নিজেদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা। দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে তৈরি হওয়া শঙ্কা ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে অস্বস্তি বোধ করছেন তারা।
দলীয় সূত্র বলছে, বিএনপির যেসব সিনিয়র নেতা জিয়াউর রহমানের সঙ্গে রাজনীতি করেছেন তারা বেগম জিয়া রাজনীতিতে সক্রিয় থাকতে স্বস্তিবোধ করলেও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে রাজনীতিতে এক ধরণের অস্বস্তি বোধ করছেন। নানা কারণে তারা লন্ডনে নির্বাসিত থাকা তারেক রহমানের নেতৃত্ব মন থেকে মানতে পারছেন না। এদিকে আবার তারেক রহমানের নেতৃত্ব পছন্দ বিএনপির তরুণ নেতাদের। তারা তারেক রহমানকে আগামী দিনে দলের প্রধান ও রাষ্ট্রনায়ক মনে করছেন। অন্যদিকে সিনিয়র নেতারা এখনও বেগম জিয়াকে দলের কাণ্ডারি ভাবেন। যার কারণে মা-ছেলের অদৃশ্য দ্বন্দ্বে দলের রাজনীতি করতে বিব্রতবোধ করছেন বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
জানা গেছে, এরইমধ্যে বিএনপির রাজনীতি থেকে পদত্যাগ করেছেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী, ইনাম আহমেদ চৌধুরী, মোরশেদ খান ও সর্বশেষ স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান। তাদের পথ ধরে আরও কয়েকজন সিনিয়র নেতাও দল ছাড়তে পারেন বলে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।
সূত্র বলছে, সিনিয়র নেতাদের পদত্যাগে বিএনপিতে হতাশা আর অস্বস্তি বাড়ছে। তোলপাড় শুরু হয়েছে দলের ভেতরে-বাইরে। প্রভাবশালী আরও কয়েকজন নেতার পদত্যাগের আশঙ্কাও করা হচ্ছে। পদত্যাগী নেতাদের ধরে রাখতে নানা তৎপরতা চালালেও তাতে ব্যর্থ হচ্ছে হাইকমান্ড। সব মিলিয়ে হতাশায় পর্যবসিত হচ্ছে দলটির হাইকমান্ড।
এদিকে দেড় বছরের অধিক সময় কারাবন্দী দলের প্রধান বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে রাজপথে বড় কোনো কর্মসূচি না থাকায় তৃণমূলের নেতা-কর্মীরাও ক্ষুব্ধ। বেগম জিয়ার মুক্তিতে প্রেসক্লাবে মানববন্ধনে বিরক্ত সিনিয়র নেতাদের অনেকেই। প্রায় ৭৪ ঊর্ধ্ব বয়োবৃদ্ধ অসুস্থ বেগম জিয়ার মুক্তির জন্য সরকারের টনক নড়ানোর মতো কোনো কর্মসূচি দিতে না পারায় কেন্দ্রীয় নেতাদের সমালোচনায় মুখর মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা।
এমন প্রেক্ষাপটে পদত্যাগী নেতাদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা না করে তা নিয়ে ক্ষোভ দেখাচ্ছে বিএনপির হাইকমান্ড। এমন প্রেক্ষাপটে নেতাদের উদ্দেশ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ অনেকেই বলছেন, যাদের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেছে তারা চলে যাক। তাদের নিয়ে আমাদের সময় কাটানোর দরকার নেই। তবে বিএনপির দায়িত্বশীল নেতাদের এমন গা ছাড়া বক্তব্য বিএনপির সংকট আরও বাড়াবে বলেই শঙ্কা ও অস্বস্তি প্রকাশ করছেন দলটির অধিকাংশ সিনিয়র নেতা।