে প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা।বৈঠকে সীমান্তের ভুক্তভোগী লোকজনও উপস্থিত ছিলেন।সীমান্তের লোকজনকে আতঙ্কিত না হতে বৈঠকে আহ্বান জানানো হয়।থানচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে আলীকদমের সেনা জোনের অধিনায়ক লে. কর্নেল মাহাবুবুর রহমান,বলিপাড়া বিজিবি ব্যাটালিয়নের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেজর রুহুল আমিন,বান্দরবান রিজিয়নের কর্মকর্তা মেজর মাহাফুজুল হক,থানচি উপজেলা চেয়ারম্যান ক্যহ্লাচিং মারমাসহ তিন্দু ও রেমাক্রী ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান ও স্থানীয় মেম্বাররা উপস্থিত ছিলেন।বৈঠকটিতে সীমান্তে বসবাসকারী লোকজন জানান,মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আরাকান আর্মি উপজেলার বিভিন্ন পাড়াতে পাহাড়ি যুবকদের রিক্রুট করতে চিঠি দিয়েছে।এছাড়া পুরনো সদস্যদের আগামী ৩১ মার্চ প্রশিক্ষণে অংশ নেয়ার জন্য বার্মিজ ভাষায় লেখা চিঠি দিয়েছে।ইতোমধ্যে ভয়ে কিছু মারমা যুবক সংগঠনটিতে যোগ দিলেও বেশিরভাগই আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।তারা বিষয়টি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের জানানোর পর প্রশাসন সেখানে জরুরি বৈঠক করে।প্রশাসন ও নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তারা স্থানীয় লোকজনকে ভয় না পাওয়ার জন্য এবং সংগঠনটিতে যোগ না দেয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,গত এক দশক ধরে বান্দরবান পার্বত্য জেলার রুমা, থানচি ও আলীকদম উপজেলা সংলগ্ন মিয়ানমারের চীন ও আরাকান রাজ্যে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আরাকান আর্মির সাথে সেখানকার সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ চলে আসছে।গত সেপ্টেম্বরে আরাকান আর্মি চীন রাজ্যের প্লেতুয়া এলাকায় কয়েকটি সেনা চৌকিতে আক্রমণ করলে উত্তেজনা দেখা দেয়। বার্মিজ সেনাবাহিনীর প্রতিরোধের মুখে আরাকান আর্মি পিছু হটলেও তারা বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকার পাহাড়ি গ্রামগুলো থেকে লোকজনকে বিশেষ করে পাহাড়ি যুবকদের রিক্রুট করা শুরু করে।রুমা ও থানচি উপজেলা সীমান্তের পাড়াগুলোর লোকজনকে তারা রশদ পরিবহনেও কাজে লাগাচ্ছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।এদিকে নতুন করে পাহাড়ি যুবকদের রিক্রুট করার খবরে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। থানচি ও আলীকদম উপজেলার কমপক্ষে ১০০ পাহাড়ি গ্রামে সংগঠনটি নতুন সদস্য রিক্রুট করার জন্য চাপ দিয়ে চিঠি দিয়েছে বলে জানা গেছে।থানচি উপজেলা চেয়ারম্যান ক্যহ্লাচিং মারমা জানান, সীমান্তের স্থানীয়রা বিষয়টি জানানোর পর আমরা প্রশাসন ও নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে কথা বলেছি।স্থানীয়দের আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য আমরা প্রচারণা চালাচ্ছি।গত মঙ্গলবার ভুক্তভোগীদের সাথে বৈঠকও করা হয়েছে বিষয়টি নিয়ে।থানচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানান, সীমান্তের পাড়াগুলো থেকে পাহাড়ি যুবকদের রিক্রুট করার খবর পাওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।পাহাড়ি যুবকরা যাতে সংগঠনে যোগ না দেয় এবং তারা যাতে আতঙ্কিত না হয় সে জন্য তাদের বুঝানো হয়েছে।জনপ্রতিনিধিদেরও বুঝানোর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মো. আসলাম হোসেন জানান, বিষয়টি খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে। সীমান্তের এলাকাগুলো খুবই দুর্গম। এ কারণে সঠিক খবর পেতে সমস্যা হয়।
বলিপাড়া বিজিবি ব্যাটালিয়নের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেজর রুহুল আমিন জানান, থানচিতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে লোকজনদের আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য বলা হয়েছে। সীমান্তে বিজিবি তৎপর রয়েছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।