৩ ডিসেম্বর জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস। দিবসটি সরকারি ও বেসরকারি সংগঠন ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নিজেরদের মত করে পালন করছে। দিবসটি উপলক্ষে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকেই সরকার প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক উন্নয়নে নানাবিধ কাজ করে আসছে। এর মাঝে মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউণ্ডেশন স্থাপনের কাজটি। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন দেশের অনগ্রসর, বঞ্চিত, অসহায়, প্রতিবন্ধী, অটিস্টিক এবং জন্মগতভাবে কিংবা অন্য যেকোন কারণে শারীরিক ও মানসিকভাবে সমস্যাগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর কল্যাণ, উন্নয়ন, প্রশিক্ষণ ও ক্ষমতায়নের জন্য বহুমাত্রিক সেবা প্রদান করছে।
বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার এক উল্লেখযোগ্য অংশ বিভিন্ন ধরণের প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক ব্যক্তি। ১৯৯৭ সালের ৩রা ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত দ্বিতীয় দক্ষিণ এশিয়া সমাজভিত্তিক পুনর্বাসন সম্মেলনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিবন্ধীদের কল্যাণ ও উন্নয়নে তহবিল গঠনের পরামর্শ প্রদান করেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় প্রতিবন্ধীদের কল্যাণ ও উন্নয়নে গৃহীত কার্যক্রম বাস্তবায়নের নিমিত্ত মন্ত্রীসভা বৈঠকের সিদ্ধান্ত মোতাবেক আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের Vetting গ্রহণপূর্বক সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। ১৯৯৯ সালের নভেম্বরের ১৬ তারিখে জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন গঠিত হয়। ২০০০ সালের ফেব্রুয়ারির ১৬ তারিখ প্রকাশিত বাংলাদেশ গেজেট এর মাধ্যমে জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের সংঘস্মারক ও গঠনতন্ত্র প্রকাশ করা হয়।
ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে দেশের প্রতিবন্ধী এ জনগোষ্ঠীকে বিনামূল্যে ফিজিওথেরাপি ও অন্যান্য চিকিৎসা সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে ২০০৯-২০১০ অর্থ বছরে দেশের পাঁচটি জেলায় পরীক্ষামূলকভাবে প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র চালু করা হয়। এসব কেন্দ্রের সাফল্যের ভিত্তিতে ২০১৪-১৫ অর্থ বছর পর্যন্ত দেশের ৬৪টি জেলায় ১০৩টি কেন্দ্র চালু করা হয়। পর্যায়ক্রমে সকল উপজেলা প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র, অটিজম কর্ণার , টয় লাইব্রেরী কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা হবে। ইতোমধ্যে স্থাপিত কেন্দ্রসমূহে এ যাবৎ প্রায় ১ লক্ষ ১০ হাজার প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে বিভিন্ন ধরণের প্রায় ১১ লক্ষ ১৮ হাজার সেবা (Service Transaction) প্রদান করা হয়েছে। এ সব কেন্দ্র থেকে বিনামূল্যে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ২০১৪-১৫ অর্থ বছর পর্যন্ত প্রায় ৩ কোটি ৫০ লক্ষ টাকার সহায়ক উপকরণও সরবরাহ করা হয়। এসকল সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রসমূহ হতে প্রতিবন্ধী, অটিস্টিক এবং জন্মগতভাবে কিংবা অন্য যেকোন কারণে শারীরিক ও মানসিকভাবে সমস্যাগ্রস্থ ব্যাক্তিকে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে থেরাপি, ফিজিওথেরাপি, অকুপেশনাল থেরাপি, স্পিচ এন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি সেবার পাশাপাশি কাউন্সেলিং,পরামর্শ, তথ্য এবং রেফারেল সেবা প্রদান করা হচ্ছে।
প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিকদের কর্মসংস্থানের ব্যাপারে সরকারিভাবে কোটা প্রদান করা হয়। এছাড়াও গত ২০১৫ সাল থেকে প্রতিবছর প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য চাকরির মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এবছর মেলায় সারাদেশ থেকে বিভিন্ন ধরণের মোট ৫১৮ জন চাকুরী প্রার্থী প্রতিবন্ধী ব্যক্তি অংশগ্রহণ করেন। মেলা চলাকালীন প্রতিষ্ঠানসমূহ তাদের স্টলে সাক্ষাৎকার গ্রহণের ব্যবস্থা করে। সাক্ষাৎকার শেষে চাকুরীদাতা প্রতিষ্ঠানসমূহ ৩৮৩ জন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত করে। উল্লেখ্য ২০১৫ সালে ৩২ জন, ২০১৬ সালে ৬০ জন, ২০১৭ সালে ১১৫ জন এবং ২০১৮ সালে ১৭৬ জন দক্ষ প্রতিবন্ধী ব্যক্তির কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়।মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দক্ষতায় আর সুদৃষ্টির ফলে প্রতিবন্ধীরা আজ আর সমাজের বোঝা নয়। প্রশিক্ষণ গ্রহণের মাধ্যমে তারাও নিজ দক্ষতায় হয়ে হয়ে উঠছে দেশের সম্পদ।