একটি আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সেবাদানকারী,আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠান হলো বাংলাদেশ পুলিশ। রাষ্ট্রের যেকোনো দুর্যোগে,দুর্ভোগে,দূর্বিপাকে সদা সর্বদায় মানুষের সেবা,সুরক্ষা এবং নিরাপত্তায় নিয়োজিত সংস্থায় হচ্ছে বাংলাদেশ পুলিশ। রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা থেকে শুরু করে ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট, ভি আইপি এবং ভিভিআইপি দের বিশেষ নিরাপত্তা, মাদক নির্মুল,চোরা চালান দমন, শান্তি শৃঙখলার স্থিতিতা অবস্থা বজায় রাখা, রাজনৈতিক দাঙা হাঙামা দমন করা, অপরাধ নিবারণ করা, চুরি ডাকাতি, ছিনতাই,রাহাজানি নির্মুল করা সবগুলো কাজই কিন্তু পুলিশকেই করতে হয়। যদিও এই সব কাজ করার জন্যও আলাদা আলাদা কথা কিছু সংস্থা রয়েছে। তাদের কার্যক্রম সম্পর্কে হয়তো আমরা অনেকেই ওয়াকিবহাল নয়। সব কিছুই যেন পুলিশ কেই করতে হবে। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্থ নয় বরং ২৪ ঘন্টায় মানুষের নিরাপত্তা বিধানে সদা বিরাজমান থাকতে হচ্ছে বাংলাদেশ পুলিশকেই। তাহলে অন্য এতগুলা সংস্থার কি প্রয়োজন! তাদের কাজ কি! প্রশ্ন থেকেই যায়!
যেমন দরুন মাদক এর বিষয়। চোরা চালান এর বিষয়। এগুলো কোথা থেকে আসে? সবাই উত্তর দিবেন যে, বিভিন্ন দেশ থেকে তাও আবার আমাদের দেশের পাশ্ববর্তী দেশগুলো থেকেই আসে। তাহলে সীমান্ত রক্ষায় তথা চোরা চালান এবং মাদক বহন করে যেন কেউ দেশে আসতে না পারে তার জন্য আমাদের দেশের একটি সংস্থা রয়েছে। তাদের কাজ হচ্ছে এই সব বিষয় কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা। বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) এবং কোস্ট গার্ড কেআরও শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে হবে যাতে করে তারা এই বিষয়টা সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। কারণ আমাদের দেশের সীমান্ত খুব বেশী নয়। এই অল্প জায়গায় যদি আমরা এই মাদক নির্মুল না করতে পারি তাহলে তা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়লে নির্মূল করা নিঃসন্দেহে অত্যন্ত কঠিন কাজ। অতএব সীমান্ত রক্ষায় যারা দায়িত্ব পালন করছেন তাদের চোখ ফাঁকি দিয়েই এই ইয়াবা, ফেন্সিডিল, গাজা, মদ ইত্যাদি প্রবেশ করছে। তাদেরকে এই সব বিষয়ে আরো সুচারু, কঠিন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এছাড়াও আমাদের দেশে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরও রয়েছে। তাদের কার্যক্রমের পরিধি দৃশ্যমান থাকতে হবে। সীমান্তের পাচঁ কিলোমিটার এর মধ্যে পুলিশের করণীয় তো কিছুই নেই।
বৈশ্বিক করোনা মহামারী র এই সময়ে সবাই যখন নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত ঠিক সেই সময়েই পুলিশই সবার আগে এগিয়ে এসেছে। নিজের সব কিছু কে উজাড় করে জনগনের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। কি করে নাই পুলিশ? লাশ দাফন থেকে শুরু করে খাবার পৌঁছিয়ে দেওয়া, আইসোলেশনে প্রেরণ, লক ডাউন নিশ্চিত করা সব কাজই পুলিশ করেছে নিজের জীবন বাজি রেখেই। অনেকেই যখন পালিয়ে গেছে পুলিশ তখন এগিয়ে গেছে মানবতার সেবায়। মানুষের জীবন বাচানোর জন্যই। এখনো অনেক পুলিশ রয়েছে যারা বিগত ৬/৭ বছর ধরে পপরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন। ছুটিতে যেতে পারছে না। একমাত্র জনগনের নিরাপত্তার দিকে তাকিয়েই পুলিশের এত ছাড়!
পুলিশকে বহুমাত্রিক কাজ করতে হয়। আর এর জন্যই তাদের চাপ থাকে খুব বেশি। রাজনৈতিক চাপ থেকে শুরু করে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা সব কিছু সামলিয়েই তাদের পথ চলতে হয়। পাড়ার পান দোকান থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের বঙভবন পর্যন্ত সব কিছুই তাদের দেখতে হয়, তাদের নিরাপদ এবং নিরাপত্তা,সেবা সুরক্ষায় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা সব কিছুই কিন্তু পুলিশ দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। রাষ্ট্রের এতগুলো কাজ করতে গিয়েই তারা অনেক সময় অনাকাঙ্ক্ষিত বিপদে পড়তে হয়। আর সেটা অনেক সময় ব্যক্তির ভুলের জন্যই হয়ে থাকে। আর এর জন্য কোন ব্যক্তির ভুলের জন্য কোন প্রতিষ্ঠান কে দোষারোপ করা কোনভাবেই কাম্য নয়। আমি কোন অপরাধ এবং অপরাধীর পক্ষে নয়। যেই অপরাধ করবে তার শাস্তি তাকে পেতেই হবে আর এর জন্য প্রতিষ্ঠানকে দায়ী করা একেবারেই অনুচিত।
সাম্প্রতিক সময়ে কক্সবাজারে ঘটে যাওয়া ঘটনার বিচার অবশ্যই অন্য দশের মতো আমিও চাই। পুলিশের গুলিতে নিহত অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহার হত্যার বিচার অবশ্যই আমি চাই। তার জন্য ইতিমধ্যে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে একাধিক তদন্ত কমিটি হয়েছে। তাদের তদন্ত শেষ হলেই আমরা প্রকৃত সত্য বিষয় টি জানতে পারবো। তার আগেই আমরা অনেকেই নিজেকে বিচারের আসনে ভেবে বিচার করে ফেলছি। অনেকেই অনেক ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত বিব্রত মন্তব্য করছি। একটি আলোচিত বিচারাধীন বিষয়ে এই ধরনের মন্তব্য থেকে বিরত থাকাই শ্রেয়। তদন্ত কমিটির প্রতি আস্থা থাকা প্রয়োজন। রাষ্ট্রের বিচার কার্যের প্রতি বিশ্বাস এবং আস্থা দুটোই থাকা অত্যাবশ্যক। যিনি অপরাধী তিনি নিশ্চয়ই আইনের উর্ধ্বে নয়। আইন সবার জন্যই তো সমান। যিনি অপরাধ করেছেন তিনি তো একটি ব্যক্তি কোন প্রতিষ্ঠান নয়। অতএব আমরা কোনভাবেই কোন প্রতিষ্ঠান কে ঢালাওভাবে দোষারোপ করে নিজেদের অজ্ঞতা জানান দেওয়া থেকে বিরত থাকাই শ্রেয়। ব্যক্তির দায় কোনভাবেই কোনো প্রতিষ্ঠান নিবে না। অতীতেও নেয় নি ভবিষ্যতে ও নিবে না। অপরাধীর পরিচয় কোন প্রতিষ্ঠান নয় কেবল ব্যক্তি। ঢালাওভাবে কোনো প্রতিষ্ঠান এর বিরুদ্ধে মন্তব্য করে অন্য কোন প্রতিষ্ঠান কে উস্কে দেওয়া ছাড়া আর কিছু নয়।
বাংলাদেশ পুলিশ এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বিগত ৫০ বছর ধরে একসাথে কাধেঁ কাধঁ মিলিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। রাষ্ট্রের অন্যতম দুটি প্রতিষ্ঠান এর মাঝে যারা বিরুপ মন্তব্য করে এর মাঝে ভুল বোঝাবুঝির চেষ্টা করছেন তাদের উদ্দেশ্য সফল হবে না। ইতিমধ্যে মাননীয় সেনাপ্রধান এবং পুলিশ প্রধান এই বিষয় একমত হয়েছেন, এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এর সাথে যারা জড়িত তাদের সবাইকেই বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। এর জন্য কোন প্রতিষ্ঠান দায়ী নয়। প্রতিষ্ঠান দায়ী হতে পারে না। দয়া করে আপনারা এই বিষয়ে অযাচিত ভাবে মন্তব্য ছুড়ে কোদা ছোড়াছুড়ি বন্ধ করুন আর এর সুষ্ঠু বিচারের পথ কে সুগম করুন। দেশবাসী এর সুষ্ঠু বিচার অবশ্যই প্রত্যাশা করে। এখন তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে থাকুন। নিশ্চয়ই রাষ্ট্র এর সুবিচার নিশ্চিত করবেন।
লেখকঃ কলামিস্ট, সাংস্কৃতিক কর্মী এবং সংগঠক।