রাজধানীর তিনটি হাসপাতালে আজ সোমবার কোভ্যাক্স থেকে পাওয়া ফাইজার বায়োএনটেকের টিকা দেয়া শুরু হবে। চীনে অধ্যয়নরত বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা এই চলমান টিকা কার্যক্রমে অগ্রাধিকার পাবেন। প্রাথমিকভাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতাল এবং কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ১২০ জন করে মোট ৩৬০ জনকে টিকা দেয়া হবে। দ্বিতীয় দিনের মতো রাজধানীসহ সারাদেশে সিনোফার্মের টিকাদান কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে।
রবিবার করোনা বিষয়ক নিয়মিত স্বাস্থ্য বুলেটিনে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (এমএনসিএইচ) ডাঃ মোঃ শামসুল হক এ তথ্য জানান।
ডাঃ শামসুল ইসলাম বলেন, গত ৭ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোভিশিল্ড টিকাদান কর্মসূচীর
উদ্বোধন করেন। পরবর্তীতে এ টিকাদান কর্মসূচীর প্রথম এবং দ্বিতীয় ডোজের কার্যক্রম চলে। গত ২৫ মে থেকে চীনের সিনোফার্মের টিকাদান কর্মসূচী চলছে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে কোভ্যাক্স থেকে ফাইজার বায়োএনটেকের এক লাখ ৬২০ ডোজ টিকা গত ৩০ মে দেশে এসেছে।
আজ সোমবার থেকে এই টিকা প্রদান কার্যক্রম শুরু হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, এটি একটি টেম্পারেচার সেনসিটিভ টিকা। এটাকে আল্ট্রা কোর চেইন মেইনটেইন করে সংরক্ষণ করতে হয়। এ টিকা দেয়ার জন্য গাইডলাইন প্রণয়ন ও প্রশিক্ষণ সমাপ্ত হয়েছে। প্রথম টেস্ট রান হিসেবে এই টিকা দেয়া শুরু হচ্ছে।
এই কর্মকর্তা বলেন, ঢাকার এই তিনটি হাসপাতলে আগে টিকা নেয়ার জন্য যারা নিবন্ধন করেছিলেন তারাই শুধু টিকা পাবেন। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত তাদের টিকা দেয়া হবে। চীনে লেখাপড়া করছেন এমন ৫ হাজার শিক্ষার্থী এতে অগ্রাধিকার পাবেন। যারা টিকা গ্রহণ করবেন তাদের সাত থেকে দশদিন পর্যবেক্ষণে রেখে পরবর্তীতে আরও কয়েকটি হাসপাতালে এই টিকা প্রদান কার্যক্রম শুরু করা হবে। তবে সংরক্ষণজনিত জটিলতার কারণে রাজধানীর বাইরে এই টিকা প্রদান করা হবে না।
অক্সফোর্ডের টিকার দ্বিতীয় ডোজ সম্পর্কে স্বাস্থ্য অধিদফতরের এই কর্মকর্তা বলেন, যারা এখনও অক্সফোর্ড-এ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকায় দ্বিতীয় ডোজ নিতে পারেননি বা অপেক্ষমাণ আছেন, তাদের আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। আশাকরি শীঘ্রই আপনারা এই টিকা পেয়ে যাবেন। তবে এখনও অনেক কেন্দ্রে দ্বিতীয় ডোজের টিকা কার্যক্রম চলছে, তারা সেসব কেন্দ্রে যোগাযোগ করে টিকা নিয়ে নিতে পারবেন।
গত ২৭ মে দেশে জরুরী ব্যবহারের জন্য ফাইজারের টিকা অনুমোদন পায়। এর আগে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে তৈরি অক্সফোর্ড-এ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ড, রাশিয়ার তৈরি স্পুতনিক-ভি এবং চীনের সিনোফার্মের তৈরি টিকার অনুমোদন দেয় সরকার।
সিনোফার্মের টিকাদান কর্মসূচী অব্যাহত ॥ শনিবারের মতো রবিবারও রাজধানীর চারটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ সারাদেশের ৬৭টি কেন্দ্রে টিকাদান কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে।
চীনের উপহারের সিনোফার্মের টিকা দিয়ে দেশে দ্বিতীয় ধাপে গণটিকাদান কর্মসূচী শুরু হয় শনিবার। মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীরা, বিদেশগামী কর্মী, সরকারী-বেসরকারী মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজের শিক্ষার্থীরা, সরকারী নার্সিং ও মিউওয়াইফারি, সরকারী ম্যাটস ও সরকারী আইএটিটির শিক্ষার্থীরা, সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের শিক্ষার্থীরা, বিডার আওতাধীন ও অন্যান্য জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়নমূলক সরকারী প্রকল্প, বিদ্যুত প্রকল্পে, মেট্রোরেল প্রকল্প, এক্সপ্রেস হাইওয়ে প্রকল্প, সম্পৃক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা, উত্তর-দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকার পরিচ্ছন্নতা কর্মী, সারাদেশে কোভিড-১৯ মৃতদেহ সৎকারে নিয়োজিত/ওয়ার্ড পৌরসভার কর্মী এবং বাংলাদেশে বসবাসরত চীনা নাগরিকরা এই টিকা পাওয়ার কথা রয়েছে।
রবিবার পর্যন্ত রাজধানীসহ সারাদেশেই মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থী ও স্বাস্থ্য খাত সংশ্লিষ্টরাই টিকা নিচ্ছেন বেশি।
শনিবার প্রথম দিনে রাজধানীর চারটি হাসপাতালে মোট ৭৬৪ জনকে টিকা দেয়া হয়েছে। সারাদেশে সবমিলে মোট ৪৩২০ জনকে এই টিকা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে পুরুষ ২ হাজার ৯১ জন ও নারী ২২২৯ জন।