বান্দরবানে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি,তৃতীয় দিনের মতো সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন


বান্দরবান অফিস প্রকাশের সময় :১১ জুলাই, ২০১৯ ৬:১৬ : অপরাহ্ণ 586 Views

গত শনিবার (৬ জুলাই) থেকে ছয় দিনের টানা বৃষ্টিতে বান্দরবানে বন্যা দেখা দিয়েছে।নিম্নাঞ্চলের প্রায় দুই হাজারেরও বেশি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।এছাড়া নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি শঙ্কা দেখা দিয়েছে পাহাড় ধসের।প্লাবিত এলাকাসহ পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসরত জনসাধারণ নিরাপদ স্থানে সরে যেতে শুরু করেছে।একনাগাড়ে বর্ষণ অব্যাহত থাকায় ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে সাঙ্গু ও মাতামুহুরী নদীর পানি বিপদসীমার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে।সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই দুই নদীতে পানির পরিমাণ আশংকাজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।একটানা বর্ষণ অব্যাহত থাকায় নদীর পানি বিভিন্ন ঝিরিছড়া দিয়ে প্রবেশ করে বান্দরবান জেলা শহরের বাসস্টেশন,শেরে-বাংলা-নগর,আর্মি পাড়া,ইসলামপুর,অফিসার্স ক্লাব,বনানী সমীল,সাঙ্গু নদীর তীরবর্তী এলাকাসহ বেশকয়েকটি জনবহুল বশতি প্লাবিত হয়েছে।সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে নতুন নতুন জনবহুল এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।এসব এলাকার লোকজন সরকারের খুলে দেয়া বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে।টানা বৃষ্টিতে বান্দরবান-কেরানীহাট সড়কের বাজালিয়ার অন্তর্গত বড়দুয়ারা-কলঘর এলাকার রাস্তা তলিয়ে যাওয়ায় এবং বান্দরবান-রাঙ্গামাটি সড়কের বেশ কয়েকটি স্থানে সড়ক ধসে যাওয়ায় টানা তৃতীয় দিনের মতো বান্দরবানের সঙ্গে সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।গন্তব্যে পৌঁছতে বাড়তি ভাড়া দিয়ে নৌকা ও ভ্যানে করে প্লাবিত রাস্তা পার হতে হচ্ছে লোকজনকে।ফলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে অফিসগামী,স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ সব শ্রেণিপেশার মানুষকে।বৃষ্টিতে ইতোমধ্যে বান্দরবান জেলায় বেশ কয়েকটি পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে।তবে আশার খবর হলো এখনো পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।এইভাবে বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে আরও পাহাড় ধসের আশঙ্কা করা হচ্ছে।পাহাড় ধসের ঝুঁকি থাকায় প্রশাসনের জোরালো হস্তক্ষেপের কারণে সহস্রাধিক পরিবারকে ইতিমধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রে আনা হয়েছে। এবিষয়ে বান্দরবান পৌর মেয়র মোঃইসলাম বেবী সিএইচটি টাইমস ডটকমকে বলেন,বন্যার্তদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র খুলে দেয়া হয়েছে।তাদের জন্য শুকনা খাবার ও বিশুদ্ধ পানিসহ পর্যাপ্ত ত্রাণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাসকারীদের সরিয়ে নিতে পৌর প্রশাসনের উদ্যোগে প্রতিদিনই অভিযান চালানো হচ্ছে।মাইকিং করে তাদেরকে নিরাপদ আশ্রয় শিবিরে আসার জন্য আহবান করা হচ্ছে।তিনি আরও বলেন,পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী মাননীয় সাংসদ বীর বাহাদুর উশৈসিং এম,পি বান্দরবান জেলার সামগ্রিক বন্যা পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রতি মুহুর্তে খোঁজ খবর নিচ্ছেন।আশ্রয় কেন্দ্রে আগত লোকজনের থাকা,খাওয়া ও স্বাস্থ্যগত বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে বলেছেন।এসময় পার্বত্য মন্ত্রী বন্যা দুর্গতদের জীবনযাত্রার মান স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্য নিয়ে সার্বক্ষণিক দুর্গতদের পাশে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা প্রদান করেছেন।এদিকে বান্দরবানের জেলা প্রশাসক মোঃদাউদুল ইসলাম জানান,চলতি বর্ষা মৌসুমে বন্যা ও পাহাড় ধসের মতো প্রাকৃতিক দূর্যোগ মোকাবেলায় ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে বান্দরবান জেলা প্রশাসন।পর্যাপ্ত পরিমাণে ত্রাণ মজুদ রয়েছে।সমগ্র বান্দরবান জেলায় ১৩১ টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে।এছাড়াও জরুরী নিয়ন্ত্রন কক্ষের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক দুর্যোগ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।জেলা শহর এবং উপজেলাগুলো তে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করে জনসাধারনকে উদ্ভুদ্ধ করা হচ্ছে নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রে চলে আসার জন্য।উপজেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা যাতে সার্বক্ষণিক বন্যা পরিস্থিতি নজরে রাখে সেবিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে বিশেষ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।এসময় তিনি আরও জানান,আশাকরি পরিস্থিতি মোকাবেলা কঠিন হবেনা।পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের সরিয়ে নিতে অভিযান পরিচালনা অব্যাহত রয়েছে।যাঁরা ঝুঁকিপূর্ণ জায়গা থেকে সরে আসবেনা তাদের বিরুদ্ধে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইনে প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।জনগণ সচেতন থাকলে পাহাড় ধসে প্রানহানিসহ জানমালের ক্ষয়ক্ষতি অনেকটা কমানো যাবে।

ট্যাগ :

আরো সংবাদ

ফেইসবুকে আমরা



আর্কাইভ
November 2024
M T W T F S S
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031  
আলোচিত খবর

error: কি ব্যাপার মামা !!