স্বাধীনতার ৫০বছরে বান্দরবানের কোন উপজেলা,পৌরসভা বা ইউনিয়ন পর্যায়ের নিবার্চনে কোন নারী চেয়ারম্যান প্রার্থী অংশ নেয়নি,তবে এইবারে প্রথম বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলার আলেক্ষ্যং ইউনিয়নের নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে স্মাতক পড়ুয়া মাশৈখিং মারমা নামে এক নারী।
মাশৈখিং মারমা বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলার আলেক্ষ্যং ইউনিয়নের ৮নম্বর ওয়ার্ড এর আমতলী পাড়ার বাসিন্দা এবং সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পুহ্লা অং মারমার মেয়ে। স্নাতক শ্রেণিতে অধ্যয়নের পাশাপাশি বর্তমানে রোয়াংছড়ির একটি বেসরকারি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছে মাশৈখিং মারমা,আর নারীদের অধিকার বাস্তবায়নে চেয়ারম্যান পদে লড়াই করে এখন দিনরাত ছুটছে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে।
প্রথম নারী চেয়ারম্যান প্রার্থী মাশৈখিং মারমা বলেন, আমি একজন নারী চেয়ারম্যান প্রার্থী হওয়াতে আমার এলাকার প্রতিটা মানুষের কাছে আমি প্রচুর পরিমাণের উৎসাহ উদ্দীপনা পাচ্ছি, আলেক্ষ্যং এর জনগণ আমার পাশে যেভাবে এগিয়ে এসেছে তাতেই আমি খুশি এবং আনন্দিত। জনগণ যদি আমাকে তাদের মূল্যবান ভোট দিয়ে তাদের পাশে থাকার সুযোগ সুষ্টি করে দেয় তাহলে আমি একজন নারী চেয়ারম্যান হিসেবে এলাকার পিছিয়ে পড়া নারীদের উন্নয়ন এবং নারী ক্ষমতায়নের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ হাতে নিয়ে কাজ করবো।
তিনি আরো বলেন,বিশেষ করে নারীদের শিক্ষা,স্বাস্থ্য,যোগাযোগসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা নিয়ে আমি এগিয়ে যাবো । একজন চেয়ারম্যান হিসেবে নই,আমি জনগণের পাশে তাদের মা,বোন,মেয়ে হয়ে থেকে তাদের সেবা করার সুযোগ চাইছি একবার।
দীর্ঘদিন পরে দুর্গম পার্বত্য এলাকায় নারীদের অধিকার রক্ষা ও নারীদের কল্যাণে কাজ করার ব্রত নিয়ে প্রথম কোন নারী চেয়ারম্যান প্রার্থীর লড়াইকে সাধুবাদ জানিয়েছে স্থানীয়রা।
রোয়াংছড়ির আলেক্ষ্যং ইউপির বাসিন্দা ক্য অং সিং মারমা বলেন, বান্দরবানে আগে অনেকদিন ধরে আমাদের মা-বোনরা তাদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে পুরুষ চেয়ারম্যানের কাছে গিয়ে সমস্যা তুলে ধরতে চাইলে ও পারতো না । মাশৈখিং চেয়ারম্যান প্রার্থী হওয়াতে বিশেষ করে আমরা আলেক্ষ্যংবাসি খুব খুশি। আমি আশা কারি মাশৈখিং এর মাধ্যমে এলাকার পিছিয়ে পড়া নারীরা এগিয়ে আসবে।
রোয়াংছড়ির কচ্ছপতলীর বাসিন্দা থুইনুপ্রু মারমা বলেন,মাশৈখিং নারী চেয়ারম্যান প্রার্থী হওয়াতে আমরা খূব খুশি। আমরা নারীরা এখন আমাদের সমস্যা সমাধানের জন্য তার কাছে খুব সহজেই যেত পারবো, তাই আমরা চাই মাশৈখিং মারমার মত নারীরা সমাজের প্রতিনিধিত্বমুলক দায়িত্বে এগিয়ে আসুক।
আমতলী পাড়ার বাসিন্দা মাইচিং মারমা বলেন,অনেকদিন ধরে আমরা একজন নারী চেয়ারম্যান চাচ্ছি আমাদের মনের ভাব প্রকাশ করার জন্য, কিন্তু দীর্ঘদিন পর মাশৈখিং প্রার্থী হয়েছে এতে করে মাশৈখিং নির্বাচিত হলে এলাকার অনেক নারী পুরুষ সমানভাবে এগিয়ে যাবে এবং বিশেষ করে কিশোর কিশোরী ও নারীদের ক্ষমতায়ন বাড়বে।
কচ্ছপতলীর বাসিন্দা আনন্দপ্রীতি তঞ্চঙ্গ্যা বলেন,মাশৈখিং একজন সু-শিক্ষিত নারী। আমরা আশা করি সেই খূব দ্রুত সময়ের মধ্যে এলাকার সমস্যা সমাধানে সচেষ্ট হবেন।
পরিবারের সদস্যরাও মাশৈখিং মারমার চেয়ারম্যান হওয়ায় চ্যালেঞ্জে একসাথে কাজ করে যাচ্ছে।
মাশৈখিং মারমার ছোট বোন মা এচিং মারমা বলেন, আমি ছোটবেলা থেকে আমার বোনকে দেখে অনেক কিছু শিখেছি। আমার বোনের মাঝে নেতৃত্ব দানের বিভিন্ন দিক আমি ছোট বেলা থেকে দেখে আসছি। আমার বোন নির্বাচিত হলে এলাকার নারী পুরুষের সমধিকার বাস্তবায়িত হবে। যদিও বা নারী হিসেবে প্রথম চেয়ারম্যান প্রার্থী আমার বড় বোন সেই ক্ষেত্রে তার অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হচ্ছে এবং হবে।
মাশৈখিং মারমার পিতা পুহ্লা অং মারমা বলেন, আমার মেয়ে মাশৈখিং মারমা রোয়াংছড়ি আলেক্ষ্যং ইউনিয়ন পরিষদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে আনারস প্রতীকে নিবার্চন করতে যাচ্ছে। যেহেতু বান্দরবান জেলায় কখনো নারী প্রার্থী চেয়্যারম্যান পদে মনোনয়ন পায়নি সেখানে আমার মেয়ে আগ্রহ করে নির্বাচন করছে তাই আমি চাই একজন নারী হিসেবে তার এই অগ্রযাত্রা এগিয়ে যাক।
বান্দরবান জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, নারীদের নির্বাচনে অংশগ্রহনের ফলে নারীদের ক্ষতায়ন নিশ্চিত হবে আর নির্বাচনে সকলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য এবং একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার জন্য প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন , ৪র্থ ধাপে আগামী ২৬ ডিসেম্বর বান্দরবানের থানচি আর রোয়াছড়ি উপজেলার ৮ইউনিয়নে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের ভোটগ্রহণ আর এতে চেয়ারম্যান পদে ২২জন,সংরক্ষিত পদে ৫৬জন আর সাধারণ পদে লড়াই করছে ১৮৬জন প্রার্থী।