খোকার জানাজায় মানুষের ঢল


সিএইচটি টাইমস অনলাইন প্রকাশের সময় :৮ নভেম্বর, ২০১৯ ১২:৩০ : পূর্বাহ্ণ 651 Views

একাত্তরের রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকার জানাজায় হাজার হাজার মানুষের ঢল নেমেছে।বাদ জোহর রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এ জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।দেশের মাটিতে এটি তার দ্বিতীয় জানাজা,প্রথমটি হয় বেলা ১১টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায়।

অবিভক্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের শেষ মেয়র মুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকার লাশবাহী কফিন রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নেয়া হলে সেখানে কান্নায় ভেঙে পড়েন তার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহকর্মীরা।এ সময় সেখানে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। প্রিয় নেতাকে শেষ বিদায় জানাতে ঢাকা ও আশপাশের এলাকা থেকে জড়ো হন কয়েক হাজার মানুষ।লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে নয়াপল্টন এলাকা।

রাজধানীর নয়াপল্টন,ফকিরাপুল,কাকরাইল এলাকার সড়কে ছড়িয়ে পড়ে মানুষের সমাগম।এ সময় ওই এলাকার সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।নয়াপল্টনে খোকার মরদেহ নিয়ে এলে প্রথমে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন,মির্জা আব্বাস ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায় প্রয়াত নেতার কফিনটি দলীয় পতাকা দিয়ে মুড়িয়ে দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।এরপর দলের পক্ষ থেকে কারাবন্দি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।কালো কাপড়ে মোড়া অস্থায়ী মঞ্চে রাখা হয় খোকার কফিন।নেতা-কর্মীদের কফিনের সামনে কাঁদতে দেখা যায়।বিএনপি মহাসচিবসহ নেতারাও ছিলেন অশ্রুসজল।সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের সকলের প্রিয় নেতা,মুক্তিযোদ্ধা,দুই বারের নির্বাচিত ঢাকার সাবেক মেয়র,সাবেক মন্ত্রী, সাবেক সংসদ সদস্য,ঢাকা মহানগরের সাবেক সভাপতি সাদেক হোসেন খোকা আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। এমন এক সময় চলে গেলেন যখন আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে।তিনি তাকে শেষ দেখা দেখতে পারলেন না।আজকে এই ফ্যাসিবাদী সরকারের নির্যাতনে সারা বাংলাদেশের মানুষ যখন অত্যাচারিত,লাঞ্চিত,সেই সময়ে যে মানুষগুলো ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল সাদেক হোসেন খোকা তার অন্যতম।তিনি চলে গেছেন।তার বর্ণাঢ্য রাজনীতির কথা বলার সময় নয়।তিনি বলেন, সাদেক হোসেন খোকার এই অকালে চলে যাওয়ায় যে রাজনৈতিক শূণ্যতা সৃষ্টি হলো তা পূরণ হওয়ার নয়।আল্লাহ তালার কাছে দোয়া করি তিনি যেন তার সকল গুনাহ মাফ করে দেন,তাকে বেহেশত নসিব করেন।কার্যালয়ের সামনে খোকার জানাজায় ইমামতি করেন,উলামা দলের আহ্‌বায়ক মাওলানা শাহ নেছারুল হক।এরপর তার কফিনে স্যালুট জানান সেক্টর কমান্ডার শাহজাহান ওমরের নেতৃত্বে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল।

গতকাল বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) বেলা দেড়টার কিছু সময় আগে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে খোকার লাশ সেখানে নেয়া হয় নয়াপল্টনে।এর আগে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে খোকাকে সর্বস্তরের জনতা শেষ শ্রদ্ধা জানান।শহীদ মিনারে বিভিন্ন রাজনৈতিক,সামাজিক,সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ মুক্তিযোদ্ধা খোকার মরদেহে শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরাও পুষ্প অর্পণের মাধ্যমে প্রিয় নেতাকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

এর আগে বেলা ১১টার দিকে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় খোকার মরদেহবাহী গাড়িটি পৌঁছায়।পরে দক্ষিণ প্লাজায় অস্থায়ীভাবে স্থাপিত মঞ্চে মরদেহের কফিনটি রাখা হয়।সেখানে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।জানাজার আগে বাবার রুহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া চান বড় ছেলে প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন। সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী,বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ,লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন,কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম,জাতীয় পার্টির মহাসচিব হয়েছেন মশিউর আলম রাঙ্গা,জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ, এলডিপির মহাসচিব ড.রেদওয়ান আহমেদ খোকার জানাজায় উপস্থিত ছিলেন।

বিএনপি নেতাদের মধ্যে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস,জমিরউদ্দিন সরকার,আবদুল্লাহ আল নোমান,জয়নুল আবদীন,ফজলুল হক মিলন প্রমুখ জানাজায় অংশ নেন।

সাদেক হোসেন খোকার লাশ গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা ২৮ মিনিটে রাজধানীর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছে।

খোকার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহকর্মী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু তার মরদেহ গ্রহণ করেন। বিমানবন্দর থেকে খোকার মরদেহ জাতীয় সংসদ ভবনে নেয়া হয়।লাশবাহী গাড়িতে ছিলেন মির্জা আব্বাস।

ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার প্রথম জানাজা জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টার মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়েছে।জানাজায় যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত সর্বস্তরের বাংলাদেশিরা অংশ নিয়েছেন।জানাজা শেষে তাকে গার্ড অব অনার দেয়া হয়।

বাংলাদেশ সময় বুধবার সকালে সাদেক হোসেন খোকার মরদেহ নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেয় তার পরিবার।

সাদেক হোসেন খোকা সোমবার বেলা ১টা ৫০ মিনিটে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মারা যান।ক্যান্সারে আক্রান্ত খোকা প্রায় পাঁচ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাসিত ছিলেন।

সবশেষ ১৮ অক্টোবর নিউইয়র্কের ম্যানহাটনের মেমোরিয়াল স্লোয়ান ক্যাটারিং ক্যান্সার সেন্টারে ভর্তি হন খোকা।গত সোমবার তার শ্বাসনালি থেকে টিউমার অপসারণ করা হয়।নিউইয়র্ক সময় রাত ২টা ৫০ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় সোমবার বেলা ১টা ৫০ মিনিটে) তার মৃত্যু হয়।মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর।

১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালে সাদেক হোসেন খোকা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন একজন গেরিলা যোদ্ধা।১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথম সাদেক হোসেন খোকা বিএনপি থেকে এমপি নির্বাচিত হন।তার দল সরকার গঠন করলে তিনি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব লাভ করেন।পরবর্তী সময়ে ১৯৯৬ ও ২০০১ সালেও তিনি সাংসদ নির্বাচিত হন।পরে তাকে ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী করা হয়।২০০১ সালে তার দল সরকার গঠন করলে তিনি মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব লাভ করেন।২০০২ সালে তিনি অবিভক্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হন।

 

ট্যাগ :

আরো সংবাদ

ফেইসবুকে আমরা



আর্কাইভ
November 2024
M T W T F S S
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031  
আলোচিত খবর

error: কি ব্যাপার মামা !!