এপ্রিলেই মুরাদপুর-লালখান বাজার ফ্লাইওভার চালু


প্রকাশের সময় :১১ মার্চ, ২০১৭ ৭:৪১ : অপরাহ্ণ 1485 Views

সিএইচটি টাইমস নিউজ ডেস্কঃ-এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে চালু হচ্ছে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের মুরাদপুর থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত বিস্তৃত আক্তারুজ্জামান চৌধুরী ফ্লাইওভার।৫.২ কিলোমিটার দীর্ঘ এই ফ্লাইওভারকে চট্টগ্রাম শহরের লাইফলাইন বলা হচ্ছে।সূত্র মতে,আগামী জুন মাস পর্যন্ত প্রকল্পের সময় থাকলেও পরীক্ষামূলক ভাবে এপ্রিলের শুরুতেই গাড়ি চলাচলের লক্ষ্যে রাতেদিনে কাজ চলছে।সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম বলেন, মূল ফ্লাইওভারের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে।এ মাসের মধ্যেই কাজ শেষ করে ফেলবো।এপ্রিলের শুরুতেই ফ্লাইওভারের উপর দিয়ে গাড়ি চলাচল শুরু হবে।তবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে দিয়ে ফ্লাইওভার উদ্বোধন করা হবে জুন মাসে।তিনি বলেন,ষোলশহর দুই নম্বর গেটের র‌্যাম্প নির্মাণ চলছে।জিইসি মোড়ের র‌্যাম্প আগামী এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে শুরু করার লক্ষ্য নিয়ে আমরা অগ্রসর হচ্ছি।ইতিমধ্যে প্রকৌশলী ও ঠিকাদারের সাথে বসেছি।আমরা পরীক্ষামূলকভাবে গাড়ি তুলে দেবো।জুনে উদ্বোধন করবো।ফ্লাইওভারটি পুরোদমে চালু হলে নগরীর যান চলাচলের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে বলেও সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
জানা গেছে,লালখানবাজার থেকে মুরাদপুরের গাড়িগুলো ফ্লাইওভারে চলাচলের পর জিইসি মোড়ে লুব নির্মাণের কাজ শুরু হবে।পরবর্তীতে লুব নামানো হবে ষোলশহর দুই নম্বর গেটে।সর্বমোট ৬ দশমিক ৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ ফ্লাইওভারে ব্যয় হচ্ছে ৬৯৬ কোটি ৩৪ লাখ টাকা।সিডিএ’র কর্মকর্তারা বলেছেন,নগরীর প্রধান সড়ক হচ্ছে এয়ারপোর্ট থেকে বহদ্দারহাট পর্যন্ত বিস্তৃত এশিয়ান হাইওয়ে।রাস্তাটিকে চট্টগ্রাম মহানগরীর লাইফলাইন হিসেবে বিবেচনা করা হয়।রাস্তাটির বিভিন্ন পয়েন্টে বিভিন্ন হারে যানবাহন চলাচল করে।তবে সিডিএর সমীক্ষায় দেখা গেছে,বহদ্দারহাট,মুরাদাপুর,ষোলশহর ও জিইসি এলাকা দিয়ে রাস্তাটিতে প্রতিদিন গড়ে ৭৫ হাজারেরও বেশি গাড়ি চলাচল করে।বছর তিনেক আগের এই সমীক্ষার উদ্ধৃতি দিয়ে সিডিএ’র সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন,বর্তমানে এই জংশনগুলো দিয়ে গড়ে এক লাখ গাড়ি চলাচল করে। বিপুল সংখ্যক গাড়ির চাপে দিনের বেশির ভাগ সময়ই রাস্তাটির গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো স্থবির থাকে।এই অবস্থার অবসানে সিডিএ একইসাথে পাঁচটি ফ্লাইওভার নির্মাণ প্রকল্প হাতে নিয়েছিল।২০১০ সালের ২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামে এসে বহদ্দারহাট, মুরাদপুর,ষোলশহর ২ নং গেট,জিইসি মোড় (অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ চত্বর) এবং কদমতলী ফ্লাইওভার মিলে পাঁচটি ফ্লাইওভার নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ইতিমধ্যে বহদ্দারহাট ফ্লাইওভার,কদমতলী ফ্লাইওভার ও দেওয়ানহাট ওভারপাস নির্মিত হয়েছে।পরবর্তীতে মুরাদপুর মোড়,ষোলশহর ২ নং গেট এবং জি ই সি মোড়ের ফ্লাইওভার তিনটি নিয়ে নতুন করে চিন্তাভাবনা করা হয়। খণ্ড খণ্ড করে ফ্লাইওভার নির্মাণ না করে একই সাথে টানা লম্বা একটি ফ্লাইওভার নির্মাণের প্রকল্প তৈরি করা হয়।২০১০ সালের ১ জুন ওই প্রকল্পের অনুমোদন দেয় একনেক।পরবর্তীতে সিডিএ প্রকল্পটির কাজ বাস্তবায়ন করার জন্য ডিডিসি,এসএআরএম,ডিপিএম-জেভি-কে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করে।এই পরামর্শক প্রতিষ্ঠান প্রকল্পটির ডিজাইন,ফিজিবিলিটি স্টাডি ও মাটির পরীক্ষা সম্পন্ন করে।পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের ফিজিবিলিটি স্টাডি রিপোর্ট ও চুয়েটের বিশেষজ্ঞ কমিটির মতামত অনুসারে চট্টগ্রাম নগরীর যানজট সমস্যা নিরসনে মুরাদপুর থেকে টানা লালখানবাজার পর্যন্ত চারলেন বিশিষ্ট ফ্লাইওভার নির্মাণের পরামর্শ দেয়া হয়।এরই পরিপ্রেক্ষিতে ফ্লাইওভার নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু হয়।ম্যাক্স রেন্‌কেন (জেভি) নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ফ্লাইওভারটির নির্মাণকাজ শুরু করে।দীর্ঘ ফ্লাইওভারটির নির্মাণ কাজ শুরু করা হলেও পরবর্তীতে জিইসি মোড় ও ষোলশহর দুই নম্বর গেটকে যদি ফ্লাইওভারে সংযুক্ত করা না যায় তাহলে পুরো প্রকল্পটির উদ্দেশ্য ভেস্তে যাবে বলে মতামত দেন বিশেষজ্ঞরা।এরই পরিপ্রেক্ষিতে ষোলশহর দুই নম্বর গেট ও জিইসি মোড়ে নতুন করে র‌্যাম্প নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।পরিকল্পনা অনুযায়ী জিইসি মোড়ে চারটি র‌্যাম্প তৈরি করা হবে।এতে মুরাদপুরের দিক থেকে আসা ফ্লাইওভার থেকে একটি র‌্যাম্প জিইসি মোড়ের একটু আগে এলিট পেইন্টের অফিসের সামনে মূল রাস্তায় মিশবে।আবার জিইসি মোড় থেকে ফ্লাইওভারটিতে উঠার জন্য পেনিনসুলা হোটেলের পর থেকে একটি র‌্যাম্প উঠে ফ্লাইওভারে মিলবে।অন্য পাশে লালখান বাজার থেকে জিইসি যাওয়ার পথে জিইসি কনভেনশনের গেটের কাছেই র‌্যাম্প নামবে।জিইসি থেকে মুরাদপুর যাওয়ার জন্য বাটা গলির কাছ থেকে র‌্যাম্প উঠা শুরু হবে।এই চারটি লুব তৈরির পাশাপাশি প্রকল্পটিতে ষোলশহর দুই নম্বর গেটের লুব আরসিসি স্ট্রাকচারের পরিবর্তে স্টিল স্টাকচারের করা হচ্ছে।মুরাদপুর থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার রাস্তার পুরোটাই নতুন করে সংস্কার এবং পুননির্মাণ করে দেয়ারও সিদ্ধান্ত হয়েছে।ফ্লাইওভারে এলইডি লাইট লাগানো এবং বিউটিফিকেশনের কাজেও নান্দনিকতা আনা হবে।তবে র‌্যাম্প নির্মাণের কাজ শুরুর আগে সিডিএ চাচ্ছে মুরাদপুর থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত চলাচলকারী গাড়িগুলোকে ফ্লাইওভারে তুলে দিতে। এতে করে ষোলশহর দুই নম্বর গেট ও জিইসি মোড়ের গাড়ি চলাচল অনেক কমে যাবে।মূল রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা কমে গেলে র‌্যাম্প নির্মাণে সুবিধা হবে।আগামী এপ্রিল মাসের শুরুতে ফ্লাইওভারটি চালু করে দিয়ে জিইসি মোড়ে র‌্যাম্প নির্মাণের কাজে হাত দেয়া হবে।তবে ষোলশহর দুই নম্বর গেটে র‌্যাম্প নির্মাণের কাজ বেশ আগেই শুরু হয়েছে।ফ্লাইওভার থেকে র‌্যাম্প গিয়ে রেললাইন পার হয়ে নামবে।বায়েজিদ রোড থেকে আসা গাড়ি রেললাইনের আগেই র‌্যাম্পে উঠবে আবার ফ্লাইওভার থেকে নামতেও গাড়িগুলোকে রেললাইন পার হয়ে নামতে হবে।র‌্যাম্পের নিচ দিয়ে ট্রেন চলাচল করবে।ষোলশহর দুই নম্বর গেটের র‌্যাম্প নির্মাণের কাজও আগামী মাস তিনেকের মধ্যে শেষ হবে।

ট্যাগ :

আরো সংবাদ

ফেইসবুকে আমরা



আর্কাইভ
November 2024
M T W T F S S
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031  
আলোচিত খবর

error: কি ব্যাপার মামা !!