পার্বত্য তিন জেলার ঘরে ঘরে সৌরবিদ্যুৎ সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। তারই অংশ হিসেবে একটি প্রকল্পের অধীনে ৪২ হাজার ৫০০ সোলার হোম সিস্টেম স্থাপনের অনুমোদন দিয়েছে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। পাশাপাশি সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি এসব সোলার হোম সিস্টেম কেনার প্রস্তাবও অনুমোদন করেছে।
গত বুধবার অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি এবং সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল অনলাইন ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের সব জায়গায় বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। সরকারের সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে এ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে পার্বত্য তিন জেলার দুর্গম ও প্রত্যন্ত এলাকার সবাই বিদ্যুতের আওতায় আসবে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সামসুল আরেফিন জানান, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। তিন পার্বত্য জেলার জন্য ১০০ ওয়াট পিক ক্ষমতা সম্পন্ন ৪০ হাজার সোলার হোম সিস্টেম কেনা হবে। আর ৩২০ ওয়াট পিক ক্ষমতাসম্পন্ন ২ হাজার ৫০০ সোলার কমিউনিটি সিস্টেম কেনা হবে। এসব সোলার সিস্টেম সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি লিমিটেড থেকে কেনা হবে। এ জন্য ব্যয় হবে ২০৪ কোটি ৩৩ লাখ টাকা।
গতকালের ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অধীন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) ২০২২ শিক্ষাবর্ষের মাধ্যমিক (বাংলা ও ইংরেজি ভার্সন), এসএসসি ভোকেশনাল, ইবতেদায়ি (তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণি), দাখিল (অষ্টম ও নবম শ্রেণি) এবং দাখিল ভোকেশনাল স্তরের এক কোটি ৬৮ লাখ ৩০ হাজার ৯৭১ কপি বই মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহের প্রস্তাবও অনুমোদন করা হয়। ছয়টি প্রতিষ্ঠান
এসব বই সরবরাহ করবে। এতে ব্যয় হবে ৫৯ কোটি ৩৬ লাখ ৮১ হাজার টাকা।
অর্থমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বই দিয়ে আসছে। এবারের উদ্যোগটি তারই অংশ। প্রতি বছরের মতো এ বছরও সময়মতো ছাত্রছাত্রীদের হাতে নতুন বই পৌঁছে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) ৬০ হাজার টন বাল্ক্ক ইউরিয়া সার কেনার প্রস্তাব অনুমোদন করেছে কমিটি। এর মধ্যে ৩০ হাজার টন কাতারের মুনতাজাত থেকে আর বাকি ৩০ হাজার টন সৌদি বেসিক ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন থেকে কেনা হবে। এতে খরচ হবে ২৩৫ কোটি টাকা।
বাতিল হয়েছে যেসব প্রস্তাব :গতকালের ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি দরপত্রে ত্রুটিবিচ্যুতির কারণে কয়েকটি প্রস্তাব অনুমোদন না করে বাতিল করেছে। এর মধ্যে রয়েছে- রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের গ্রিন সিটি আবাসিক কমপেল্গক্সে পর্দা সরবরাহ এবং স্থাপনের প্রস্তাব। একটি ২০ তলা ভবন এবং একটি ১৬ তলা ভবনে ১২৫০ বর্গফুটের ১৯৬টি ইউনিটে পর্দা লাগানোর এ প্রস্তাব তুলেছিল গণপূর্ত অধিদপ্তর। এ কাজে ৪ কোটি ৬৭ লাখ টাকা ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছিল। কাজটি করার জন্য পুনরায় দরপত্র আহ্বানের পরামর্শ দিয়েছে কমিটি। এর আগে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের একটি ভবনের বালিশ কেনার ক্ষেত্রে অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। এ ছাড়া বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জনশুমারি প্রকল্পের তথ্য সংগ্রহের জন্য ৩ লাখ ৯৫ হাজার ট্যাবলেট কেনার প্রস্তাবও বাতিল করেছে কমিটি। আগামী ২৫ থেকে ৩১ অক্টোবর সময়ে মাঠপর্যায়ে এই শুমারি হওয়ার কথা। এসব ট্যাবলেট ফেয়ার ইলেকট্রনিক্স থেকে ৫৪৮ কোটি ৭৩ লাখ টাকায় কেনার প্রস্তাব করেছিল পরিসংখ্যান ব্যুরো। এ বিষয়ে সামসুল আরেফিন বলেন, প্রস্তাবটি বাতিল করে ট্যাব কেনার জন্য পুনরায় দরপত্র আহ্বানের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি ‘মাতারবাড়ী-বাঁশখালী-মদুনাঘাট ৪০০ কেভি ট্রান্সমিশন লাইন’ স্থাপন প্রকল্পটি পিপিপি পদ্ধতিতে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত বাতিল করেছে। অতিরিক্ত সচিব সামসুল আরেফিন জানান, প্রথমত প্রকল্পটি সময়মতো বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এ ছাড়া ওই এলাকায় আরও একটি সমধর্মী প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ায় এটি বাতিল করা হয়েছে। এর আগে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর ডানতীরে লালদিয়া চর এলাকায় ৬০ একর জমির ওপর বাল্ক্ক টার্মিনাল নির্মাণের একটি প্রকল্প পিপিপি তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়।