যুবলীগ নেতা থেকে ক্ষমতার জোরে হয়ে উঠেন ক্যাসিনো গুরু। ক্যাসিনো থেকে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা অর্জন করেছেন গত কয়েক বছরে। বিপুল অর্থের জোরে সিনেমা প্রযোজনায় নাম লেখান। গড়ে তুলেন প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান। এর মাধ্যমে যোগাযোগ হয় রূপালি জগতের অনেকের সঙ্গে। সিনেমার নায়িকা করবেন বলে পরিচয় হয় উঠতি অভিনেত্রী শিরিন শিলার সঙ্গে। সিনেমায় কাজ দেয়ার কথা বলে শিলার সঙ্গেও নানা প্রতারণা করেছেন আরমান।
সম্প্রতি ক্যাসিনো কাণ্ডে গ্রেফতার আরমান আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জিজ্ঞাসাবাদেও এসব তথ্য স্বীকার করেছেন। দেশের জাতীয় একটি দৈনিকের এর পক্ষ থেকে অভিনেত্রী শিরিন শিলার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি নিজেও এন্তার অভিযোগ তুলেন। বলেন, আরমান আমাকে কথা দিয়ে কথা রাখেননি। তার ‘আগুন’ সিনেমায় নায়িকা হিসেবে আমাকে রাখার কথা ছিল। তখন আমি যুক্তরাষ্ট্রে একটি অনুষ্ঠানে ছিলাম। দেশে এসে দেখি তিনি আমাকে বাদ দিয়ে সাকিব খানের সঙ্গে জাহারা মিতুকে নায়িকা হিসেবে নিয়েছেন। বড় করে সিনেমার মহরত অনুষ্ঠান করলেও আমাকে রাখা হয়নি। তার সঙ্গে আমার যোগাযোগ ছয়মাস ধরে। আরমান আমাকে শর্ত দিয়েছিল, তাদের প্রোডাকশন হাউসের অধীনে সিনেমায় অভিনয় করলে অন্য কোনো পরিচালকের সঙ্গে কাজ করা যাবে না।
কিন্তু আমি তো পারবো না বাইরে কোনো প্রোডাকশনে কাজ না করে থাকতে। আমি তার শর্তে রাজি হইনি। কারণ আজকে আমি শিরিন শিলা হয়েছি ইন্ডাষ্ট্রিতে সকল প্রযোজক-পরিচালকের সঙ্গে মিলে মিশে কাজ করে। এটাই আমি পছন্দ করি। একজনের হাত ধরে কাজ করে বসে থাকলে আমার চলবে না। সবার সঙ্গে কাজ করতে হবে। আমি নাটক থেকে সিনেমায় এসেছি। ছোট-বড় সকল পরিচালকের সঙ্গে আমার কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে। যারা আমাকে শিরিন শিলা বানিয়েছে তাদের সবার সঙ্গে আমার মিলে মিশে কাজ করতে হবে। কাজেই শুধুমাত্র একজন পরিচালক বা প্রযোজকের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে কাজ করার নীতিতে আমি বিশ্বাস করি না।
তিনি বলেন, আমি একজন প্রযোজক আরমানকে চিনি। ক্যাসিনো আরমানকে নয়। এই ঘটনার আগ পর্যন্ত পরিচালক আরমানের ক্যাসিনো কাণ্ডের বিষয়ে আমার জানা ছিল না। পরে আরও অবাক হই যখন শুনি আমার ওপর নজরদারির মাধ্যমে আরমানের খোঁজ পেয়েছে র্যাব এমন বিষয় উল্লেখ করে ইতিমধ্যে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ করা হয়েছে। আরমানের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে। কথা হয়েছে। কিন্তু তার সঙ্গে আমার এখন পর্যন্ত কোনো কাজ করা হয়নি। তবে আলোচনা হয়েছিল।
তার সঙ্গে আমার প্রথম কথা হয় ‘মনের মতো মানুষ পাইলাম না’ সিনেমা নিয়ে। পরবর্তীতে সেই সিনেমায় সাকিব-বুবলিকে দিয়ে অভিনয় করানো হয়। এরপর ‘আগুন’ সিনেমা নিয়ে কথা হয় সেটাতেও আমাকে রাখা হয়নি।
ইতোমধ্যে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে সকল গণমাধ্যমে আমার বিরুদ্ধে এমন বানোয়াট ও ভুয়া নিউজ করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিব। কিন্তু আমাদের চালচ্চিত্র সমিতির অনুরোধে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। দীর্ঘদিন ধরেই সুনামের সঙ্গে কাজ করছি। যে কারণে অনেক মানুষের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। ওয়াজেদ আলী সুমন পরিচালিত ‘হিটম্যান’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে আমি দর্শকদের ব্যাপক সারা পেয়েছি। দর্শক আমাকে ভালোভাবে গ্রহণ করেছে। এনামুল হক আরমানের চলচ্চিত্র
নির্মাণে জন্য ‘দেশ মাল্টিমিডিয়া’ নামে চলচ্চিত্র প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। গত ঈদে তার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে ‘মনের মতো মানুষ পাইলাম না’ সিনেমাটি মুক্তি পায়। যেখানে আমার অভিনয় করার কথা ছিল। এতে শাকিব-বুবলি অভিনয় করেন। এছাড়াও নির্মানাধীন আছে ‘আগুন’ শিরোনামের একটি ছবি। এতে অভিনয় করছেন শাকিব খান ও জাহারা মিতু। ছবিটি নির্মাণ করছেন বদিউল আলম খোকন। এসব ছবিতে আমাকে কেনো নেয়া হল না সেটা আমার কাছে এখনো অনেকটা অস্পষ্ট।
আরমানের সঙ্গে আপনার ঘনিষ্টতা ছিল এমন আলোচনা আছে বাইরে এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে শিরিন শিলা বলেন, এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কেনো চুড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন বের হচ্ছে না। আমি যদি আরমানের সঙ্গে কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকি তাহলে আমাকেও প্রশাসনের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক। সেটা কেনো করা হচ্ছে না।
শুধু শুধু আমার সম্মান কেনো নষ্ট করা হচ্ছে। একজন প্রযোজক হিসেবে তার সঙ্গে আমার সূসম্পর্ক থাকবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তার আয়ের উৎস কি? সে সৎ পথে না কি অসৎ পথে অর্থ উপার্জন করছে এগুলো তো আমার জানার কথা না। তিনি বলেন, আমি যদি আরমানের সঙ্গে কোনো ক্রাইমে যুক্ত থাকতাম তাহলে আমি এখন লুকিয়ে থাকতাম। আমার মধ্যে ভীতি কাজ করতো।
শিরিন শিলার গ্রামের বাড়ি রূপগঞ্জে। ২০১৪ সালে ‘হিটম্যান’ নামের সিনেমার নায়িকা ছিলেন। সিদ্ধেশ্বরী ডিগ্রি কলেজে সমাজকর্মে মাস্টার্স করছেন শিলা।