রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন ও রাজনীতির বাঁকবদল


অনলাইন ডেস্ক প্রকাশের সময় :২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ১১:৫৮ : অপরাহ্ণ 289 Views

আবদুল মান্নানঃ

একসময় প্রতিবছর ২১শে ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ দিবস বা রাষ্ট্রভাষা দিবস হিসেবে এই দেশের ছাত্র-জনতা পালন করত। দিনটি বেশ ভাবগাম্ভীর্যের মাধ্যমে পালিত হতো। তেমনটি আজ আর দেখা যায় না। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে যে রাষ্ট্রটির জন্ম হয়েছিল, সেই রাষ্ট্রটি ছিল বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে একটি ভাষাভিত্তিক রাষ্ট্র। বিশ্বে এমন ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত আর কোনো রাষ্ট্র পাওয়া যাবে না। ১৯৯৯ সালে দিনটিকে ইউনেসকো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। বিদেশে দিনটিকে শুধু মাতৃভাষা দিবস হিসেবে দেখা হবে, অন্য কিছু নয়। বাংলাদেশে দিনটি শুধু মাতৃভাষা দিবসে সীমাবদ্ধ রাখলে অন্যায় হবে। কারণ এই দিনটিকে দেখতে হবে বাংলাদেশের ইতিহাসের বাঁকবদলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে। বলা যেতে পারে, রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নযাত্রা, যা পরিপূর্ণতা লাভ করেছিল ১৯৭১ সালে। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যে কজন ব্যক্তি এই দীর্ঘ পথপরিক্রমায় দেশ ও জাতির সঙ্গে পথ চলেছিলেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

যাঁদের নেতৃত্বে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন হয়েছিল, তাঁদের প্রায় সবাই পাকিস্তান আন্দোলনের সঙ্গে পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন। তাঁদের ধারণা ছিল, বাঙালি মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্তদের জন্য একটি পৃথক স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলে তাদের দীর্ঘ শোষণ-বঞ্চনার ইতিহাস বুঝি শেষ হবে। শুরুতে এ কারণেই অবিভক্ত বাংলাকে একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠার চিন্তা করা হয়েছিল। অবিভক্ত স্বাধীন বাংলা কেন হয়নি সেটি অন্য প্রসঙ্গ। অবিভক্ত স্বাধীন বাংলা যখন হচ্ছে না, তখন বাংলাকে ভাগ করার বিষয়টিই চূড়ান্ত করলেন অপরিণামদর্শী রাজনীতিবিদরা। একটি প্রচলিত কথা হচ্ছে দেশভাগ বা ভারত ভাগ। আসলে ভারত তো ভাগ হয়নি, ভাগ হয়েছে বাংলা আর পাঞ্জাব, তা-ও সম্পূর্ণ অযৌক্তিকভাবে। বাংলা আর পাঞ্জাব ভাগ ছিল গত শতকের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক ট্র্যাজেডি। বাংলা ভাগ হয়ে পাকিস্তানের একটি অংশের সৃষ্টি হলো, যার নাম শুরুতে পূর্ব বাংলা, তারপর পূর্ব পাকিস্তান। কিন্তু যাঁরা মনে করেছিলেন পাকিস্তান সৃষ্টি হলে পূর্ব বাংলার শোষিতদের ভাগ্য বদলাবে, তাঁদের সেই ভুল ভাঙতে বেশিদিন সময় লাগেনি। এক বছরের কম সময়ে তাঁরা, বিশেষ করে এই দেশের শিক্ষিত যুবসমাজ ও পাকিস্তান সৃষ্টির জন্য যেসব বাঙালি বুদ্ধিজীবী ও রাজনৈতিক নেতা লড়াই-সংগ্রাম করেছিলেন, তাঁরা বুঝতে পেরেছিলেন পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় শাসকগোষ্ঠী ভাষাকে শোষণ ও শাসনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এই শাসকগোষ্ঠীর বেশির ভাগই ছিল আবার পাঞ্জাবের এবং উত্তর প্রদেশ থেকে আসা সামরিক-বেসামরিক আমলা।

একটি দেশের যদি রাষ্ট্রভাষা বলে কিছু থাকে, তাহলে তা হওয়া উচিত সেই দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভাষা। আমাদের পাশের দেশ ভারতের কোনো রাষ্ট্রভাষা নেই, আছে দুটি দাপ্তরিক ভাষা হিন্দি আর ইংরেজি (ভারতের সংবিধানের ৩৪৩ ধারা কর্তৃক তা নির্ধারিত)। এর বাইরে তাদের কমপক্ষে ২৩টি আঞ্চলিক ভাষা আছে এবং প্রতিটি রাজ্য তাদের দাপ্তরিক কর্ম চাইলে ওই রাজ্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভাষা দ্বারা পরিচালনা করতে পারে। ইউরোপের প্রায় কোনো দেশেই রাষ্ট্রভাষা নেই, আছে দাপ্তরিক ভাষা আর কোনো কোনো দেশে তার সংখ্যা একাধিক। সেই ভাষাকে পাকিস্তানে শোষণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছিল পাকিস্তান সৃষ্টির অনেক আগে থেকেই এবং তাদের ইন্ধন জুগিয়েছিলেন উত্তর ভারতের উর্দু জানা মুসলিম লীগের সমর্থক বা নেতারা। ১৯৩৭ সালে জিন্নাহ উর্দুকে দলের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে প্রবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু বঙ্গীয় মুসলিম লীগ নেতা শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের নেতৃত্বে বাঙালি প্রতিনিধিদের বিরোধিতার মুখে জিন্নাহর সেই উদ্যোগ সফল হয়নি। ১৯৪৭ সালের মে মাসে ভারতের হায়দরাবাদে অনুষ্ঠিত এক উর্দু সাহিত্য সম্মেলনে সভাপতির ভাষণে কেন্দ্রীয় মুসলিম লীগ নেতা চৌধুরী খালিকুজ্জামান ঘোষণা করেন, ‘উর্দু হবে পাকিস্তানের জাতীয় ভাষা।’ ১৯৪৭ সালের জুলাই মাসে আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. জিয়াউদ্দিন আহমদ উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব পুনর্ব্যক্ত করেন। একই সময় বাঙালি বহুভাষাবিদ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ‘আমাদের ভাষা সমস্যা’ শিরোনামে লেখা এক প্রবন্ধে ড. জিয়াউদ্দিনের বক্তব্য খণ্ডন করে বাংলা ভাষার পক্ষে যৌক্তিক ও জোরালো যুক্তি তুলে ধরেন। এই ভাষা বিতর্ক নিয়েই পাকিস্তানের জন্ম আর পরবর্তীকালে এই ভাষা বিতর্ক নিয়ে সৃষ্ট পূর্ব বাংলার রাজনীতিই পাকিস্তানকে ভেঙে স্বাধীন ভাষাভিত্তিক বাংলাদেশ সৃষ্টি করেছিল। বাঙালির ভাষা আন্দোলন বাংলা ও বাঙালির ইতিহাসের বাঁক পরিবর্তন করে দিয়েছে।

পাকিস্তানের অবাঙালি শাসকগোষ্ঠীর আসল উদ্দেশ্য প্রকাশ পেল দেশটির সৃষ্টির কয়েক মাস পর। ১৯৪৮ সালের মার্চ মাসের ১৯ তারিখ মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকা সফরে এলেন। তিনি তখন পাকিস্তানের বড়লাট বা গভর্নর জেনারেল ও গণপরিষদের প্রেসিডেন্ট (স্পিকার)। অনেকের কাছে তিনি কিংবদন্তিতুল্য নেতা। ২১ মার্চ জিন্নাহ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) তাঁকে দেওয়া এক সংবর্ধনা সভায় ইংরেজি ভাষায় দেওয়া বক্তৃতায় ঘোষণা করেন, ‘উর্দু, কেবল উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা।’ জিন্নাহ নিজে উর্দু জানতেন না। রেসকোর্স ময়দানেই প্রতিবাদ হলো জিন্নাহর এই ঘোষণার বিরুদ্ধে। সেদিন যাঁরা জিন্নাহর এই ঘোষণার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন, তাঁদের বেশির ভাগই ঢাকার তরুণসমাজ। অনেকে এসেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ২৪ মার্চ জিন্নাহর জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কার্জন হলে এক বিশেষ সমাবর্তনের আয়োজন করে। ভাষাসৈনিক গাজীউল হকের নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা আগে থেকে ঠিক করে রাখেন জিন্নাহ রাষ্ট্রভাষা সম্পর্কে রেসকোর্সের বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি করলে তাঁরা তার তীব্র প্রতিবাদ করবেন। ছাত্ররা ঠিক তা-ই করেছিলেন, যাঁদের মধ্যে তরুণ শেখ মুজিবও ছিলেন। এতে জিন্নাহ কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে বক্তৃতা সংক্ষিপ্ত করে সভাস্থল ত্যাগ করেন।

বলতে গেলে জিন্নাহর অপরিণামদর্শী বক্তব্যই পাকিস্তানের কফিনে প্রথম পেরেকটা ঠুকে দেয়। জিন্নাহর পথ ধরে পরবর্তীকালে তাঁর উত্তরসূরি ঢাকার নবাব পরিবারের খাজা নাজিমুদ্দীন আর উত্তর প্রদেশ থেকে উদ্বাস্তু হিসেবে আসা পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান ও পূর্ব বাংলার মুখ্যমন্ত্রী নুরুল আমিন একই বক্তব্য দেন; যার প্রতিবাদ করেছিল বাংলার মানুষ। তরুণ শেখ মুজিব জানতেন কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হলে চাই জনগণের সংগঠন। ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠা করলেন পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ। পরবর্তীকালে মুসলিম শব্দটি বাদ দেওয়া হয়। বাস্তবে ছাত্রলীগই ছিল নব্যসৃষ্ট পাকিস্তানের প্রথম বিরোধী দল। ১৯৫২ সাল পর্যন্ত বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য যত আন্দোলন-সংগ্রাম হয়েছে, সামনের কাতারে থেকে তার নেতৃত্ব দিয়েছে ছাত্রলীগ। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিল অন্যান্য প্রগতিশীল ছাত্র ও যুব সংগঠন। কিন্তু একগুঁয়ে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ও পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক সরকার উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রশ্নে অটল থাকে। ১৯৪৯ সালে তরুণ শেখ মুজিবের প্রচেষ্টায় গঠিত হয় পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ। ‘আওয়াম’ শব্দটির অর্থ জনগণ। মুসলিম লীগ ছিল উচ্চবিত্তদের সংগঠন। সেখানে জনগণের কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। সুতরাং মুসলিম লীগের বিপরীতে আওয়ামী লীগকে দাঁড় করানোর অর্থ হচ্ছে এবার একটি জনগণের সংগঠন তৈরি হলো, যারা জনগণের কথা বলবে। সৃষ্টির পর থেকে আওয়ামী লীগ তা-ই করে আসছে বা চেষ্টা করছে। পরে প্রতিষ্ঠার পর ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ থেকে মুসলিম শব্দটি বাদ দেওয়া হয়, যাতে সংগঠনটি একটি অসাম্প্রদায়িক সংগঠন হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। আওয়ামী লীগের প্রথম কমিটিতে শেখ মুজিবকে করা হয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তখন তিনি কারাগারে।

১৯৫২ সালের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের এক পর্যায়ে ২১শে ফেব্রুয়ারি ছাত্র মিছিলে পুলিশের গুলি, গুলিতে ছাত্র হত্যার পরই পাকিস্তানের রাজনীতির বাঁক আবার পরিবর্তন হয়। ১৯৫৪ সালে পূর্ব পাকিস্তানে প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন। এই নির্বাচন ছিল পূর্ব বাংলার বাঙালিদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একদিকে পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মুসলিম লীগ আর অন্যদিকে আওয়ামী লীগসহ বাঙালিদের ছোট ছোট দল। প্রশাসনিকভাবে সরকারি দলকে সহায়তা নিশ্চিত। প্রথম দিকে মুসলিম লীগকে মোকাবেলা করতে তেমন একটা সমন্বিত উদ্যোগ না থাকলেও ছাত্রদের প্রচেষ্টায় পূর্ব বাংলার সব রাজনৈতিক দল মিলে গঠিত হয় যুক্তফ্রন্ট। এর নেতৃত্বে ছিলেন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, শেরেবাংলা এ কে ফজুলল হক আর হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। অনদিকে পূর্ব বাংলার মুখ্যমন্ত্রী নুরুল আমিনের নেতৃত্বে মুসলিম লীগ। যুক্তফ্রন্টের নেতারা এই নির্বাচনে বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে সফর করে মানুষকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছিলেন বাঙালিদের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় শাসকগোষ্ঠী কত রকমের ষড়যন্ত্র করছে। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন তরুণ রাজনৈতিক কর্মী শেখ মুজিব। যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনী ইশতেহারের মূল ইস্যু ছিল ‘রাষ্ট্রভাষা’ আর ‘পূর্ব বাংলার পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন’। প্রাদেশিক পরিষদে সংরক্ষিতসহ মোট আসনসংখ্যা ছিল ৩০৯। সেই নির্বাচনে মুসলিম লীগ সর্বমোট মাত্র ৯টি আসনে জয়লাভ করে। ১৯৫৪ সালের পূর্ব বাংলার প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনই ছিল পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা রাজনৈতিক দল জিন্নাহর মুসলিম লীগের পরিসমাপ্তি। সেই যে পাকিস্তানের রাজনৈতিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাঁক পরিবর্তন, তা থেকে দেশটি আর উঠে দাঁড়াতে পারেনি। সেখান থেকেই শুরু বাঙালির একটির পর একটি রাজনৈতিক বিজয়গাথা লেখার ইতিহাস, যার নেতৃত্বে ছিলেন ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ ও শেখ মুজিব, যিনি পরবর্তীকালে বঙ্গবন্ধু ও জাতির পিতা। তাঁদের সঙ্গে কখনো কখনো যোগ দিয়েছেন এই দেশের প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল ও নেতারা। কোনো কারণে যোগ না দিলে আওয়ামী লীগ থেমে থাকেনি।

১৯৫২ সালের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের পথ ধরে এসেছে ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, যার নেতৃত্বে যথারীতি ছিল এই দেশের ছাত্রসমাজ। শিক্ষা আন্দোলনের ফলে পাকিস্তান সরকার শরিফ কমিশন শিক্ষানীতি বাতিল করতে বাধ্য হয়েছিল। এরপর ১৯৬৮ সালে সূচিত হয় আইয়ুববিরোধী আন্দোলন। তখন আওয়ামী লীগপ্রধান শেখ মুজিব আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা নিয়ে কারাগারে। সেই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয় দেশের ছাত্রসমাজ। সেই আন্দোলনের তোড়ে ভেসে গেল পাকিস্তানের লৌহমানবখ্যাত আইয়ুব খান। এটি ছিল জিন্নাহর পাকিস্তানের শেষ বাঁক পরিবর্তন। আইয়ুব খান ক্ষমতা ছাড়লেন আরেক সেনা শাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খানের কাছে। তারপর সত্তরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ধস নামানো বিজয়। এত কিছুর পরও পাকিস্তানের শাসকরা বাঙালিদের চিনতে ভুল করেছিলেন। পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা বঙ্গবন্ধুর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে গড়িমসি। তারপর আমাদের ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়। বাঙালির ইতিহাসের যে যাত্রাটা শুরু হয়েছিল ১৯৪৮ সালে, তার পরিসমাপ্তি ১৯৭১ সালে। ১৯৪৮, ১৯৫২, ১৯৫৪, ১৯৬২, ১৯৬৬, ১৯৬৮, ১৯৬৯, ১৯৭০, ১৯৭১ এই ৯টি পর্বে বাংলা ও বাঙালির ইতিহাসের বাঁক পরিবর্তন হয়েছে। প্রতিটি বাঁক পার হওয়ার পর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। আর এই দীর্ঘ যাত্রায় সব সময় জনগণের সঙ্গে থেকেছে এই দেশের ছাত্র-জনতা, যার নেতৃত্বে ছিল আওয়ামী লীগ। আজ বিভিন্ন কারণে বা অজুহাতে অনেকে আন্দোলনের কথা বলেন; কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে আওয়ামী লীগবিহীন এই দেশে ১৯৪৭-পরবর্তীকালে কোনো আন্দোলন সফল হয়েছে তার তো কোনো নজির নেই।

লেখক : বিশ্লেষক ও গবেষক

ট্যাগ :

আরো সংবাদ

ফেইসবুকে আমরা



আর্কাইভ
November 2024
M T W T F S S
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031  
আলোচিত খবর

error: কি ব্যাপার মামা !!