বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় ৫০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে তিনি এ বিষয়ে কথা বলেন। দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলা শহরে একটি করে মোট ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের যে প্রকল্প সরকার হাতে নিয়েছে, মুজিববর্ষ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার প্রথম পর্যায়ে তার ৫০টি মসজিদের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী ধর্মের নামে জঙ্গিবাদ প্রতিহত করতে দেশের আলেম ওলামা, ধর্মপ্রাণ মুসলমান ও অভিভাবকদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমরা মুসলিম অধু্যষিত দেশ। এখানে ইসলামের মূল্যবোধ ও চর্চা যেন ভালোভাবে হয়। ইসলামের সংস্কৃতির বিকাশ যাতে ভালোমতো হয়। ইসলামের মর্মবাণী যেন মানুষের কাছে পৌঁছায়, সে বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে।
ধর্মীয় উগ্রবাদীদের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এরা সবচেয়ে সর্বনাশ করে গেছে পবিত্র ইসলাম ধর্মের, যে ধর্ম শান্তির ধর্ম। যে ধর্ম মানুষকে অধিকার দিয়ে গেছে। আমি তো মনে করি, সারা বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ধর্ম হলো ইসলাম ধর্ম। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের, কিছু লোক জঙ্গিবাদ তৈরি করে, মানুষ হত্যা করে, বোমা মেরে, খুন-খারাবি করে আমাদের এই পবিত্র ধর্মের নামে বদনাম সৃষ্টি করেছে। যেটা আমাদের ধর্মের পবিত্রতাকেই কেবল নষ্ট করছে না, এর ইমেজটাও নষ্ট হচ্ছে সারা বিশ্বে। মুষ্টিমেয় মানুষের জন্য একটা ধর্মকে এভাবে কখনো অপরাধী করা যায় না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ধর্মচর্চা করতে
হলে আলস্নাহর উপর বিশ্বাস রাখতে হবে, নিজের উপর বিশ্বাস রাখতে হবে, মানুষের কল্যাণ করতে হবে। মানুষের অকল্যাণ করে, একটা পরিবারকে ধ্বংস করে কেউ বেহেস্তে যেতে পারবে না।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সময় আশা প্রকাশ করে বলেন, সারা দেশে গড়ে তোলা মডেল মসজিদ ও ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রগুলো ইসলামের প্রচার ও প্রসারে ভূমিকা রাখার সঙ্গে সঙ্গে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ ও নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে জনসচেতনতা বাড়াতে ভূমিকা রাখবে।
তিনি বলেন, ইসলামের ভ্রাতৃত্ব ও মূল্যবোধের প্রচার এবং উগ্রবাদ ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ইসলামের ‘প্রকৃত মর্মবাণী’ প্রচার করার লক্ষ্যেই দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলা শহরে একটি করে মোট ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের এই প্রকল্প সরকার নিয়েছে।
ইসলামের প্রচার, প্রসারের জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ ?মুজিবুর রহমান কাজ করে গেছেন উলেস্নখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইসলামের প্রচারের জন্য জাতির পিতা ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। ইসলামের মূল প্রতিপাদ্য মানুষ যেন জানতে পারে, ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে মানুষের জ্ঞান বৃদ্ধি, ইসলাম প্রচার যেন হয় সেই চেষ্টাই আমরা করছি।’
প্রকল্প পরিচালক মো. নজিবুর রহমান বলেন, এ পর্যন্ত প্রকল্পের মোট কাজের ৩৬ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে। আগামী অর্থবছরের মধ্যে আরও ১০০ মডেল মসজিদ চালু করা যাবে। আগামী দুই বছরের মধ্যে ৫৬০টি মডেল মসজিদের সবগুলোর নির্মাণ কাজ শেষ হয়ে যাবে বলে তারা আশা করছেন।
২০১৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে উন্নত মসজিদ নির্মাণের প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। সে অনুযায়ী ৮ হাজার ৭২২ কোটি টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সংস্কৃতি কেন্দ্র স্থাপন (১ম সংশোধিত) প্রকল্প নেওয়া হয়। প্রকল্প অনুযায়ী ৪০ থেকে ৪৩ শতাংশ জায়গার উপর তিন ক্যাটাগরিতে এসব মসজিদগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে। জেলা পর্যায়ে চারতলা, উপজেলার জন্য তিনতলা এবং উপকূলীয় এলাকায় চারতলা মডেল মসজিদ ও ইসলামী সংস্কৃতি কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।
এ-ক্যাটাগরিতে ৬৪টি জেলা শহরে এবং সিটি করপোরেশন এলাকায় ৬৯টি চারতলা মডেল মসজিদ নির্মিত হচ্ছে। এসব মসজিদের প্রতিটি ফ্লোরের আয়তন ২ হাজার ৩৬০ দশমিক ০৯ বর্গমিটার।
বি-ক্যাটাগরিতে উপজেলা পর্যায়ে ৪৭৫টি মডেল মসজিদ হচ্ছে। এগুলোর প্রতি ফ্লোরের আয়তন ১ হাজার ৬৮০ দশমিক ১৪ বর্গমিটার।
সি-ক্যাটাগরিতে উপকূলীয় এলাকায় ১৬টি মসজিদ হচ্ছে। এগুলোর প্রতিটি ফ্লোরের আয়তন ২ হাজার ৫২ দশমিক ১২ বর্গমিটার। উপকূলীয় এলাকার মসজিদগুলোকে দুর্যোগের সময় আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য নিচতলা ফাঁকা থাকবে।
আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত দৃষ্টিনন্দন এসব মসজিদের প্রতিটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে জেলা শহর ও সিটি করপোরেশন এলাকায় ১৫ কোটি ৬১ লাখ ৮১ হাজার টাকা, উপজেলা পর্যায়ে ১৩ কোটি ৪১ লাখ ৮০ হাজার টাকা এবং উপকূলীয় এলাকায় ১৩ কোটি ৬০ লাখ ৮২ হাজার টাকা। সারা দেশে নির্মাণাধীন এসব মসজিদের ভৌত অবকাঠামো গণপূর্ত অধিদপ্তরের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হচ্ছে।
জেলা সদর ও সিটি করপোরেশন এলাকায় নির্মাণাধীন মসজিদগুলোতে একসঙ্গে ১২শ মানুষ নামাজ পড়তে পারবেন। উপজেলা ও উপকূলীয় এলাকার মডেল মসজিদগুলোতে একসঙ্গে ৯শ মানুষের নামাজের ব্যবস্থা থাকছে।
এসব মডেল মসজিদ ও ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে নারী ও পুরুষের আলাদা ওজু ও নামাজের জায়গা, লাইব্রেরি, গবেষণা কেন্দ্র, ইসলামী বই বিক্রয় কেন্দ্র, কোরআন হেফজ বিভাগ, শিশু শিক্ষা, অতিথিশালা, বিদেশি পর্যটকদের আবাসন, মৃতদেহ গোসলের ব্যবস্থা, হজযাত্রীদের নিবন্ধন ও প্রশিক্ষণ, ইমামদের প্রশিক্ষণ, অটিজম কেন্দ্র, গণশিক্ষা কেন্দ্র, ইসলামী সংস্কৃতি কেন্দ্র থাকবে। এছাড়া ইমাম-মুয়াজ্জিনের আবাসনসহ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য অফিসের ব্যবস্থা এবং গাড়ি রাখার জায়গা রাখা হয়েছে।