দেশব্যাপী দুর্গম এলাকায় নিরাপদে ও স্বল্প খরচে পারিবারিক পরিবেশে আবাসিক সুবিধাসম্পন্ন হোম স্টে সার্ভিস চালুর উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড। মূলত চড়া মূল্যে হোটেল মোটেলে থাকার বিকল্প হিসেবে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দেশব্যাপী পর্যটন শিল্প বিকাশে হোম স্টে সার্ভিস কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
জানা গেছে, করোনা তান্ডব পরিস্থিতিতে এই উদ্যোগ নেয়া হলেও স্বাভাবিক সময়েও তা অব্যাহত থাকবে। ট্যুরিজম বোর্ড জানিয়েছে, বর্তমানে দেশের প্রান্তিক ও দুর্গম এলাকায় গুরত্বপূর্ণ পর্যটন স্পটগুলোতে পর্যটকদের থাকার কোন ব্যবস্থা নেই। এই অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই ট্যুরিজম বিশেষজ্ঞরা মতামত জানিয়ে আসছেন। এ অবস্থায় বেশ গুরুত্ব দিয়েই সারাদেশের পর্যটন এলাকায় হোম স্টে করার জন্য স্থানীয় লোকজনকে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। এ উদ্যোগটি বাস্তবায়ন করা হলে করোনাকালে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে দিন-রাত যাপনের নিশ্চয়তা পাবেন পর্যটকরা। করোনা-পরবর্তীতেও অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে তৃণমূলের পর্যটন কেন্দ্র ভ্রমণে রাত যাপনের ব্যবস্থা রাখা হবে। এই কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সম্প্রতি রাজধানীর বনানীতে লিটল ট্র্রি নামের একটি হোম স্টে সার্ভিস প্রস্তুত করা হয়েছে। বনানীর মতো উন্নত এলাকায় এই গেস্ট হাউসে অপেক্ষাকৃত কম দামেই থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। যা সাধারণ ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের পর্যটকদেরও ক্রয়সীমার মধ্যে থাকছে।
এ সম্পর্কে ট্যুরিজম সূত্র জানায়, বিশ্বব্যাপী করোনা তা-বে পর্যটন খাত লন্ডভন্ড। বাংলাদেশে করোনা তান্ডব ততটা ভয়ঙ্কর না হলেও বিশ্বব্যাপী পর্যটন খাত যে নড়বড়ে অবস্থায় পড়েছে- তার ঢেউ এখানেও লেগেছে। বিশ্ব পরিস্থিতির তুলনায় এদেশে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের এভিয়েশন ও পর্যটন খাত। এতে পর্যটননির্ভর প্রতিষ্ঠানগুলোর ৪০ লাখ কর্মী বিপাকে পড়েন। এখনো তাদের জীবিকা ও উপার্জন হুমকির মুখে। তাদের পরিবারের দেড় কোটির বেশি মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ক্ষতির শিকার হয়েছেন। এসব কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সংশ্লিষ্ট ও স্থানীয় লোকজনকে কাজে লাগাতে দুর্গম এলাকায় ‘হোম স্টে’ নামে নতুন এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সারাদেশে ভ্রমণপিপাসুদের প্রিয় স্থানগুলোতে যেখানে থাকার ব্যবস্থা নেই- সেখানে থাকার ব্যবস্থা করা হবে পারিবারিক পরিবেশে। ছোট ছোট বাড়িতে অবকাঠামোর উন্নয়ন করে পর্যটকদের জন্য থাকার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে এই কার্যক্রমে। এ ছাড়া অন্যান্য সুবিধাদিও থাকবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জাবেদ আহমেদ বলেন, এটা একটা সম্পূর্ণ নতুন ধারণা থেকে করা হয়েছে। দেশের দুর্গম এলাকা যেমন খাগড়াছড়ি, বান্দরবন, নেত্রকোনার মতো দুর্গম এলাকা যেখানে হোটেল মোটেল নেই তেমন এলাকাকে প্রাধান্য দিয়েই হোমস্টে তৈরি করা হয়েছে। যদিও আমরা সারাদেশে ‘হোম স্টে’ সার্ভিস চালু করতে চাই। পর্যটনের বিকাশ ও সংশ্লিষ্ট কর্মী এবং স্থানীয় লোকজনকে এর সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে চাই। অনেক জায়গা আছে থাকার ব্যবস্থা নেই বলে পর্যটকরা সেখানে যেতে চান না। অভ্যন্তরীণ ট্যুরিজম এক্ষেত্রে সুফল পাবে। বিদেশী পর্যটকরাও থাকতে পারবেন কম খরচে। করোনায় পর্যটন খাত সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা দ্রুত এই পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠে পর্যটনের বিকাশ ঘটাতে চাই। সে কারণেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়। আমরা এরই মধ্যে দেড় শতাধিক তৈরি করে ফেলেছি। আমরা আশাবাদী প্রকল্পটি বেশ কার্যকর ফল বয়ে আনবে। তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছোট ছোট পর্যটন স্পট রয়েছে। একই এলাকায় একাধিক স্পটও রয়েছে। প্রত্যন্ত গ্রাম এলাকায়ও রয়েছে পর্যটন স্পট। একাধিক পর্যটন কেন্দ্রকে ঘিরে একটি হোম স্টে সার্ভিস চালু করলে উদ্যোক্তরা করোনার সময় টিকে থাকতে পারবেন। করোনা পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হলে পর্যটক এবং ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা উভয়পক্ষই সুবিধা পাবেন। সরকার এ ধরনের কাজে উদ্যোক্তাদের সহায়তা করবে সব সময়।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইনবাউন্ড ট্যুর অপারেটর এ্যাসোয়িশেনের প্রেসিডেন্ট ও ওয়ার্ল্ড ট্যুরিজম ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট রেজাউল একরাম গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, এটা একটা নতুন উদ্যোগ। চলমান কোভিড মহামারীর দরুন ভ্রমণ পেশায় যারা জড়িত- তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে অনেকেই ভিন্ন পেশায় যুক্ত হয়েছেন। জনপ্রিয় এই ব্যবসা নেই বললেই চলে। কেবল অভ্যন্তরীণ ট্রাভেল শুরু হয়েছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এখনও তেমন শুরু হয়নি। তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে অনেকেই খাবারের ব্যবসা শুরু করেছেন অনলাইনে। অনেকে হোটেল ব্যবসায় জড়িত হয়েছেন। বড় হোটেল করার খরচ অনেক। তাই ছোট ছোট গেস্ট হাউস করছে। বনানীর মতো পশ এলাকায় ‘লিটল ট্রি’ হয়েছে। হোটেলে এমন ভাড়া পেতে ৬ হাজার টাকা লাগবে। সেখানে অর্ধেকেই পাবেন গেস্টরা। বিদেশী গেস্টদের জন্য না হলেও অভ্যন্তরীণ ট্যুরিস্ট যারা রয়েছেন তারা থাকতে পারবেন।
জানতে চাইলে লিটল ট্রি নামের গেস্ট হাউসের মালিক মোঃ মোশাররফ হেসেন শিশির বলেন, কম খরচে উন্নত পরিবেশে থাকার ব্যবস্থা রেখেই করা হয়েছে ‘হোম স্টে’ সার্ভিস। বাবার সার্ভিস এ্যাপার্টমেন্টকে লিটল ট্রি নামের হোম স্টে সার্ভিস করেছি। এখানে রয়েছে সাতটি রুম। পর্যটকদের সুবিধার জন্য রয়েছে ড্রয়িং রুমও। অন্যান্য সুবিধা তো রয়েছেই। একটি বড় হোটেলে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা যেসব রুমের ভাড়া নেয়া হয়, সেই রকম রুমের ভাড়া দেয়া হবে অনেক কম। দাম নির্ধারণ এখনও করিনি। তবে এক হাজার ২০০ টাকা থেকে দেড় হাজার টাকায় রাত যাপনের ব্যবস্থা রাখা হবে, যা পর্যটকদের জন্য লাভজনক। এদিকে রাজধানীসহ সারাদেশে এ ধরনের হোম স্টে সার্ভিস চালুর বিষয়ে বেশ সাড়া মিলেছে বলে জানিয়েছে ট্যুরিজম বোর্ড। পর্যটন কেন্দ্র এলাকার জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে অনেকেই আগ্রহ প্রকাশ করেছে।