বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম এর প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদীর বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)৷গতকাল মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) বিডিনিউজ কার্যালয়ে একটি চিঠি পাঠিয়েছে তারা৷ আগামী ১১ নভেম্বর তাকে দুদক কার্যালয়ে উপস্থিত থাকতে অনুরোধ করা হয়েছে কমিশনের এই চিঠিতে৷
চিঠিতে বলা হয়েছে, তৌফিক ইমরোজ খালিদীর নিজের এবং বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের হিসাবে ‘বিপুল পরিমাণ টাকা স্থানান্তরের মাধ্যমে অবস্থান গোপন’ এবং বিভিন্ন ‘অবৈধ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে জ্ঞাত আয়ের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ সম্পদ’ অর্জনের অভিযোগে তার বক্তব্য জানা প্রয়োজন৷
তবে দুদকের অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে অভিহিত করেছেন খালিদী৷ প্রতিবেদনে তিনি বলেন, আমাদের প্রকাশিত কয়েকটি সংবাদ প্রতিবেদন খুবই শক্তিশালী একটি মহলকে নাখোশ করেছে৷ আর আমার সহকর্মীদের বস্তুনিষ্ঠ ও উদাহরণযোগ্য সাংবাদিকতার মূল্য এখন আমাদের এভাবে দিতে হচ্ছে৷উল্লেখ্য, চলতি বছর অক্টোবরের শুরুতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে ৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছিল নিউ ইয়র্কভিত্তিক একটি কোম্পানির সহযোগী প্রতিষ্ঠান ‘এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশ’৷বিনিয়োগের পরই পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেনের সভাপতিত্বে এক জরুরি কমিশন সভা করে এ বিনিয়োগ আটকানোর সিদ্ধান্ত হয়। এরপর এই বিনিয়োগের উৎস কী, লন্ডন থেকে ৫০ কোটি টাকা কারা, কী উদ্দেশ্যে দিল- তার অনুসন্ধানে নামে গোয়েন্দা বিভাগ।
অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে ওই সভা শেষে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সাইফুর রহমান এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশ এ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড নামক সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানি বা উহার ব্যবস্থাপনাধীন ফান্ড থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে ৫০ কোটি বিনিয়োগ শীর্ষক সংবাদ কমিশনের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। ‘এ সংক্রান্ত সমুদয় তথ্যাদি একদিনের মধ্যে কমিশনে দাখিল করার জন্য উক্ত সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানিকে নির্দেশ প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
কমিশন কর্তৃক এ সংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ তথ্য প্রাপ্তি ও বিশ্লেষণের পূর্বে উল্লেখিত বিনিয়োগ ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত কার্যক্রম হতে বিরত থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে নির্দেশ প্রদানের সিদ্ধান্ত সভায় নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সাইফুর রহমান।
সূত্র বলছে, ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিলেও এখন পর্যন্ত এর বিস্তারিত কোনো তথ্য বিএসইসিকে জমা দেওয়া হয়নি।
এর আগে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের এক সংবাদে বলা হয়, নিউইয়র্ক ভিত্তিক একটি কোম্পানির সহযোগী প্রতিষ্ঠান ‘এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশ’ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে ৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে। বিনিয়োগ করা এ টাকার একটি বড় অংশ ব্যয় হবে ডিজিটাল সংবাদ সেবার সম্প্রসারণ ও উদ্ভাবনে।এ বিনিয়োগের বিষয়ে তৌফিক ইমরোজ খালিদী বলেছিলেন, গত ১৩ বছরের চেষ্টায় সংবাদ সেবার যে ধারা-প্রকৃতি আমরা গড়ে তুলেছি, তাকে নতুন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার রসদ যোগাবে এই বিনিয়োগ।
বিডিনিউজের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, এলআর গ্লোবালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রিয়াজ ইসলাম অক্টোবরের শুরুতে ঢাকায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে চুক্তির আনুষ্ঠানিকতা সারেন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়- রিয়াজ ইসলাম বলেন, আমাদের এই বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রাথমিক কারণ তৌফিক ইমরোজ খালিদী এবং তার গড়ে তোলা ব্র্যান্ড, যার পেছনে রয়েছে আদর্শ, সততা ও কনটেন্টের মান বজায় রাখার ক্ষেত্রে দৃঢ় সঙ্কল্প এবং অত্যন্ত সীমিত পুঁজি নিয়ে পাঠকের আস্থা ধরে রেখে আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা
এদিকে, তৌফিক ইমরোজ খালিদী তিন কোটি টাকা দাবি করেছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। চাঁদা চাওয়ার একটি অডিও টেপ গোয়েন্দাদের হাতে পৌঁছেছে।
সংশ্লিষ্ট কয়েকটি সূত্র বলছে, জানা গেছে, পদ্মা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তার সঙ্গে বিডিনিউজের প্রধান সম্পাদকের কথোপকথনের অডিও টেপ গোয়েন্দাদের কাছে হস্তান্তর করেছেন।
তৌফিক ইমরোজ খালিদী এর আগেও ওই ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছ থেকে দেড় কোটি টাকা নিয়েছিলেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
১৮তম ন্যাম সম্মেলনে যোগদান উপলক্ষে আজরবাইজানে চার দিনের সফর নিয়ে গত মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী একজন সম্পাদককে ইঙ্গিত করে বলেছিলেন, একজন সম্পাদক একজন ব্যাংকের এমডিকে ফোন করে টাকা দাবি করেছেন এবং হুমকি দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী ওই সম্পাদকের নাম বলেননি।
এরপর থেকে কে ওই সম্পাদক তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে রাজনৈতিক এবং সামাজিক অঙ্গনে।