সিএমপির ওসি মহসিন পাচ্ছেন আইজিপি ব্যাচ


প্রকাশের সময় :৭ জানুয়ারি, ২০১৮ ১:০৬ : পূর্বাহ্ণ 643 Views

সিএইচটি টাইমস নিউজ ডেস্কঃ-নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি থানার পশ্চিম শহীদ নগর এলাকার ২৮টি মাদক মামলার আসামি হাছান বানু প্রকাশ পাখি (৫০)।কুখ্যাত মাদকসম্রাজ্ঞী হিসেবে যার নাম ছিল পুলিশের তালিকায়।ধরা পড়তো,জেলে যেত,জামিন পেয়ে আবার জড়িয়ে পড়ত মাদক ব্যবসায়।পুলিশের সঙ্গে লুকোচুরি খেলতে খেলতে যে পাখি আঁকড়ে ধরেছিল অন্ধকার জগৎ,সেই পাখিকে আলোর সন্ধান দিয়েছেন একজন পুলিশ কর্মকর্তা।২০১৬ সালের ৫ এপ্রিল সপ্তমবারের মতো পাখিকে গ্রেফতারের পর তার কানে ‘ভাল হয়ে যাবার মন্ত্র’ দেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা।জেলে যাবার আগে পাখি ওই কর্মকর্তাকে কথা দিয়েছিলেন। জেল থেকে বেরিয়ে পাখি তা‍র কাছে এসে শপথ নেন ভাল হয়ে যাবার।সহযোগিতার হাত বাড়ান তিনি।আইজিপি পাখির হাতে তুলে দেন সেলাই মেশিন।পাখি এখন একটি সেলাই দোকানের মালিক।শুধু পাখি নয়,চন্দ্রনগর মাজার এলাকার ১৬ মামলার আসামী শাহনাজ বেগম শানু (৩৫),লম্বার গলি এলাকার ১৭ মামলার আসামী রহিমা (৫২),বার্মা কলোনী এলাকার ২২ মামলার আসামী জুলেখা বেগম (৬০) এবং বাংলাবাজার এলাকার ১১ মামলার আসামী রত্না বেগমের (৫০) জীবনের গল্পও একই।তাদের সবাইকে অন্ধকার জগৎ থেকে ফিরিয়ে নিজ নিজ এলাকায় ছোটখাট ব্যবসায় প্রতিষ্ঠিত করেছেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা।ওই পুলিশ কর্মকর্তার নাম মোহাম্মদ মহসিন।আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি এবং বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য সমালোচনার মুখে থাকা বায়েজিদ বোস্তামি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পদে মোহাম্মদ মহসিন দায়িত্ব নিয়েছিলেন ২০১৫ সালের ৫ ডিসেম্বর।২০১৭ সালের ২০ আগস্ট পর্যন্ত সেই দায়িত্বে ছিলেন তিনি।প্রায় দুই বছর দায়িত্ব পালনের সময় ওসি মহসিন বায়েজিদ বোস্তামি থানায় নতুন ধরনের কাজের সূচনা করেছিলেন।এলাকাবাসীর কাছে এই কাজ জনবান্ধব পুলিশিং হিসেবে পরিচিতি পায়।গতানুগতিকতার বাইরে গিয়ে কমিউনিটি পুলিশিং অর্থাৎ ‘পুলিশই জনতা, জনতাই পুলিশ’ এই কাজের সূচনা করেছিলেন মহসিন।
জনবান্ধব এই কাজের স্বীকৃতি ‍এবার পাচ্ছেন মোহাম্মদ মহসিন।২০১৭মোহাম্মদ মহসিন সালের ভালো কাজের জন্য মহসিন পাচ্ছেন আইজিপি ‍গুড সার্ভিস ব্যাচ।১০ জানুয়ারি শীল্ড প্যারেড পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে মহসিনকে ব্যাচ পরিয়ে দেবেন আইজি একেএম শহীদুল হক। এর আগে ২০০৯ সালে প্রেসিডেন্ট পুলিশ মেডেল (পিপিএম) পেয়েছিলেন তখনকার উপ-পরিদর্শক মোহাম্মদ মহসিন।দ্বিতীয়বার কাজের স্বীকৃতি পাবার অনুভূতি জানতে চাইলে তিনি বলেন,আমার চাকরি জীবনে আমি সবসময় কাজের মধ্য দিয়ে মানুষের কাছে পৌঁছাবার চেষ্টা করেছি।পুলিশ আর মানুষের মধ্যে তফাৎ গোছাবার চেষ্টা করেছি।‘বায়েজিদ বোস্তামি থানায়ও আমি জনবান্ধব কাজ করার চেষ্টা করেছি।চিহ্নিত অপরাধীদের আটক-গ্রেফতারের চেয়েও সচেতনতার মাধ্যমে সুপথে ফিরিয়ে আনায় কৌশল নিয়েছিলাম।এই কৌশলে আমি সুফল পেয়েছি এবং স্বীকৃতি পাচ্ছি।যে কোন পুরস্কার কাজের স্পৃহা বাড়ায়।এই পুরস্কার আমার কাজের গতি বাড়াবে।’ গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী,২০১৭ সালে ৮ মাস দায়িত্ব পালনকালে ওসি মহসিন ৮টি বিট পুলিশিংয়ের মাধ্যমে প্রায় ৩০০ উঠান বৈঠক করেন।এর ফলে ২০১৭ সালে আগের বছরের চেয়ে এক তৃতীয়াংশ অপরাধ কমে যায়।২০১৭ সালে বায়েজিদে আমিন জুটমিলসহ শতাধিক শিল্প প্রতিষ্ঠানে তেমন কোন শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা ঘটেনি।চা বোর্ডের এক একর জমি অবৈধ দখল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে একেবারে কোনো ধরনের বল প্রয়োগ ছাড়াই।মোহাম্মদ মহসীনের দায়িত্ব পালনের সময় চাঞ্চল্যকর ক্লুলেস মামলার রহস্য উদঘাটনেও বিশেষ সাফল্যের পরিচয় দিয়েছে বায়েজিদ বোস্তামি থানা।২০১৭ সালের ২২ মার্চ বোস্তামি থানার পশ্চিম সৈয়দনগরের চারতলার মোড় আবু সৈয়দ সাহেবের বিল্ডিয়ের ৩য় তলা ফ্ল্যাটের বাসা থেকে হাত পা বাঁধা অজ্ঞাত এক তরুণের লাশ উদ্ধার করা হয়।পরে বিভিন্ন সূত্রে লাশটি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. আলাউদ্দিনের বলে নিশ্চিত হয় পুলিশ।চবি শিক্ষার্থী হত্যাকান্ডের সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে ক্যাম্পাসসহ নগরজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়।আন্দোলনে নামে তার সহপাঠীরা।তবে মাত্র সাত দিনে খুনের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত চার আসামিকে গ্রেফতার করে তাদের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি নিয়ে রহস্য উন্মোচন এবং সার্বিক পরিস্থিতি সামাল দিতে সক্ষম হয় বায়েজিদ থানা।দেশজুড়ে আলোড়ন তোলা দুই বছরের শিশু মাহীকে অপহরণের পর মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছিল বায়েজিদ বোস্তামি থানা।মাদক উদ্ধারে সবচেয়ে বড় সাফল্য আছে মোহাম্মদ মহসীনের।২০১৭ সালের ৮ মাস দায়িত্ব পালনের সময়ে ২৫৬টি মাদকদ্রব্য মামলায় ৪১০ জন আসামীকে গ্রেফতার করে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হয়।তাদের হেফাজত হতে ৩,২১,৯৯৯ পিস ইয়াবা,২,৯৭৫ লিটার চোলাই মদ,২০ কেজি গাঁজা,৩৩৯ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়।এই সময়ের মধ্যে ৫২৫টি জি.আর,৬৩০ টি সি.আর এবং ৩৮টি সাজা প্রাপ্ত গ্রেফতারী পরোয়ানা তামিল করা হয়।বায়েজিদ বোস্তামী থানার তালিকাভুক্ত ২০ জন শীর্ষ সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।রুজু হওয়া ৪৬২টি মামলার মধ্যে ২৫টি মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন এবং ৪৩৭টি মামলার চার্জশীট প্রদান করা হয়।২০১৭ সালের ৮ মাসে ১৩টি অস্ত্র মামলায় ২০ জন আসামীকে গ্রেফতার করা হয়।তাদের কাছ থেকে ০৩টি পিস্তল,০৪টি এলজি,০১ টি রিভলভার,০১টি শার্টারগান,০১টি পাইপগান,০৭টি খালী ম্যাগাজিন,২৬ রাউন্ড কার্তুজ,১৬ রাউন্ড গুলি,২২টি ছোরা উদ্ধার করা হয়।গোপালগঞ্জ সদরের সন্তান মোহাম্মদ মহসিন ২০০১ সালে পুলিশ বাহিনীতে উপ-পরিদর্শক পদে যোগ দেন।নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি থানার আগে তিনি বাকলিয়া থানায়ও দায়িত্ব পালন করেছিলেন।বর্তমানে নগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক পদে কর্মরত আছেন।

ট্যাগ :

আরো সংবাদ

ফেইসবুকে আমরা



আর্কাইভ
November 2024
M T W T F S S
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031  
আলোচিত খবর

error: কি ব্যাপার মামা !!