পাহাড়ে নারীদের স্বাবলম্বী করে তুলতে পাইলট প্রকল্প হাতে নেন বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি। সেই পাইলট প্রকল্পে পাহাড়ের পিছিয়ে পড়া নারীদের প্রশিক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয় সিলেটের মৌলভীবাজারের মনিপুরী প্রশিক্ষক রাধাবতী দেবীকে।তার তত্ত্বাবধানে ১৫ দিনের প্রচেষ্টায় কলাগাছের তন্তু বা আঁশ থেকে সুতা তৈরি করা হয়।সেই সুতা দিয়ে দেশে প্রথমবারের মতো শাড়ি তৈরি করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন মনিপুরী রাধাবতী দেবী।নতুন এই শাড়িটির নাম দেওয়া হয়েছে রাধাবতী ও কলাগাছের সঙ্গে মিল রেখে ‘কলাবতী সুতি শাড়ি’।
সরেজমিনে জানা গেছে,বান্দরবান শহরের কালাঘাটা ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বড়ুয়ারটেক এলাকায় জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজির উদ্যোগে পাহাড়ি নারীদের দক্ষ ও স্বাবলম্বী করার লক্ষে একটি পাইলট প্রকল্প গ্রহণ করেন।এ প্রকল্পের আওতায় এ পর্যন্ত কয়েকটি ধাপে স্থানীয় প্রায় সাড়ে ৪শ নারীদের ধাপে ধাপে বিভিন্ন জেলা থেকে দক্ষ প্রশিক্ষক এনে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এছাড়াও তাদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি বিভিন্ন হস্তশিল্প তৈরির কাজে লাগানো হয়।এই কাজের বিনিময়ে প্রশিক্ষণার্থীদের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিয়মিত ভাতা প্রদান করা হয়।এ কারণেই পিছিয়ে পড়া পাহাড়ের নারীরা ইতোমধ্যে অনেকটা হস্তশিল্প কাজে আগ্রহী ও তারা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছে।
প্রশিক্ষণরত হস্তশিল্প শিক্ষার্থী উসিং ওঞাই,মিথুই প্রু ও সাবিনা ইয়াসমিনরা জানান,আমরা লেখাপড়ার পাশাপাশি এই হস্তশিল্পের কাজ শিখছি।এতে করে আমরা একদিকে হাতের কাজ শিখতে পারছি।অন্যদিকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছি এবং আমরা হস্তশিল্পের অনেকগুলো আইটেম তৈরি করতে পারি।
মৌলভীবাজারের হস্তশিল্প প্রশিক্ষক মনিপুরী রাধাবতী দেবী বলেন,কলাগাছের তন্তু বা আঁশ থেকে সুতা ও সেই সুতা থেকে দীর্ঘ ১৫ দিনের প্রচেষ্টায় একটি আকর্ষণীয় শাড়ি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি।আমি জেলা প্রশাসক ম্যাডামকে কথা দিয়েছি শাড়িটি তৈরি করব তাই সম্মান রক্ষার্থে রাত-দিন পরিশ্রমের মাধ্যমে কাজ সম্পন্ন করেছি।এই শাড়ি তৈরি করতে পারবো কিনা আমি খুবই চিন্তিত ছিলাম।জেলা প্রশাসকের সার্বিক সহযোগিতা ও অনুপ্রেরণায় নারীদেরকে নিয়ে আমি লক্ষ্যে পৌঁছাতে পেরেছি।
তিনি আরও বলেন,দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অনেক রকম সুতা দিয়ে শাড়ি তৈরি হয়।কিন্তু কলাগাছের সুতা দিয়ে শাড়ি দেশে এই প্রথম তৈরি হয়েছে।এ আকর্ষণীয় শাড়িটি ১ কেজি কলাগাছের সুতা দিয়ে ১৫ দিনের মধ্যে তৈরি হয়েছে। তবে আগামীতে কম খরচে আরও উন্নতমানের শাড়ি তৈরি করা সম্ভব হবে বলে।
বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি বলেন,এখানকার নারীরা পাইলট প্রকল্পের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কলাগাছের সুতা দিয়ে কলম দানি,ফাইল ফোল্ডার,টেবিল মেট,পাপোস,শোপিস,কানের দুলসহ বিভিন্ন পরিবেশবান্ধব হস্তশিল্প তৈরি করছে।এছাড়াও তারা বিভিন্ন ধরনের হস্তশিল্পের শৌখিন জিনিসপত্র তৈরি করছে।আর এগুলো ইতোমধ্যে ভালো দামে বিক্রিও হচ্ছে।এর মাধ্যমে জেলা প্রশাসক হিসেবে আমার স্বপ্ন ও চিন্তা স্বার্থক হয়েছে।
তিনি আরও বলেন,আমরা কলাগাছের সুতা থেকে একটি দৃষ্টিনন্দন শাড়ি তৈরি করতে পেরেছি। এটি দেখতে যেমন সুন্দর ও তেমন আকর্ষণীয়।এই শাড়িটি দেশে প্রথম কলাগাছের সুতা থেকে তৈরি হয়েছে।নাম দিয়েছি ‘কলাবতী সুতি শাড়ি’।আগামীতে জেলার ৭টি উপজেলার হস্তশিল্পে আগ্রহী নারীদের প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হবে।