বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাড়ে ছয় হাজার ক্ষুদ্র ছবি দিয়ে বাংলাদেশের মানচিত্র তৈরি করেছেন বগুড়ায় তরুণ চিত্রশিল্পী তারিকুল ইসলাম। দুই মিলিমিটারের ক্ষুদ্র বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি দিয়ে তৈরি বাংলাদেশের মানচিত্রটি প্রদর্শনের জন্য একক চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়।
মুজিবশতবার্ষিকী উপলক্ষে বগুড়া শহরের সাতমাথায় শুক্রবার (১২ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে চিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক জিয়াউল হক। এসময় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান সুলতান মাহমুদ খান রনি, জেলা শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার শাহাদৎ হোসেন, বগুড়ার মাটিডালি উচ্চবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক লাল মিয়া।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মাটিডালি উচ্চবিদ্যালয়ের ম্যানিজিং কমিটির সভাপতি মাহবুব হামিদ তারা। শুক্রবার শুরু হওয়ার পর শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে চিত্র প্রদর্শনী শেষ হবে।
চিত্রকর্ম প্রদর্শনীতে তারিকুল ইসলাম করোনাভাইরাসের সময় হোম কোয়ারেন্টাইন চলাকালে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি আঁকেন ১০ হাজার ১০০টি। প্রতিটি প্রতিকৃতির আকার ২ মিলিমিটার। তুলির আঁচরে, রঙ কলমের কারুকাজে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ফুটিয়ে তোলেন তিনি। এসময় তিনি এক ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের ক্ষুদ্রাকার ৪১০ পাতার শিল্পকর্ম (বই) তৈরি করতে সক্ষম হন।
তার শিল্পকর্মে বঙ্গবন্ধুর শৈশব, কৈশোর, তারুণ্য ও রাজনৈতিক জীবনের ২৫০টি দুর্লভ চিত্রকর্ম স্থান পেয়েছে। এরমধ্যে পেনসিল স্কেচে আঁকা চিত্রকর্ম আছে ৩১টি, ২২৯টি আছে জলরঙে আঁকা ছবি। আছে পেনসিল স্কেচে আঁকা জাতীয় চার নেতা, সাতজন বীরশ্রেষ্ঠ, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ, বঙ্গবন্ধুর কারাবন্দি জীবন, মুক্তিযুদ্ধ ও বিজয় উল্লাস, বঙ্গবন্ধুর চোখে বাংলাদেশ এবং ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নির্মম হত্যাযজ্ঞের শোকচিত্র। চিত্রকর্মের সঙ্গে পেনসিলে লেখা আছে—‘১৯২০ থেকে ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্টের শোকগাঁথার কথা’।
শিল্পী তারিকুল এখন সরকারি আজিজুল হক কলেজে হিসাববিজ্ঞান নিয়ে পড়ছেন। বগুড়া শহরের কলোনি এলাকার ছাত্রাবাসের একটি কক্ষে তার বাস। ছাত্রাবাসের কক্ষ না বলে ‘বঙ্গবন্ধু আর্ট গ্যালারি’ বলা ভালো। ঘরের চারপাশে বঙ্গবন্ধুর নানা প্রতিকৃতি শোভা পাচ্ছে। কোনোটা জলরঙ, কোনোটা পেনসিল আবার কোনোটা কলমের স্কেচ।
তারিকুলের জন্ম বগুড়ার ধুনটের নিমগাছি ইউনিয়নের বেড়ের বাড়ি গ্রামের এক কৃষক পরিবারে। বাবা আব্দুল কাফি প্রামানিক বর্গা চাষি।
তারিকুল বলেন, ‘চিত্রকর্মে হাতেখড়ি বড় ভাই তাজমিলুর রহমানের কাছে। গাবতলীর বাগবাড়িতে ‘তাজ আর্ট’ নামের ভাইয়ের একটি দোকান আছে। শৈশবে পড়াশোনার ফাঁকে সেখানেই আঁকাআঁকি।’
তিনি জানান, তার চিত্রকর্ম নিয়ে দেশে-বিদেশে অনেক প্রদর্শনী হয়েছে। ঘর ভরে গেছে পুরস্কারে। ২০১৯ সালে রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে ১৭ দেশের অংশগ্রহণে চিত্র প্রদর্শনী হয়। সেখানে তার আঁকা বেশ কিছু ছবি স্থান পায়। এছাড়া ধানমন্ডি আর্ট গ্যালারিতেও তার চিত্রকর্ম প্রদর্শিত হয়। গত বছর ময়মনসিংহে বঙ্গবন্ধু আর্ট ক্যাম্পে অংশ নেন। এছাড়া নেপালের কাঠমান্ডু, মিয়ানমার ও ভারতে চিত্র প্রদর্শনীতে অংশ নিয়ে পুরস্কার পান।
তারিকুল বগুড়া আর্ট কলেজে বিএফএ (ড্রয়িং অ্যান্ড পেইন্টিং) নিয়ে পড়ছেন। লেখাপড়ার পাশাপাশি তিনি বগুড়া শহরের মাটিডালি উচ্চবিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন চারু ও কারুকলা শিক্ষকতা করছেন।
তারিকুল বলেন, বঙ্গবন্ধুকে দেখার সৌভাগ্য হয়নি। কিন্তু দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে তার অবদান ও আত্মত্যাগের কথা শুনে তাকে ভালোবেসে ফেলেছি। তিনি আশা করছেন এই কাজটি বিশ্বরেকর্ড হবে।
শিল্পী তারিকুল ইসলামের এই শিল্পকর্ম দেখে মাটিডালি উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও জাতীয় দলের ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিমের বাবা মাহবুব হামিদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর বর্ণাঢ্য জীবনের নানা সময়ের ঘটনাচিত্র ছোট ছোট কাগজে তুলির আঁচড় দিয়ে দুর্দান্তভাবে ফুটিয়ে তুলেছে ছেলেটি। এই শিল্পকর্ম নিঃসন্দেহে অনন্য ও বিরল। তার এই শিল্পকর্ম নতুন প্রজন্মের ছেলে-মেয়েদের আগ্রহ তৈরি করেছে।’