বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বিশ্বের শোষিত মানুষের জন্য সংগ্রাম করবে। বঙ্গবন্ধুর মহান আদর্শ বাঙালি জাতির মুক্তির পথই নয়, এটা শোষিত মানুষের মুক্তির পথ। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান ভৈরবে এক জনসভায় এ কথা ঘোষণা করেন। ১৯৭২ সালের ২১ জুলাই ইত্তেফাকে এ সংবাদ প্রকাশিত হয়।
এ জনসভায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর প্রধান আব্দুর রাজ্জাক স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর গার্ড অব অনার পরিদর্শন করেন। গণতন্ত্রের সঙ্গে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে আমরা দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চাই। তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে পুনর্গঠন করার জন্য শ্রমিকদের উৎপাদন বৃদ্ধির আহ্বান জানান। বঙ্গবন্ধুর বৃক্ষরোপণ অভিযান সাফল্যমণ্ডিত করে তুলবার জন্য রাজ্জাক বলেন, ‘এই দেশের সম্পদ বৃদ্ধি করার প্রচেষ্টা জনগণকে আরও জোরদার করতে হবে।’ একইসঙ্গে তিনি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ভুট্টোর প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘পাকিস্তানকে অবিলম্বে বাংলাদেশের বাস্তবতা মেনে নিতে হবে এবং আটকে পড়া বাঙালিদের ফেরত দিতে হবে।’
ঢাকা শরীরচর্চা কলেজের পক্ষ থেকে ১৯ জুলাই ১৯৭২ প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে এক হাজার টাকার চেক প্রদান করা হয়। সেই চেক গ্রহণ করছেন বঙ্গবন্ধু, ২১ জুলাই ইত্তেফাক পত্রিকায় এমন ছবি প্রকাশ করা হয়।
সমাজতন্ত্রের সংক্ষিপ্ত কোনও পথ নেই
বাংলাদেশ সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনা দফতরের মন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ কিছুসংখ্যক ছাত্রের পরীক্ষায় অসদুপায় ও অটো প্রমোশন দাবির তীব্র নিন্দা করেন। তিনি আনুষ্ঠানিক পরীক্ষাগুলোতে ছাত্রদের ব্যাপক অসদুপায় অবলম্বন প্রসঙ্গে প্রশ্ন করেন—বাংলাদেশের সমাজের এতটা নৈতিক অবনতি কী করে সম্ভব হলো? মন্ত্রী ২০ জুলাই বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে স্যার সলিমুল্লাহ হল ছাত্র সংসদের অধিষ্ঠান উৎসবে প্রধান অতিথির বক্তব্য দিচ্ছিলেন। উৎসবে সভাপতিত্ব করেন হলের সিনিয়র আবাসিক অধ্যাপক ড. মাহমুদ। মন্ত্রী বলেন, ‘যারা অসদুপায়ে পরীক্ষায় পাস করে তাদের দ্বারা আর যাই হোক, দেশের জনগণের কল্যাণে আসতে পারে না। শিক্ষা গ্রহণ করে যদি আমরা বাস্তব জীবনে কাজে লাগাতে না পারি, তাহলে সে শিক্ষার কোনও মূল্য নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল ছাত্র অটোপ্রমোশনের দাবিতে উপাচার্যসহ শিক্ষকদের ঘেরাও করে রাখে। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতিতে সে কর্মসূচি প্রত্যাহার হয়।’
স্বীকৃতির আগে আলোচনা নয়
ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জেনারেল সুহার্তো বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সামাদের সঙ্গে ৭৫ মিনিট আলোচনা করেন। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের বৈঠক অনুষ্ঠানের প্রস্তাবে সম্মত করানোর চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু এই প্রচেষ্টায় তিনি সফল হন নাই বলে খবরে প্রকাশ করা হয়। বৈঠকের পর ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদম মালিকের উক্তি থেকে এই ধারণা স্পষ্ট হয়। মালিক বলেন, ‘বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে যেকোনও সময় যেকোনও স্থানে আলোচনা অনুষ্ঠানের প্রস্তাব এখনও বহাল আছে। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য ইন্দোনেশিয়ার প্রচেষ্টাকে ভুল বোঝা হবে না বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি এবং বলেন যে, ইন্দোনেশিয়া বাংলাদেশ-পাকিস্তানের স্বার্থের ব্যাপারে আগ্রহী।’ এদিকে আব্দুস সামাদ আজাদ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন যে, ‘বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দান না করে পাকিস্তান কোনও আলোচনা করতে পারবে না।’
২১ জুলাই ১৯৭২ সকাল ৯টায় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সম্মেলন উদ্বোধন করার কথা আছে বলে পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়। এই সম্মেলনে যোগদান করতে সমাবেশের দুই দিন আগে থেকে হাজার হাজার প্রতিনিধি দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ঢাকায় আসতে শুরু করেন। প্রতিনিধিদের বিভিন্ন হল, কলেজে থাকার ব্যবস্থা করা হয়। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রতিনিধিদের থাকার জন্য অসংখ্য অস্থায়ী তাঁবু খাটানো হয়েছে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর কুচকাওয়াজ ও বঙ্গবন্ধুকে অভিবাদন জ্ঞাপনের মধ্য দিয়ে সকাল ৯টায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হবে বলে দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
সৌজন্যেঃ বাংলাট্রিবিউন