স্বর্ণ চুরি করছি বলে ওরা আমাকে অনেক মারছে।আমি স্বর্ণ চুরি করিনি।পা দিয়ে মাথা চাপা দিছে।পিঠে বেল্ট দিয়ে মারছে।সলার ঝাড়ুর আগা দিয়ে আমাকে মারছে।হিমেল (ইউপি চেয়ারম্যান জসীমের বড় ছেলে) আমাকে মারছে। ঘরের দরজা বন্ধ করে আমাকে মারছে।মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) সকাল বান্দরবান সদর হাসপাতালে ভর্তি হওয়া শিশু সোয়াদের কথা এগুলো।গত শনিবার বান্দরবানের লামা উপজেলার আজিজনগরের ইউপি চেয়ারম্যান জসীম উদ্দীনের বাসায় নির্যাতনের ঘটনার কথা তুলে ধরেন শিশুটি।আজিজ নগরের ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সোয়াদ।
সোয়াদ আরো বলেন,ওরা আমাকে বলছে যে, আমার মা বাবাকে মেরে ফেলবে।চেয়ারম্যানও আমার মাকে মারছে। আমি কোনও স্বর্ণ নেয়নি।মারের ভয়ে আমি তাদেরকে বলছি স্বর্ণ চুরি করে মাকে দিয়ে দিয়েছি।হাসপাতালে ভর্তি হওয়া শিশুটির সঙ্গে থাকা মা সেলিনা আক্তার বলেন,গত ২ বছর আগে আমার ছেলেকে ওনাদের বাসায় কাজে দিয়েছি।আমার ছেলে আজ পর্যন্ত কোনদিন কোনও টাকা পয়সা চুরি করিনি। গত বুধবার হঠাৎ করে ওনাদের বাসায় যাবার জন্য আমাকে ফোন করে।আমি বৃহস্পতিবার ওদের বাসায় যায়।ওরা ইফতার দেয় আমি চলে আসি।তারা আবারও শনিবার আমাকে মোবাইল করে আমার ছেলে স্বর্ণ চুরি করছে বলে এবং আমাকে যেতে বলে।আমি ওদের বাসায় যাই।আমি ছেলেকে চুরির বিষয়ে জানতে চাইলেই জসীম চেয়ারম্যান আমাকে ঘাড়ে মারে এবং জানালায় বাড়ি খাওয়ায়।মাইর খাওয়ার পরে আমি আমার ছেলেকে স্বর্ণ চুরি করছে কিনা জানতে চাই,ছেলে তখন উত্তরে বলে ওদের মারের ভয়ে স্বর্ণ চুরি করে আমাকে দিছে বলছে।আমরা স্বর্ণ চুরি করিনি।তিনি আরো বলেন,এ সময় জসীম চেয়ারম্যানের বড় ছেলের নির্যাতনের বিষয়টি আমার ছেলে গেঞ্জি উল্টিয়ে দেখায়।তখন উনি কিছু বলেন নি।তবে আমাদের বলা হয় টাকা তিন লাখ টাকা দিয়ে যাবি,আর না হয় স্বর্ণ দিয়ে যাবি।আর টাকা না থাকলে,জমির কাগজ দিয়ে যাবি।আমরা দিন মজুর মানুষ।আমরা স্বর্ণ চুরি করিনি।ওরা বলতেছে আমার ছেলে একটা স্বর্ণের চুড়ি,একটা কানের দুল ও একটা আংটি চুরি করেছে।তিনি আরো জানান,ওর বাবা লামা থানায় বাদী হয়ে মামলা করে।জসীম চেয়ারম্যানও স্বর্ণ চুরি নিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করছে।
বান্দরবান সদর হাসপাতালের আবাসিক কর্মকর্তা ডা.মো. ইস্তিয়াকুর রহমান জানান,শিশুটির মুখে,কপালে এবং আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।তবে মায়ের ক্ষেত্রে আঘাতের চিহ্ন তেমন দেখা যায়নি।এদিকে আজিজনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে জানান জসীম উদ্দিন জানান,অহেতুক উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে আমার বিরুদ্ধে একটা মহল ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছে।মানহানীর অংশ হিসেবে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছন।যাহা প্রচার করা হচ্ছে, তাহা আদৌ সত্য নয়।আমার নির্বাচনী প্রতিপক্ষ এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ যোগ সাজশে এই নীল নকশা তৈরি করছেন।ধরা কে শরা জ্ঞান মনে করে এই অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছেন তারা।সব সাংবাদিক ভাইদের আরো সংযত আচরণ করার জন্য এবং বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করার জন্য অনুরোধ করছি। আমিও চাই প্রকৃত ঘটনা উৎঘাটন হোক এবং ষড়যন্ত্রকারীদের মুখোশ উম্মোচন হোক।লামা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল ইসলাম জানান,নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের ধারায় চেয়ারম্যানের পরিবারের চারজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।