রেফার করা রোগী‌কে অ্যাম্বু‌লে‌ন্সে নি‌য়ে ড্রাইভিং শিখ‌লেন চিকিৎসক!


সিএইচটি টাইমস অনলাইন প্রকাশের সময় :২৭ জুন, ২০১৯ ৩:০৭ : পূর্বাহ্ণ 568 Views

গত শনিবার (২২জুন) শ্বাসকষ্ট নিয়ে বান্দরবানের আলীকদম উপ‌জেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে যান আবদুল মোতা‌লেব।রোগীর অবস্থা গুরুতর দে‌খে উন্নত ‌চি‌কিৎসার জন্য র‌বিবার (২৩ জুন) তাকে চট্টগ্রাম মে‌ডি‌ক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন সেখা‌নকার কর্মরত চি‌কিৎসক। আবদুল মোতা‌লেবকে অ্যাম্বু‌লে‌ন্সে ক‌রে চট্টগ্রা‌মে নি‌য়ে যাওয়ার সময় চালক‌কে পা‌শের সি‌টে ব‌সি‌য়ে তার আসনে ব‌সেন আলীকদম স্বাস্থ্য ক‌ম‌প্লে‌ক্সের মেডিক্যাল অফিসার ডা. শ‌হিদুর রহমান। অভিযোগ রয়েছে, এসময় ড্রাই‌ভিং শিখ‌তে শিখ‌তে রেফার করা গুরুতর রোগী নি‌য়ে চট্টগ্রা‌মের উদ্দেশে রওনা হন তি‌নি।

মোতালেব ও তার স্বজনরা জানান,চট্টগ্রামে যাওয়ার পথে ডা. শ‌হিদুর রহমানের অনিয়‌ন্ত্রিত গাড়ি চালা‌নো,ক‌য়েকবার দুর্ঘটনার হাত থে‌কে রেহাই পাওয়া,প‌থে প‌থে গাড়ির স্টার্ট বন্ধ হয়ে যাওয়াসহ নানা‌বিধ সমস্যায় মাঝ পথে গাড়ি থেকে নেমে পড়তে হয়েছে তাদের।তারা ক‌য়েকবার চালক‌কে গাড়ি চালা‌তে দেওয়ার জন্য শ‌হিদুর রহমান‌কে অনু‌রোধ করেন।কিন্তু,তিনি তা‌দের অনু‌রোধ‌ উপেক্ষা করে গাড়ি চালা‌তে থাকেন।এক পর্যায়ে ভয় পে‌য়ে যান রোগীসহ তার স্বজনরা।তারা বাধ্য হয়ে প‌টিয়ার শা‌ন্তির হাটে গি‌য়ে রাস্তায় নেমে প‌ড়েন।প‌রে চট্টগ্রাম মে‌ডিক্যা‌লে না গি‌য়ে তারা সেখা‌নেই এক ডাক্তা‌রের শরণাপন্ন হন।

সেদিন ওই অ্যাম্বু‌লে‌ন্সে মোতালেবের সঙ্গে থাকা তার আত্মীয় পার‌ভেজ জানান,রোগীকে (মোতালেব) চট্টগ্রাম মে‌ডিক্যা‌লে রেফার করার পর অ্যাম্বু‌লে‌ন্সে চালক থাকার পরও ডা. শহিদুর রহমান নি‌জেই গাড়ি চালা‌নো শুরু ক‌রেন। গাড়ি চালা‌নোর সময় তি‌নি গ‌তি‌রোধক‌ে গিয়ে বার বার স্টার্ট বন্ধ করে দেন। এছাড়া, রাস্তার ভাঙাচোরা জায়গায় অ্যাম্বু‌লে‌ন্সটি তিনি এমনভাবে চালাচ্ছিলেন যেন টে‌নে-হেঁচড়ে নি‌য়ে যা‌চ্ছি‌লেন। প‌থিম‌ধ্যে ক‌য়েক‌বার মারাত্মক দুর্ঘটনার হাত থে‌কে আমরা ভাগ্যের জো‌রে রেহাই পে‌য়ে‌ছি। তিনি বলেন, ‘এসময় রো‌গীর অবস্থা আরও খারাপ হ‌য়ে যা‌চ্ছিল। আমরা ভয় পেয়ে যাই। বাধ্য হয়ে প‌টিয়ার শা‌ন্তির হাটে গিয়ে গাড়ি থে‌কে নে‌মে যাই এবং সেখা‌নকার একজন ডাক্তা‌রের শরণাপন্ন হয়ে রোগীর চি‌কিৎসা ক‌রাই।’

এ বিষয়ে কথা হয় রোগী আবদুল মোতা‌লে‌বের সঙ্গে। তি‌নি বলেন, ‘ডা. শ‌হিদুর রহমান‌ অ্যাম্বুলেন্সটি চালাচ্ছিলেন। বার বার গাড়ির স্টার্ট বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। কয়েকবার দুর্ঘটনার কবলে পড়তে গিয়েও বেঁচে গি‌য়ে‌ছি আমি ও আমার স্বজনরা। গাড়িটি চাল‌ককে চালা‌তে দেওয়ার জন্য ডা. শহিদুর রহমানকে অনু‌রোধ করায় তিনি সবাইকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ক‌রেন। এ অবস্থায় আমার শ্বাসকষ্ট আরও বেড়ে যায়। তখন আমরা অ্যাম্বু‌লেন্স থে‌কে নে‌মে যে‌তে বাধ্য হই।’

আলীকদ‌মের বা‌সিন্দা মো. জিয়া ব‌লেন, ‘রোগী‌কে অ্যাম্বু‌লে‌ন্সে করে নেওয়ার সময় ডাক্তার নি‌জেই গাড়ি চা‌লি‌য়ে ড্রাইভিং শিখ‌তে শিখ‌তে মে‌ডিক্যা‌লে যাচ্ছিলেন, এমন ঘটনা আগে কখনও শু‌নি‌নি। বিষয়‌টি প্রশাস‌নের খ‌তি‌য়ে দেখা উ‌চিত।’

আবদুল মোতালেবের বড় মেয়ে রেহানা ব‌লেন, ‘আমার বাবা শ‌নিবার শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। এজন্য তিনি আলীকদম স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তার দেখা‌তে যান। শারীরিক অবস্থা খারাপ হয়ে যাওয়ায় র‌বিবার (২৩ জুন) বাবা‌কে চট্টগ্রা‌মে রেফার ক‌রা হয়। ওইদিন দুপু‌র দু’টায় আমরা বাবার সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্সে ক‌রে আলীকদম থে‌কে চট্টগ্রা‌মের উদ্দেশে রওনা হই। এসময় চাল‌ককে পাশে বসিয়ে তার আসনে বসেন আলীকদম উপজেলা স্বাস্থ্য কম‌প্লে‌ক্সের ডা. শহিদুর রহমান। তি‌নি অ্যাম্বুলেন্সটি চালাচ্ছিলেন। কিন্তু, ভালো চালাতে পারেন না। মাত্র শিখছেন। পথে একাধিকবার গাড়ির স্টার্ট বন্ধ ক‌রে ফে‌লেন। এসময়, বার বার গাড়িটি দুর্ঘটনায় পড়ার অবস্থা হচ্ছিল। বড় বড় গ‌র্তের ভেতর দিয়ে জো‌রে গাড়ি চালানোর কার‌ণে রোগীর অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। তখন আমরা ভয় পেয়ে যাই। সন্ধ্যার দি‌কে প‌টিয়ার শা‌ন্তির হাট এলাকায় নে‌মে পড়ি এবং সেখা‌নেই রোগীকে নিয়ে একজন প‌রি‌চিত ডাক্তা‌রের শরণাপন্ন হই।’

অ্যাম্বু‌লেন্স চালা‌নোর বিষয়ে ডা. শহিদুর রহমান জানান,তি‌নি গাড়ি চালা‌তে পা‌রেন।রোগী এবং তার স্বজনদের অভিযোগ অস্বীকার করে তি‌নি ব‌লেন, ‘গাড়ি চালা‌নোর সময় কারও কোনও সমস্যা হয়‌নি। অযথা রোগীর স্বজনরা আমার সঙ্গে ঝগড়া ক‌রে‌ছেন।’

অ্যাম্বুলেন্সের চালক থাকতে কেন আপনি চা‌লি‌য়ে‌ছেন,এ প্রশ্নের জবাবে ডা. শহিদুর রহমান ব‌লেন, ‘গাড়ি যে কেউই চালা‌তে পা‌রে। এতে কা‌রও কোনও সমস্যা থাকার কথা নয়।’

এ বিষ‌য়ে জানতে আলীকদম স্বাস্থ্য কম‌প্লে‌ক্সের অ্যাম্বু‌লেন্সচালক মিজানুর রহমানের মোবাইলে একা‌ধিকবার কল দি‌য়েও সং‌যোগ পাওয়া যায়‌নি।

বান্দরবানের সিভিল সার্জন ডা. অংশৈ প্রু মারমা বলেন, ‘আলীকদমের মেডিক্যাল অফিসার রোগী নিয়ে অ্যাম্বুলেন্স চালিয়েছেন বলে শুনেছি।তদন্ত সা‌পে‌ক্ষে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হ‌বে।’

 

ট্যাগ :

আরো সংবাদ

ফেইসবুকে আমরা



আর্কাইভ
November 2024
M T W T F S S
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031  
আলোচিত খবর

error: কি ব্যাপার মামা !!