অবশেষে বাতিল হতে যাচ্ছে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের তহবিল থেকে অনুদান পাওয়া জামায়াত নেতা ও কথিত সাংবাদিক সাদাত উল্লাহর চেক। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ (পিআইবি)-এর মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে,সাদাত উল্লাহর নামে দেয়া ট্রাস্টের অনুদানের চেক বাতিলের উদ্যোগ নিয়েছে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট।চেক বিতরণ শেষে সর্বপ্রথম বিষয়টি কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাফর ওয়াজেদসহ কর্তাব্যক্তিদের নজরে আনে চট্টগ্রামের বিএফইউজে-র যুগ্ম মহাসচিব মহসীন কাজী।পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয় এবং চট্টগ্রাম ও বান্দরবান থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন অনলাইন নিউজ পোর্টালে সংবাদ প্রকাশ হয়।এর প্রেক্ষিতে চেক বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাফর ওয়াজেদ জানান,ইতিমধ্যে তার চেকের অনুকূলে বরাদ্দ ফান্ড বাতিলের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।ওই ব্যক্তি ব্যাংক থেকে উক্ত চেকের টাকা তুলতে পারবে না।
তিনি আরও জানান,তাঁর দায়িত্ব নেয়ার আগেই এ বিতর্কিত ব্যক্তির নামে অনুদান দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তার (ওই ব্যক্তি) বিষয়ে অনুষ্ঠান শেষে বিএফইউজে-র যুগ্ম মহাসচিব মহসীন কাজীর কাছ থেকে শোনার পর বিস্মিত হয়েছি।অফিস খোলার পর এ নিয়ে দাফতরিক তদন্ত হবে।তিনি জানান, বান্দরবানের জেলা প্রশাসক কিভাবে একজন দাগী ও চিহ্নিত ব্যক্তির জন্য সুপারিশ করলো তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।আগামী সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসেই চেকটি বাতিল করা হবে।
একজন জামায়াত নেতা কীভাবে বান্দরবান জেলা প্রশাসকের সুপারিশপ্রাপ্ত হলো এ বিষয়ে জানতে কথা হয় বান্দরবানের জেলা প্রশাসক দাউদুল ইসলামের সাথে।তিনি জানান,আমি এই বিষয়ে কিছুই জানি না।আমি কোনো জামায়াত নেতার পক্ষে সুপারিশ করিনি।আপনার কাছ থেকেই বিষয়টি প্রথম শুনলাম।
বিষয়টি জানতে আরও কথা হয় বান্দরবান প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি আমিনুল ইসলাম বাচ্চুর সাথে।তিনি জানান,সাদাত উল্লাহ বান্দরবানের বাসিন্দা না হলেও এক এসময় সে দৈনিক ইনকিলাবের জেলা প্রতিনিধির পরিচয়ে কিছুদিন সাংবাদিকতা করেছিলো।তবে সে মূল ধারার সাংবাদিকতার সাথে সম্পৃক্ত নয় এবং সে কখনো প্রেস ক্লাবেরও সদস্য ছিলো না।সে ২০১২ সালে লোহাগাড়ার চরম্বা ইউনিয়নে জামায়াতের ব্যানারে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়।বর্তমানে সে বান্দরবানে সাংবাদিকতা করে না।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ সভাপতি রিয়াজ হায়দার চৌধুরী বলেন,প্রায় তিন বছর আগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে জাতীয় প্রেসক্লাবে ইফতার-পরবর্তী ক্লোজডোর মিটিংয়ে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের তৎকালীন সভাপতি হিসেবে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টে ঢাকার বাইরের বিভাগীয় পর্যায়ের নির্বাচিত নেতাদের প্রতিনিধিত্ব দাবি করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলাম।তিনি (মাননীয় প্রধানমন্ত্রী) সেদিন এ ব্যাপারে তাঁর বক্তব্যে ঘোষণাও দিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর সেই ঘোষণা অনুযায়ী যদি কল্যাণ ট্রাস্টের ঢাকার বাইরের অন্তত চট্টগ্রাম থেকে প্রতিনিধিত্ব থাকতো তাতে এমন করে আজ বিতর্ক হতো না।কল্যাণ ট্রাস্টে পাঁচজন থাকলেও পাঁচজনই ঢাকার।ঢাকার নেতৃত্বের সিন্ডিকেট প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী সেটি হতে দেয়নি।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্ম মহাসচিব মহসিন কাজী বলেন, গতকাল গণভবনে অনুষ্ঠানের ঘোষক যখন সাদাত উল্লাহর নামটি উচ্চারণ করে তখন থমকে যাই। দেখি চেক নিতে এগিয়ে যায় সেই চিহ্নিত লোক। পাশের একজনকে তাৎক্ষণিকভাবে বললাম, ও তো জামায়াতের লোক।জামাতের ব্যানারে নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান।সে কীভাবে এখানে এল।তার জন্য অনুদানের সুপারিশই বা কে করলেন।চেক বিতরণপর্ব শেষে চাচক্রে এ বিষয়ে দায়িত্বশীল কয়েকজনের দৃষ্টি আকর্ষণ করি।কল্যাণ ট্রাস্টের এমডি জাফর ওয়াজেদ ভাইকে জানাই।এরই মধ্যে ওই লোককে কাছে পেয়ে তার দলের পরিচয় তুলে ধরে বললাম,আপনি একজন ইউপি চেয়ারম্যান হয়ে কীভাবে অসহায়,অসুস্থদের তহবিলের টাকা নিলেন। কে আপনার জন্য সুপারিশ করেছে।এ প্রশ্নের জবাবে সে বলে,তার ছেলে অটিস্টিক।তার চিকিৎসার জন্য নিয়েছেন।এসময় কল্যাণ ট্রাস্টের এমডি তাকে বলেন,সুটেট-ব্যুটেড হয়ে সাহায্য নিতে এসেছেন।বিষয়টি দৃষ্টিকটু হল না।
চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হাসান ফেরদৌস জানান,একজন জামায়াত নেতা ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সাদাত উল্লাহর দুঃস্থ সাংবাদিক সেজে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের চেক গ্রহণ করা খুবই দুঃখজনক।মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে ৩৪ কোটি টাকা সাংবাদিকদের কল্যাণে দিয়ে থাকেন।কিন্তু একটি সিন্ডিকেট এসব টাকা নিয়ে নয়ছয় করছে।এরা কারা? এই জামায়াত নেতা আগেও প্রধানমন্ত্রীর অনুদান থেকে চেক পেয়েছিলো।কার ইন্ধনে কার সহযোগিতায় এসব হচ্ছে? আমি দাবি জানিয়েছিলাম ঢাকার বাইরে যেসব বিভাগ বা জেলা রয়েছে সেখানে সাংবাদিক ইউনিয়ন বা যেখানে সাংবাদিক ইউনিয়ন নেই সেখানে প্রেস ক্লাবের মাধ্যমে সাংবাদিক বাছাই করতে।কিন্তু এই দাবি এখনো বাস্তবায়ন হয়নি।এটা হলে এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটতো না।
প্রসঙ্গত,সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের অনুদান পাওয়া সাদাত উল্লাহর চেক গ্রহণের ছবি প্রকাশ হবার পর চট্টগ্রাম ও বান্দরবানে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়।তিনি কিভাবে সরকারি অনুদান পেলেন তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন দুই জেলার আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীরা।তাদের সাদাত উল্লাহ শিবিরের সাবেক ক্যাডার এবং জামায়াতের আর্থিক পৃষ্ঠপোষক।এ নিয়ে বান্দরবান জেলা আওয়ামীলীগ প্রেস বিবৃতি দিয়ে তাঁর জামায়াত সম্পৃক্ততার অভিযোগ নিশ্চিত করেন এবং তিনি কিভাবে গণভবনে প্রবেশের সুযোগ পেলেন তা নিয়ে তদন্তের দাবি জানান।তীব্র এই সমালোচনার মাঝেই চেক বাতিল হবার খবর পাওয়া গেলো।