গ্যাসসম্পদে উজ্জ্বল সম্ভাবনায় বাংলাদেশ


অনলাইন ডেস্ক প্রকাশের সময় :৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১১:৪৫ : অপরাহ্ণ 236 Views

মজুদ গ্যাসের বিবেচনায় বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ৪৩তম। বিশ্বের মোট মজুদের দশমিক ১২ শতাংশ রয়েছে বাংলাদেশে। সর্বোচ্চ গ্যাস রিজার্ভ রয়েছে রাশিয়ার হাতে, দ্বিতীয় ইরান, তৃতীয় স্থানে রয়েছে কাতার। আবিষ্কৃত মজুদের ৬৪.১ শতাংশই রয়েছে এই তিনটি দেশের হাতে।

ব্রিটিশ পেট্রোলিয়ামের তৈরি স্ট্যাটিস্টিক্যাল রিভিউ অব ওয়ার্ল্ড এনার্জি এবং ইউএস এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (ইআইএ) উপাত্তের ভিত্তিতে ওয়ার্ল্ডোমিটারস ডটইনফো বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গ্যাসসম্পদের এমনই তথ্য দিচ্ছে।
ওয়ার্ল্ডোমিটারসের তথ্য মতে, রাশিয়ার মাটির নিচেই রয়েছে বিশ্বের ২৪.৩ শতাংশ গ্যাসের মজুদ। দেশটিতে মোট মজুদের পরিমাণ রয়েছে এক হাজার ৬৬৮ ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএফ)। ইরানে ১৭.৩ শতাংশ সমান এক হাজার ২০১ টিসিএফ গ্যাস মজুদ রয়েছে। বিশ্বের অন্যতম ধনী রাষ্ট্র কাতারের হাতে রয়েছে ৮৭১ টিসিএফ গ্যাস। এই তালিকায় সমর শক্তিধর আমেরিকার অবস্থান চতুর্থ। বিশ্ব মজুদের ৫.৩ শতাংশ মজুদ রয়েছে দেশটির হাতে। দেশটিতে গ্যাস মজুদ রয়েছে ৩৬৮ টিসিএফ। এর পরই রয়েছে ইসলামের তীর্থস্থান রয়েল সৌদির অবস্থান। ২৯৪ টিসিএস। প্রমাণিত মজুদের পরিমাণ তুর্কমেনিস্তান ২৬৫, সংযুক্ত আরব আমিরাত ২১৫ ও ভেনিজুয়েলা ১৯৭ টিসিএফ। বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ চীন রয়েছে দশম স্থানে, ১৬৩ টিসিএফ মজুদ নিয়ে। আর ২২তম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত। তাদের মোট মজুদ ৫০ টিসিএফ। ৩০তম স্থানে থাকা পাকিস্তানের রিজার্ভ রয়েছে ২৪ টিসিএফের মতো।

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের তথ্য মতে, বাংলাদেশ ভূখণ্ডে ১৯১০ সালে প্রথম তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে কূপ খনন করা হয়। প্রথম কূপটি খনন করা হয় সীতাকুণ্ডে। ১৯৫৯ সালে জুলাই মাসে প্রথম গ্যাস উত্তোলন শুরু হয়। শুরু থেকে আশির দশক পর্যন্ত মূল লক্ষ্য ছিল তেল অনুসন্ধান। যে কারণে কুতুবদিয়াসহ (সাগরে) অনেক এলাকায় গ্যাসের উপস্থিতি পাওয়া গেলেও তা এড়িয়ে যায় তৎকালীন আইওসিগুলো। পরে ধীরে ধীরে গ্যাসে আগ্রহ বাড়তে থাকে। বাংলাদেশ ভূখণ্ডে ৯৫টি অনুসন্ধান কূপের মাধ্যমে ২৮টি গ্যাসফিল্ড আবিষ্কৃত হয়েছে। এতে মোট মজুদ (প্রমাণিত ও সম্ভাব্য) আবিষ্কৃার হয় ২৮.২৯ টিসিএফ। ২০টি গ্যাসফিন্ড থেকে ১০৬টি কূপ দিয়ে গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে। ডিসেম্বর ২০২০ পর্যন্ত ১৮.২৪ টিসিএফ গ্যাস উত্তোলন করা হয়। অবশিষ্ট মজুদের পরিমাণ রয়েছে প্রায় ১০ টিসিএফ। বর্তমানে দৈনিক কমবেশি দুই হাজার ৬০০ এমএমসিএফ গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে। সে অনুযায়ী নতুন আবিষ্কার না হলে ২০৩০ সাল নাগাদ মজুদ ফুরিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।

বাংলাদেশে গ্যাসফিল্ডের সংখ্যা ২৮টি বলা হলেও এই পরিমাণ অনেক বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলছেন, পাবনার মোবারকপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় কূপ খনন করতে গিয়ে গ্যাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে, কিন্তু কৌশলগত কারণে আরো কাজ করার আগে গ্যাসফিল্ড বলে ঘোষণা করা যাচ্ছে না। একইভাবে পার্বত্য এলাকায় গ্যাসের উপস্থিতি পাওয়া গেলেও পরে আর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ভোলা এলাকায় এখন পর্যন্ত যেখানেই কূপ খনন করা হয়েছে, সেখানেই গ্যাস পাওয়া গেছে। এমনকি ৪০ কিলোমিটার উত্তরে বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ সীমান্তে খনন করা কূপেও গ্যাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, গ্যাসের এই স্ট্রাকচারটি উজানে মেঘনা নদী, দক্ষিণে গভীর সমুদ্র পর্যন্ত বিস্তৃত। এ হিসাবে ভোলায় (ভোলা নর্থ) ও পাবনায় (মোবারকপুর) কূপ খনন করার পর গ্যাসের উপস্থিতি পাওয়ার পর এই ধারাটির মাঝখানে শরীয়তপুরে নতুন কূপ খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে উত্তরাঞ্চলে ছয়টি অনুসন্ধান কূপের চারটি গ্যাসের উপস্থিতি চিহ্নিত করা হয়েছে। জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ মনে করেন, সিলেট থেকে শুরু করে মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, নোয়াখালী এভাবে যত দক্ষিণে যাওয়া হয়েছে গ্যাস পাওয়া গেছে। গ্যাসের এই ধারাটি সাগর পর্যন্ত বিস্তৃত থাকতে পারে উল্লেখ করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যথেষ্ট অনুসন্ধান করা গেলে গ্যাসের রিজার্ভ বাড়তে বাধ্য।
ইউনাইটেড স্টেটস জিওলজিক্যাল সার্ভে (ইউএসজিএস) ও পেট্রোবাংলার প্রতিবেদনে দেশে সর্বনিম্ন ৮.৪, গড় ৩২.১ ও সর্বোচ্চ ৬৫.৭ টিসিএফ (ট্রিলিয়ন ঘনফুট) গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা ব্যক্ত করা হয়েছে। তবে শুধু অনুসন্ধানে স্থবিরতার কারণে বাংলাদেশ মজুদে অনেকটা পিছিয়ে রয়েছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা রিজার্ভ বাড়ানোর জন্য কাজ করে যাচ্ছি। অতীতের সরকারগুলোর মধ্যে দেশপ্রেমের ঘাটতি ছিল, যে কারণে তাদের এই সম্পদ নিয়ে কোনো কাজ করেনি। অনুসন্ধান কূপ খননের পূর্বে যে ২ডি, ৩ডি সিসমিক সার্ভে করতে হয় সে কাজও করেনি। আমরা পার্বত্য এলাকায় কাজ শুরু করতে যাচ্ছি, সেখানে গ্যাস পাওয়ার অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। সাগরে মাল্টিক্লেইন সার্ভে করা হচ্ছে, সম্ভাবনার তথ্য থাকলে অনেক বিদেশি কম্পানি আগ্রহী হবে। কিছুদিনের মধ্যে সুফল দেখতে পাবেন।’

ট্যাগ :

আরো সংবাদ

ফেইসবুকে আমরা



আর্কাইভ
November 2024
M T W T F S S
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031  
আলোচিত খবর

error: কি ব্যাপার মামা !!