চোলাই মদের ব্যবসা বন্ধের দাবিতে উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে সাঁওতাল,ওঁরাও এবং মুসোহর সম্প্রদায়ের নারী ও শিশুরা গত কয়েক দিন ধরে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করছেন।তাঁদের অভিযোগ,কিছু সংখ্যক পরিবার এখন বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চোলাই মদ তৈরি বিক্রি করছে।এতে পুরুষদের মধ্যে মাদকাসক্তি বাড়ছে এবং মাতাল পুরুষদের হাতে পরিবারে নারী নির্যাতনের ঘটনা বাড়ছে।জেলার পাঁচ উপজেলায় প্রায় ৪০ হাজার সাঁওতাল,ওরাঁও,মুন্ডা ও মুসোহর জনগোষ্ঠীর বাস।তাঁদের বেশির ভাগই সাঁওতাল এবং ওঁরাও সম্প্রদায়ের।
কয়েক দিন ধরে সেখানে দশ–বারোটি গ্রামের নারী, শিশু ও কিশোরীরা বিক্ষোভ সমাবেশ করছেন। গত ১৮ আগস্ট রাতে শহরের কলেজ পাড়া মহল্লার স্টিফান তির্কী নামে ওঁরাও জনগোষ্ঠীর এক সদস্য দুর্বৃত্তদের হাতে খুন হন। ঘটনাটি এলাকার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নারীদের আহত করেছে।
শুক্রবার (২৫ আগস্ট) বিক্ষোভের সময় নয়মী টপ্প নামে মধ্যবয়সী এক নারী চোখের পানি মুছে বলেন, ‘স্টিফান তির্কী তো চলেই গেছেন। কিন্তু তার দুই শিশু সন্তান ও স্ত্রী ভেরোনিকার এখন কী হবে? ভেরোনিকারা আর কত দিন এভাবে চোখের জল ফেলবে!’ জেসপিনা এক্কা নামে আরেকজন নারী আবেগ আপ্লুত হয়ে বলেন, ‘আমি হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি স্বামী হারানোর যাতনা! ছেলে-মেয়েকে নিয়ে কীভাবে যে দিন পার করছি তা একমাত্র সৃষ্টিকর্তাই জানে!’ ‘জাতীয় আদিবাসী পরিষদ’ নামে একটি সংগঠনের উদ্যোগে এই প্রতিবাদ শুরু হয়েছে।ওরাঁও,সাঁওতালরা বিভিন্ন উৎসবের সময় ঘরে চোলাই মদ তৈরি করে পান করে।কিন্তু এখন বাণিজ্যিকভাবে চোলাই মদ তৈরি করা হচ্ছে।এটি একেবারেই ভিন্ন বলে দাবি করেছেন সামিয়েল মার্ডি নামে একজন।
তিনি বলেন, ‘বাণিজ্যিকভাবে চোলাই মদ তৈরি করে বিক্রির ফলে ওরাঁও, সাঁওতাল গ্রামগুলোতে পুরুষদের মধ্যে মাদকাসক্তি বাড়ছে। ঘরে ঘরে মাতাল পুরুষদের হাতে নারী নির্যাতনের ঘটনা বাড়ছে।’ ‘জাতীয় আদিবাসী পরিষদ’ ঠাকুরগাঁওয়ে জেলা সভাপতি জ্যাকব খালকো বলেন, ‘বিশেষ দিন বা উৎসবের সময় ঘরেই চোলাই মদ তৈরি করে তা পান করে ওরাঁও,সাঁওতালরা।তবে এই সুযোগে একশ্রেণির মতলববাজ আমাদের জনগোষ্ঠীর লোকদের সর্বনাশ করছে। নেশায় বুঁদ হয়ে থাকা ব্যক্তিদের জায়গা–জমি লিখে নিচ্ছে তারা।এ ছাড়া দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে নারীদেরও ছাড় দিচ্ছে না।’
সামিয়েল মার্ডি অভিযোগ করে বলেন,এ জেলার রানীশংকৈল উপজেলার সুন্দর পুর গ্রামের সাঁওতাল গৃহবধূ বিউটি সরেনকে বাড়িতে একা পেয়ে ধর্ষণ করার ঘটনা সবারই জানা। বিউটি সরেনকে ধর্ষণের পর গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। ভয়ে পরিবারটি ভিটেমাটি ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ঠাকুরগাঁও সদর থানার ওসি ফিরোজ কবির বলেন, ‘ঘরে চোলাই মদ তৈরি উপজাতিদের একটা ঐতিহ্য।এটা পুলিশের পক্ষে বন্ধ করা সম্ভব নয়।তবে কেউ যদি নারী নির্যাতনের অভিযোগ করে,সেটার বিরুদ্ধে পুলিশ ব্যবস্থা নিতে পারে।’