স্পোর্টস ডেস্কঃ-নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আগে ৮ জয় আছে বাংলাদেশের। কিন্তু তার প্রতিটি বাংলাদেশের মাটিতেই।বিদেশের মাটিতে এতোদিন কিউইদের বিপক্ষে কোনো জয় ছিল না।শেষ চার ম্যাচেও হারতে হয়েছে।এই আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে ত্রিদেশীয় সিরিজের প্রথম দেখাতেও একই হতাশা।কিন্তু বুধবার ক্লনটার্ফ ক্রিকেট ক্লাব মাঠে মাশরাফি বিন মুর্তজার বাংলাদেশ গড়ল নতুন ইতিহাস।দারুণ লড়াইয়ের এক ম্যাচে বিদেশের মাটিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ইতিহাস গড়া প্রথম জয় তুলে নিয়েছে টাইগাররা।দারুণ জয়টা ৫ উইকেটের।সেই সাথে আয়ারল্যান্ড সফর তারা শেষ করেছে জয় দিয়ে।এই সিরিজে আগেই চ্যাম্পিয়নশিপ নিশ্চিত করেছে কিউইরা।টাইগাররা সেখানে রানার্স আপ।কিন্তু এই প্রতিপক্ষকে হারের তিক্ততা দিয়ে ‘সব ভালো তার শেষ ভালো যার’ প্রবাদে হাসিমাখা মুখে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির জন্য ইংল্যান্ডের পথ ধরতে পারল টাইগাররা।আইসিসির নতুন র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের ৭ থেকে ৬ এ চলে আসলো এই জয়ে।শ্রীলঙ্কা পড়ল পেছনে।এই ম্যাচে টস হেরে দারুণ শুরু ছিল নিউজিল্যান্ডের।তারা বড় স্কোর গড়ার সম্ভাবনা জাগিয়ে বাংলাদেশি বোলারদের সামনে লড়াইয়ে তাল মেলাতে পারেনি।এক পর্যায়ে তাই দিশেহারা হয়ে ৮ উইকেটে ২৭০ রানে থেমেছে।আবার এক সময় ১৭ রানের মধ্যে ৩ উইকেট হারিয়ে ২৭১ রানের লক্ষ্য জয়ের পথে চাপেই পড়েছিল বাংলাদেশ। বিপদ তখন।কিন্তু মুশফিকুর রহীম দারুণ দৃঢ়তার পরিচয় দিলেন ব্যাট হাতে।শেষটায় মাহমুদউল্লাহও চাপ জয় করলেন।৩ উইকেটে ২০৮ ছিল কিউইদের।পরে ছন্দ হারায়।কৃতিত্ব টাইগার বোলারদের।১৯৯ রানে ৫ উইকেট হারানোর পরও জয়ের লক্ষ্য ঠিক রেখেই তা জয় করেছে টাইগাররা।কৃতিত্ব ব্যাটসম্যানদের।আর কোনো উইকেট না হারিয়েই অসাধারণ জয়ের দেখা পেয়েছে।৪৮.২ ওভারে ৫ উইকেটেই ২৭১ রান তুলে আনন্দে মেতেছে টাইগাররা। মাহমুদউল্লাহ দারুণ এক বাউন্ডারিতে ফিনিশিং দিয়েছেন।৪৫ বলে ৩ চার ও ১ ছক্কায় মুশফিক অপরাজিত ৪৫ রানে।আর মাহমুদউল্লাহ ৩৬ বলে ৬ চার ও ১ ছক্কায় ৪৬ রানে অপরাজিত।মাশরাফি-সাকিব-নাসিররা জয়ের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন বল হাতে।এরপর তামিম ইকবাল ইনিংসের প্রথম বলে ছক্কা হাঁকিয়ে বল হারালেন।সৌম্য সরকার আবার ওই ওভারেই গোল্ডেন ডাক মেরে ফিরলেন।কিন্তু দ্বিতীয় উইকেটে নিউজিল্যান্ডের ১৩৩ রানের জবাবে তামিম-সাব্বির রহমান মিলে উপহার দিলেন ২৬.৩ ওভারে ১৩৬ রানের জুটি।সেঞ্চুরি কার হবে?এই যখন ভাবনা তখন নিজেদের ভুলে ১ উইকেটে ১৪৩ থেকে ১৬০ রানে ৪ উইকেট হারানো দল বাংলাদেশ!তামিম তুলে মেরে আউট ৬৫ রানে।৫ রান পর সাব্বির রহমান অলস এক রান আউটের শিকার ঠিক ব্যক্তিগত ৬৫ রানেই।মোসাদ্দেক হোসেন (১০) সহজে এলবিডাব্লিউর শিকার। দেখতে না দেখতে দৃশ্যপট পাল্টে যায়।পাল্টা আঘাতের প্রেরণায় জেগে ওঠে নিউজিল্যান্ড।ক্রিজে তখন একেবারে নতুন কিন্তু অভিজ্ঞ দুই ব্যাটসম্যান মুশফিক ও সাকিব আল হাসান।ধস সামলাতে নেমে ম্যাট হেনরিকে ওভার দ্য টপে ছক্কা হাঁকালেন মুশফিক।পণ ছিল তার জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ার।সাকিব ৮.৪ ওভারে তার সাথে ৩৯ রানের জুটি গড়ে ফিরলেন।কিন্তু কঠিন সময়ে ১০ ওভারে ৭.২০ গড়ে রান তুলে মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহ ৭২ রানের অবিচ্ছিন্ন ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে প্রায় নিশ্চিন্ত এক জয় এনে দিলেন শেষে।যে জয় মনে রাখার অনেক দিন। বিপদে দারুণ খেলে জয় আনা মুশফিকই তো ম্যাচের সেরা!এর আগে ক্লনটার্ফ ক্রিকেট ক্লাব মাঠে মাশরাফি বিন মুর্তজা ব্যাট করতে পাঠিয়েছিলেন নিউজিল্যান্ডকে।ত্রিদেশীয় সিরিজের শেষ ম্যাচ,আনুষ্ঠানিকতার ম্যাচ।নিউজিল্যান্ড যেখানে চ্যাম্পিয়নশিপ নিশ্চিত করেছে আগেই।বাংলাদেশ রানার্স আপ। আর এই ম্যাচের চতুর্থ বলেই আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান টম ল্যাথামের দেওয়া সহজ ক্যাচ মিস করলেন নাসির হোসেন।মাশরাফি ছিলেন বোলার।চতুর্থ ওভারে কাটার মাস্টার মোস্তাফিজুর রহমান তুলে নেন অন্য ওপেনার লুক রনকির (২) উইকেট।কিন্তু এরপর ২৪.৩ ওভারের হতাশা।একটাও উইকেট মেলে না।সেঞ্চুরির দিকে এগিয়ে যান ল্যাথাম।নাসির প্রায়শ্চিত্ত করেন তার পর।পর পর দুই ওভারে তিনি তুলে নেন নেল ব্রুম (৬৩) ও ল্যাথামের (৮৪) উইকেট।দ্বিতীয় উইকেটে ১৩৩ রানের জুটি গড়া ব্রুম ও ল্যাথামের বিদায়ের পর চাপে পড়ে নিউজিল্যান্ড।টাইগার বোলাররা ম্যাচে ফিরতে থাকেন।রানের গতি কমতে থাকে।১ উইকেটে ১৫৬ রানের নিউজিল্যান্ড হয় ১৬৭ রানে ৩ উইকেট হারানো দল।৩৯ থেকে ৪৪তম ওভারে সাকিব ও মাশরাফি খেলাটাকে নিজেদের দিকে ঘুরিয়ে নেন।এই সময়ের মধ্যে ২টি করে উইকেট নেন তারা।২২৬ রানে ৭ উইকেট হারায় নিউজিল্যান্ড।কোরি অ্যান্ডারসন,কলিন মুনরোর মতো ব্যাটসম্যানরাও তেমন কিছু করতে না পেরে ফেরেন।তাদের দলের বড় স্কোর গড়ার আশা ওখানেই শেষ।তারপরও অভিজ্ঞ রস টেলর (অপরাজিত ৬০) এক প্রান্ত ধরে রেখে খেলে যান।তার ব্যাটে ভর করেই কিউইদের ইনিংসের শেষটা এগিয়েছে। লড়ার মতো রান মিলেছে তাদের।বাংলাদেশি ফিল্ডাররা কয়েকটি সুযোগ মিস করেছেন।তারপরও বোলাররা যেভাবে লড়েছেন তাতে ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছে দল।ব্যাটসম্যানরা পেয়েছেন জয় করার মতো একটি টার্গেট।কিন্তু সেটাকে লেজেগোবরে করে হারেনি টাইগাররা।বীরের মতো জয় তুলে নিয়ে মাথা উঁচু করেই মাঠ ছেড়েছে বাঘের মতোই।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নিউজিল্যান্ড:-২৭০/৮ (ল্যাথাম ৮৪, ব্রুম ৬৩, টেলর ৬০*, অ্যান্ডারসন ২৪, প্যাটেল ৭*, নিশাম ৬, হেনরি ৫, রনকি ২, মুনরো ১, সান্টনার ০; সাকিব ২/৪১, নাসির ২/৪৭, মাশরাফি ২/৫২, মোস্তাফিজ ১/৪৬, রুবেল ১/৫৬, মোসাদ্দেক ০/১৪)।
বাংলাদেশ:-৪৮.২ ওভারে ২৭১/৫ (তামিম ৬৫, সৌম্য ০, সাব্বির ৬৫, মোসাদ্দেক ১০, মুশফিক অপরাজিত ৪৫, সাকিব ১৯, মাহমুদউল্লাহ অপরাজিত ৪৬। প্যাটেল ৫৫/২, স্যান্টনার ৫৩/১।
ফল:-বাংলাদেশ ৫ উইকেটে জয়ী।