আর্থিক ক্ষতি এড়াতে বিদেশ থেকে পণ্য আনার আগেই সরকারি দপ্তরকে শুল্ক পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে তিনি এ নির্দেশনা দেন বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
বৈঠক শেষে সচিবালয়ে ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “ইনকাম ট্যাক্সসহ বিভিন্ন বিষয়ে আমরা অনেকেই সচেতন থাকি না। আমরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মালামাল আনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন দপ্তর, বিশেষ করে সরকারি বিভিন্ন দপ্তর মালামাল আনার সময় ইনকাম ট্যাক্স বা সিটি ভ্যাট পে করে না৷ সেক্ষেত্রে মালামালগুলো শিপিংয়ে আনলোড করা যায় না।
“আবার অনেক সময় আনলোড করলেও পোর্টে পড়ে থাকে। বিশেষ করে শিপ থেকে যদি আনলোড না করা যায়, কারণ কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স না দিলে তো পোর্ট ডিক্লেয়ার করবে না, তখন প্রতিটা শিপকে ২০ থেকে ৩০ হাজার ডলার ডেমারেজ দিতে হয়।”
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা দেওয়ার কথা তুলে ধরে আনোয়ারুল বলেন, “সেজন্য কেবিনেট ডিভিশন, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন, এ বিষয় নিয়ে কেবিনেট সচিব সবাইকে নিয়ে বসে বিষয়টি ক্লিয়ার করেন; আর যাতে কোনোভাবে ইনকাম ট্যাক্স বা ভ্যাট যতটা দেওয়ার সেটা যেন আগেই…যে কোনো পণ্য অর্ডার দেওয়ার আগেই সম্পন্ন থাকে।”
তবে জরুরি প্রয়োজনে শুল্ক পরিশোধ করতে না পারলে, সেক্ষেত্রে সরকার পদক্ষেপ নিয়ে থাকে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আর কোনো ক্ষেত্রে জরুরি প্রয়োজন হলে, আমরা অনেক ক্ষেত্রে জরুরি জিনিস নিয়ে আসছি…যেমন- পদ্মার ক্ষেত্রে জরুরি জিনিস নিয়ে আসছি। হয়ত জুলাই মাসের ৫ তারিখে। তখন নতুন বছরের অ্যালোকেশন পাওয়া যায় না।
“আমরা কিন্তু আগেই চিঠিতে লিখে একটা আন্ডারটেকিং দিয়ে দিয়েছি যে, আমার ১০০ কোটি টাকার মালামাল আসবে এখানে ২০ কোটি টাকার সিটি ভ্যাট আছে, আমরা এই আন্ডারটেকিং দিচ্ছি যে সিটি ভ্যাট আমরা অ্যালোকেশন পাওয়ার সাথে সাথে দিয়ে দেব, মালামাল যাতে ছেড়ে দেওয়া হয়। তখন মালামাল কিন্তু ছেড়ে দিয়েছে। কখনই আটকা পড়েনি।”
বিষয়টি ভালোভাবে দেখতে বলা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “অবশ্যই যেন সব ক্ষেত্রে সিটি ভ্যাট দেওয়া হয়। আর ইনস্ট্যান্টলি জরুরি অনেক সময় কোনো প্রকিউরমেন্ট না থাকে, সেক্ষেত্রে কোনো ডেমারেজ যাতে দিতে না হয় এবং পোর্টে পড়ে না থাকে -এ বিষয়গুলো ক্লিয়ার করে রাখতে হবে।”
মন্ত্রী, সচিবসহ সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণের বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “যদি কেউ জিওবি বা নিজস্ব টাকাতে বিদেশ যায়, সেক্ষেত্রে পিএমও থেকে পারমিশন নিতে হবে। এছাড়া কিন্তু বিল পাস করবে না অ্যাকাউন্টস।“
তবে প্রয়োজনীয় বিদেশ সফরে অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে তিনি উদাহরণ হিসেবে বলেন, ”যেমন ধরেন আপনি বড় ধরনের একটি মেশিনারি কিনবেন, তখন সেটা চালানোর জন্য প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হয়। সেটা প্রকিউরমেন্টের সাথে খরচ ধরা থাকে। ওই ক্ষেত্রে অনুমতি দেওয়া আছে সেটা আলাদা বিষয়।”
এখন বিদেশ সফর ‘খুবই কম’ হচ্ছে দাবি করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “কেবিনেটের সব বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। জিওবির টাকায় কাউকে বিদেশ যাওয়ার বিষয়ে আমি সচিবদেরও বলে দিয়েছি। তবে কিছু কিছু জায়গায় যেমন- পররাষ্ট্র সচিব, ইআরডি সচিব, শিক্ষা সচিব, কৃষি সচিব তারা কিন্তু আন্তর্জাতিক অনেক বড় বড় সংস্থার সদস্য।
“সেসব ক্ষেত্রে আমাদের কোনো অপশন থাকে না। জিওবির টাকা বা ডলার খরচ করে বিদেশ ভ্রমণে খুবই শক্ত অবস্থানে সরকার। ইতোমধ্যে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সরকারের বা ফরেন কারেন্সি ব্যবহার করে কেউ যাচ্ছে না; যেটা যাচ্ছে প্রকিউরমেন্টের আন্ডারে বা ফরেনএইডের আন্ডারে।”