বান্দরবানে সরকারি কর্মচারী আউ মার্মা’র তন্ত্রমন্ত্রের সর্ব চিকিৎসা !


অনলাইন ডেস্ক প্রকাশের সময় :২১ এপ্রিল, ২০২০ ৫:৫৮ : অপরাহ্ণ 741 Views

বান্দরবানে সরকারি এক কর্মচারীর বিরুদ্ধে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থেকে বৈদ্য ব্যবসা ও তন্ত্রমন্ত্রের নামে অপচিকিৎসা, এমনকি প্রয়াত বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরু উ চ হ্লা ভান্তে জীবিত হবেন এমন প্রচারনার অভিযোগ উঠেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জেলা সদরের কুহালং ইউনিয়নের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রের আয়া আউ মার্মা। বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরু উ চ হ্লা ভান্তের অন্যতম শিষ্য। বছরের পর বছরে ধরে উ চ হ্লা ভান্তের পাশে থেকে তন্ত্র-মন্ত্র বিদ্যায় পারদর্শি হন। এরপর জেলা শহরের বৌদ্ধ ধাতু জাদী (স্বর্ণ মন্দির), রাম জাদি, খিয়ংওয়া কিয়ং রাজ বিহার, কুহালং বিহারসহ বিভিন্ন বিহারে মানুষের ভবিষ্যত বাণী প্রদান করে জটিল রোগের চিকিৎসা করে আসছেন। অফিস চলাকালীন সময়ে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থেকে তিনি এই প্রতারণা করে আসছে মানুষের সাথে। বিহারগুলোতে আগতদের পানির ছিটা দিয়ে, ঝাড়-ফু আর ভবিষ্যত বাণী প্রদান করে কতিথ আধ্যাত্বিক শক্তি বলে ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগ ভালো হবে বলে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে আসছে, আর হাতিয়ে নিচ্ছেন লক্ষ লক্ষ টাকা। আর এই টাকা চলে যেত ভান্তের সিন্ডিকেটের হাতে।

জেলা সদরের কুহালং ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রের আয়া আউ মার্মা বলেন, আমি এসবে জড়িত নয়, আমার বিরুদ্ধে হয়তো কেউ মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, তার এসব অপরাধ কার্যক্রম ছিলো খুব স্বাভাবিক বিষয়। জেলাসহ অনেক দূর-দূরন্ত থেকে আসা মানুষ সরল বিশ্বাসে তা বিশ্বাস করে উনার কাছে চিকিৎসা নিতেন। তার চিকিৎসায় কার্যত কোন রোগী ভালো হয়নি, মেলেনি তার ভবিষ্যত বাণীও , বরং যথাযথ চিকিৎসার করতে না পারার কারনে রোগী মারা গেছে। বৌদ্ধ ধর্ম মতে, ধর্মে এসব তন্ত্রমন্ত্রের কোন স্থান না থাকলেও তারা তন্ত্রমন্ত্রের মাধ্যমে মানুষকে বিভ্রান্ত করে, অপ প্রচার চালিয়ে তাদের অপরাধ মূলক কার্যক্রম সংগঠিত করে আসছে।

এই ব্যাপারে পরিবার পরিকল্পনা সহকারী অতুল কান্তি চাকমা জানান, আউ মার্মা’র এই ধরণের কর্মকান্ডের বিষয়ে আমরা অবগত নয়, বিষয়টির খোঁজখবর নেওয়া হবে।

জানা গেছে, আউ মার্মা জেলায় ভান্তে কর্তৃক তৈরী করা জাদীও বিহারগুলোতে স্বয়ং ! ইন্দ্র দেবতাকে হাজির করে সাধারণ মানুষকে বোকা বানিয়ে বলতেন, “ তোমার এই রোগ হবে, সামনে এই বিপদ আসবে, তুমি মারা যাবে”। বৌদ্ধ ধর্মে তন্ত্রমন্ত্রের স্থান না থাকলেও আউ মার্মা এসব করে বৌদ্ধ ধর্মের মহান দর্শনকে বিকৃতি করতেন।

বোনের এসব অপরাধের চিত্রের সত্যতা মিলে আয়া আউ মার্মা এর আপন ছোট ভাই মং সিং ড্রাইভার এর সাথে কথা হলে। তিনি বলেন, আমি বড় দিদি (আউ মার্মা) কে অনেকবার বলেছি এসব বন্ধ করতে, তিনি আমাদের কোন কথাই শুনেনি। উচহ্লা ভান্তের সাথে থেকে মানুষের ভবিষ্যত বলে দিতেন, তিনি এগুলো শিখেছেন ভান্তের কাছ থেকে।

তিনি আরো বলেন, ভান্তেকে ১০ এপ্রিল চট্টগ্রামে নিয়ে গেলে, বোন চট্টগ্রামে যায়, এর ২ দিনপর ভান্তের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভান্তে এখনও জীবিত আছেন। প্রসঙ্গত, গত ১০ এপ্রিল ভান্তে চট্টগ্রামের ম্যাক্স হাসপাতালে প্রয়াত হন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, সাধারণ এই আয়া জেলায় অসাধারণ একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন এসব কাজ র্নিবিঘ্নে চালিয়ে যেতে। উক্ত সিন্ডিকেটের মধ্যে সক্রিয় আছেন জেলা কয়েক প্রভাবশালী ব্যক্তি। তারা হলেন, জেলার থানচি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি মং থোয়াই মার্মা রনি। বান্দরবান পৌরসভার কর্মচারী অং চা হ্লা মার্মা, খিয়ংওয়া কিয়ং রাজ বিহারের সাধারণ সম্পাদক বাচ মং মার্মা ও জেলা সদরের কৃষি ব্যাংকের কর্মচারী মংখ্যা হ্লা মার্মাসহ অনেকে।

এই ব্যাপারে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমার জানা নেই, যদি এই ধরণের কেউ করে, তাহলে তদন্ত করে এই কর্মচারীর বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ট্যাগ :

আরো সংবাদ

ফেইসবুকে আমরা



আর্কাইভ
November 2024
M T W T F S S
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031  
আলোচিত খবর

error: কি ব্যাপার মামা !!