ঢাকায় মেট্রোরেল লাইন-৬ এর কাজ চলছে অবিরাম। উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশে চলছে স্টেশন তৈরির কাজ। বসানো হচ্ছে রেলট্র্যাক আর জাপানে তৈরি হয়ে রয়েছে রেলকোচ। ঢাকায় আসতে শিপমেন্টের প্রহর গুনছে রেলকোচ।
আশা করা হচ্ছে, আগামী এপ্রিলেই দেশে আসবে এসব রেলকোচ। সে মাসেই টেস্ট রান শুরু করতে চায় সরকার। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই মেট্রোরেল লাইন-৬ এর কাজ এগিয়ে নিচ্ছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)।
রাজধানীর উত্তরা দিয়াবাড়ী থেকে মতিঝিল পর্যন্ত লাইন-৬ এ চলাচলের জন্য কিছুসংখ্যক রেলকোচ তৈরি হয়ে গেছে জাপানে। সেগুলো এখন শিপমেন্টের অপেক্ষায় রয়েছে। করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেই শিপমেন্ট হয়ে যাবে। দিয়াবাড়ী থেকে মিরপুর অংশে বসানো হচ্ছে রেলট্র্যাক।
যার ওপর দিয়েই চলবে ট্রেন। এই অংশে টানা হচ্ছে বৈদ্যুতিক লাইন। এগিয়ে চলছে স্টেশন নির্মাণের কাজও। লাইন-৬ এর ২১ দশমিক ৫ কিলোমিটার পথে মোট স্টেশন থাকবে ১৬টি। এর মধ্যে দিয়াবাড়ী, মিরপুর ও মতিঝিলে হবে আইকনিক স্টেশন। বাকিগুলো সাধারণ স্টেশন। সবকিছু ঠিক থাকলে নির্দিষ্ট সময় ২০২২-এর ডিসেম্বরের আগেই মেট্রোরেলে চেপে অত্যন্ত স্বাচ্ছন্দ্যে উত্তরা থেকে মতিঝিল যাতায়াত করতে পারবে রাজধানীবাসী। যদিও কাগজে কলমে এ প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। সরেজমিন প্রকল্প এলাকা ঘুরে ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। মেট্রোরেল চলবে বৈদ্যুতিক শক্তিতে।
বৈদ্যুতিক লাইন স্থাপনের কাজও দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। মেট্রোরেলের জন্য টঙ্গীতে নির্মিত সাব-স্টেশন থেকে উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন বৈদ্যুতিক লাইন টেনে আনা হচ্ছে দিয়াবাড়ীতে স্থাপিত মেট্রোরেল ডিপোতে। একই সঙ্গে পুরো মেট্রোরেলের লাইনজুড়ে একইভাবে বৈদ্যুতিক লাইন টানা হচ্ছে। সূত্র জানায়, বর্তমানে এমআরটি লাইন-ছয় প্রকল্পের ৪টি স্টেশনের নির্মাণ কাজ চলছে। এগুলো হচ্ছে উত্তরা (উত্তর), উত্তরা (সেন্ট্রাল), উত্তরা (দক্ষিণ) এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা স্টেশন। এর মধ্যে উত্তরার ৩টি স্টেশনের উপরিভাগের নির্মাণকাজ প্রায় শেষের দিকে। খুব দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই ৩টি স্টেশনের কাজ শতভাগ শেষ হয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে স্টেশন নির্মাণের কাজ চলছে। আর যে ৩টি আইকনিক স্টেশন থাকবে সেগুলোর কাজেও বেশ অগ্রগতি হয়েছে। কাজের গতিও বেড়েছে। ডিএমটিসিএল সূত্র জানায়, ডিসেম্বর পর্যন্ত লাইন-৬ এর পুরো প্রকল্পের কাজ এগিয়েছে ৫৫ দশমিক ১৯ শতাংশ। প্রথম পর্যায় অর্থাৎ উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশের কাজ এগিয়েছে ৭৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ। দ্বিতীয় অংশ আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৪৯ দশমিক ৪৭ শতাংশ। রেলে কোচসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি সংগ্রহের কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৪৩ দশমিক ৮২ শতাংশ। ডিএমটিসিএল সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এপ্রিলেই টেস্ট রানের লক্ষ্য নিয়ে কাজ চলছে। টেস্ট রানের জন্য পুরো প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত হওয়ার প্রয়োজন হবে। শুধু উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশ প্রস্তুত হলেই চলবে। এমনকি ৫২ জোড়া ট্রেনের সবটির প্রয়োজন হবে না। এক বা দুই জোড়া কোচ এনেই ট্রায়াল করানো সম্ভব। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এটা করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এপ্রিলের শেষদিকে ট্রায়াল রান করানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। আর ট্রায়ালের জন্য উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্ট্রাল, উত্তরা দক্ষিণ এ ৩টি পয়েন্টকেই বেছে নিয়ে কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। আশা করি, আমরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই তা করতে পারব। প্রকল্পের এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, টিকিট কাউন্টার, যাত্রী ওঠানামার সিঁড়ি, এক্সেলেটর, লিফট বসানোর কাজও চলছে।