ডলার সংকট কাটাতে একের পর এক পদক্ষেপ নিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরই অংশ হিসেবে এবার সারাদেশের ব্যাংকগুলোর শাখায় শাখায় নগদ ডলারসহ বৈদেশিক মুদ্রা কেনাবেচার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর ফলে গ্রাহকরা ব্যাংকের যেকোনো শাখায় গিয়ে চাহিদা অনুযায়ী ডলার কেনাবেচা করতে পারবেন। নগদ ডলার কেনাবেচায় মানি চেঞ্জারের ওপর নির্ভরতা কমানো ও হুন্ডি প্রতিরোধে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, এটা প্রাথমিক সিদ্ধান্ত। আগামী রোববার বিস্তারিত জানানো যাবে।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, বর্তমান নিয়মে শুধুমাত্র বৈদেশিক লেনদেনে নিয়োজিত ব্যাংকের অথরাইজড ডিলার (এডি) শাখাগুলো থেকে নগদ ডলার কেনাবেচনার অনুমতি রয়েছে।
ডলার সংকট কাটাতে এ সেবার পরিধি বাড়াতে চাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাই কোন এলাকার কোন শাখায় এ ধরনের সেবা চালু করা যায় তার একটি তালিকা ব্যাংকগুলোর কাছে চাওয়া হবে। তালিকা পাওয়ার পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিবেচনা করে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। তবে আশা করছি খুব শিগগিরই সারাদেশে ব্যাংকের শাখায় এ সেবা চালু করা সম্ভব হবে।
জানা গেছে, ডলার বেচাকেনার জন্য শুধুমাত্র এডি শাখাগুলোর অনুমতি রয়েছে। কিন্তু সারাদেশে এ ধরনের শাখার সংখ্যা খুব একটা নেই। রাজধানী ঢাকাসহ জেলা ও বিভাগীয় শহরেই বেশির ভাগ শাখা। ফলে নগদ ডলার কেনাবেচার জন্য মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠানের ওপরই বেশি নির্ভর করতে হয় প্রবাসী বাংলাদেশি, বিদেশি পর্যটকসহ সাধারণ গ্রাহকদের।
এছাড়া ব্যাংক থেকে ডলার কিনতে এনডোর্সমেন্ট বাধ্যতামূলক হলেও খোলা বাজারে সেই বাধ্যবাধকতা নেই। ফলে মানি এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো নগদ ডলারের বাজারে একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে রেখেছে। ডলারের বাজারে চলমান অস্থিরতার পেছনেও মানি চেঞ্জাররা দায়ী বলে মনে করা হচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে মানি চেঞ্জারদের ওপর নগদ ডলার বেচাকেনার নির্ভরতা কমাতে ব্যাংকের এডি শাখার বাইরে অন্যান্য শাখায়ও নগদ ডলারসহ অন্যান্য বৈদেশিক মুদ্রা কেনাবেচার সেবা চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রাথমিকভাবে শাখাগুলোতে একটি ডেস্কের মাধ্যমেই এ সেবা চালুর অনুমোদন দেওয়া হবে।
তীব্র সংকটে দেশে মার্কিন ডলারের দাম বাড়ছে। অন্যদিকে কমছে টাকার মান। খোলাবাজার বা কার্ব মার্কেটে নগদ এক ডলার কিনতে গ্রাহককে গুণতে হচ্ছে ১১৮ থেকে ১২০ টাকা। দেশে ডলার আসার চেয়ে বেড়িয়ে যাচ্ছে বেশি; তাই দাম বাড়ছে বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বর্তমানে আন্তঃব্যাংকের সঙ্গে খোলাবাজারে ডলারের দামের পার্থক্য প্রায় ২৫ টাকা। আর ব্যাংকের চেয়ে খোলাবাজার রেট অনেক বেশি হওয়ায় হুন্ডিতে টাকা পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের এক পর্যবেক্ষণেও ডিজিটাল হুণ্ডি চাঙ্গা হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরা হয়। এছাড়া, বিমানবন্দর দিয়েও সরাসরি ডলার পাচার করা হচ্ছে বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাই খোলাবাজারের ডলারের লেনদেন ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে আনতে এমন শাখায় বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বর্তমানে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার কিনতে খরচ করতে হচ্ছে ৯৫ টাকা। অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারি আমদানি বিল মেটাতে এই দরে ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করছে। নিয়ম অনুযায়ী এটাই ডলারের আনুষ্ঠানিক দর।
চলতি বছরের মে মাসের শুরুর দিকে ডলারের দাম ছিল ৮৬ টাকা ৪৫ পয়সা। এ হিসাবে দেড় মাসের ব্যবধানে টাকার মান কমেছে ৮ টাকা ৫৫ পয়সা।
তবে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতেও ১০৫ থেকে ১১০ টাকায় নগদ ডলার বিক্রি হচ্ছে। আর খোলাবাজারে ডলারের দাম উঠেছে ১২০ টাকা পর্যন্ত।