হঠাৎ ঘোলা হয়ে উঠলো বগালেকের পানি!


অনলাইন ডেস্ক প্রকাশের সময় :৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ৭:৩০ : অপরাহ্ণ 524 Views

বান্দরবানের রুমা উপজেলার বগা লেকের পানি বৃষ্টিপাত ছাড়া হঠাৎ ঘোলা হয়ে উঠেছে। চার দিন ধরে ঘোলা হওয়া পানি সোমবারও পরিষ্কার হয়নি। শুধু ঘোলা নয়, পানি থেকে উৎকট গন্ধ বের হচ্ছে বলে বগা লেকপাড়াবাসী বমরা জানিয়েছেন। পরিবেশবিদেরা বলেছেন, কারণ জানার জন্য এখনই ঘোলা পানি পরীক্ষা করা দরকার।

বগা লেকপাড়াবাসী লালকিম বম বলেন, গত শুক্রবার সকাল থেকে লেকের পানি ঘোলা হতে শুরু করে। এখন সম্পূর্ণ কাদামাখা পানির মতো ঘোলাটে হয়েছে। স্বাভাবিকভাবে লেকের পানি নীল স্বচ্ছ। এখন লেকের চেহারা মাটির রঙের মতো হয়েছে। ঘোলা পানি থেকে উগ্র কাদার গন্ধ বের হচ্ছে। এ জন্য পানি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়েছে। গোসলও করা যাচ্ছে না। কেন এ রকম হয়েছে, তাঁরা বলতে পারছেন না।

রেমাক্রি প্রাংসা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান ও প্রবীণ ব্যক্তি রিয়ালদো বম বলেন, বগা লেকের পানি ঘোলা হওয়া এবার প্রথম নয়, প্রতি তিন-চার বছর পর একবার পানি এ রকম ঘোলা হয়ে ওঠে। পাঁচ থেকে সাত দিন ঘোলা থাকার পর আবার পরিষ্কার হয়ে যায়। কোনো কোনো বছর ১০ দিনও পানি ঘোলা থাকে। কেন পানি ঘোলা ও গন্ধ হয়ে ওঠে, পৌরাণিক কাহিনি ছাড়া তাঁদের কিছু জানা নেই।

বগা লেক সৃষ্টি নিয়ে বম, মারমা, ম্রো, খুমি ও ত্রিপুরাদের পৌরাণিক কাহিনি বা কিংবদন্তি রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বগা লেক ছিল একটি সমৃদ্ধ ম্রো গ্রাম। গ্রামের পাশে একটি সুড়ঙ্গে বড় আকারের সাপ থাকত। ওই সাপ ধরে গ্রামবাসী খেয়ে ফেলে। ওই সাপ খাওয়ায় নাগরাজার প্রতিশোধের কারণে গ্রামবাসীসহ গ্রামটি দেবে গিয়ে বগা লেকের সৃষ্টি হয়েছে। এখনো অনেক বম, ম্রোর বিশ্বাস, লেকের গভীরে থাকা নাগরাজ লেজ নাড়ালে পানি ঘোলাটে হয়ে ওঠে।

রুমা উপজেলা সদর থেকে ১৪ কিলোমিটার দুরে রুমা-কেওক্রাডাং নির্মাণাধীন সড়কের ১ হাজার ৭৩ ফুট পাহাড়ের উচ্চতায় বগা লেক অবস্থিত। পাহাড়ের চূড়ায় মনোরম বগা লেক দেখতে প্রতিদিন শত শত পর্যটক ভিড় করে।

রুমা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামসুল আলম বলেন, কেন নির্দিষ্ট একটি সময়ে বগা লেকের পানি ঘোলা হয়, তা বলা মুশকিল। পানির গভীরে কোনো আলোড়ন সৃষ্টির কারণে অথবা কোনো জলজ উদ্ভিদ নির্দিষ্ট সময়ে মরে পচে গেলে পানি ঘোলা হতে পারে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক শহীদুল ইসলাম ২০০৫ সালে বগা লেকের পানির গভীরতা পরিমাপ করেছিলেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বগা লেকের পানির গভীরতা ১১৫ ফুট। এত গভীরে লেকের তলদেশে কী আছে জানা নেই। পানি ঘোলার কারণ পরীক্ষা না করে বলা সম্ভব নয়। এ জন্য এখনই ঘোলা পানি আহরণ ও সংরক্ষণ করে পরীক্ষা করা জরুরি।

বগা লেকের পানি ঘোলা হওয়ার কারণের বিষয়ে বুয়েটের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এম শাহ আলম খান বলেন, এই লেক তিনি কখনো দেখেননি। তবে পানি ঘোলা হওয়ার কিছু কারণ অনুমান করতে পারেন মাত্র। বগা লেকের উঁচুতে পাহাড় আছে। অধ্যাপক শাহ আলম খানের সেই অনুমান হলো, বৃষ্টির সময় পাহাড়ের গায়ে পানি সঞ্চিত থাকে। এটা দেখা যায় না অন্য সময়। এটা ধীরে ধীরে নিচের দিকে আসে। মাটির নিচের পানির স্তরের সঙ্গে হয়তো লেকের আগে কোনো যোগাযোগ ছিল।

অধ্যাপক খান বলেন, ‘কোনো কারণে উঁচু জায়গার পানিটা বেশি বেগে নিচে চলে যাচ্ছে। এর ফলে লেকের তলায় থাকা কাদা আন্দোলিত হয়ে ভেসে উঠছে। আমি এটুকুই আন্দাজ করতে পারি।’

ট্যাগ :

আরো সংবাদ

ফেইসবুকে আমরা



আর্কাইভ
November 2024
M T W T F S S
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031  
আলোচিত খবর

error: কি ব্যাপার মামা !!