কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরের অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ হাতে রাখতে সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে ১৪টি রোহিঙ্গা সংগঠন। সংগঠনগুলো মূলত সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবেই চিহ্নিত। মূলত ইয়াবা, মানব পাচার ও হাটবাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে কক্সবাজার রোহিঙ্গা শিবিরের ওই সংগঠনগুলো হামলা, সংঘর্ষের ঘটনা ঘটাচ্ছে। চলছে অস্ত্রের মহড়াও। পরিসংখ্যান বলছে, গত সাড়ে চার মাসে খুন হয়েছে ৩২ রোহিঙ্গা। অপহরণ, ধর্ষণসহ নানা অপরাধও বাড়ছে প্রতিদিন। রোহিঙ্গাদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে রাজনৈতিক ইন্ধন ও প্রশ্রয়ের বিষয়টিও উঠে এসেছে।
বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বলছে, মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন বিলম্বিত ও ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করতে পরিকল্পিতভাবে শিবিরগুলো অস্থিতিশীল করে তোলা হচ্ছে। কিছু সুবিধাবাদী গোষ্ঠী চক্রান্ত করে রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করে স্বার্থ উদ্ধারে কাজ করছে।
জেলা পুলিশের তথ্য বলছে, টেকনাফ ও উখিয়ার বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে রোহিঙ্গাদের ১৪টি দল রয়েছে, যারা শিবিরের অভ্যন্তরে অপরিকল্পিতভাবে দোকানপাট ও মাদক বিক্রির আখড়া তৈরি, মানব পাচার, অপহরণের পর মুক্তিপণ আদায়, ডাকাতি ও মাদকের টাকায় আগ্নেয়াস্ত্র সংগ্রহসহ নানা অপরাধ কর্ম করছে।
পুলিশসহ স্থানীয় একাধিক সূত্রমতে, টেকনাফ ও উখিয়ার শিবিরে সাতটি করে সন্ত্রাসী বাহিনী আছে। এরমধ্যে টেকনাফের আবদুল হাকিম বাহিনী বেশি তৎপর। এই বাহিনীর সদস্যরা মুক্তিপণ আদায়ের জন্য যখন-তখন লোকজনকে অপহরণ করে। মুক্তিপণ না পেলে হত্যা করে লাশ গুম করে। ইয়াবা, মানব পাচারে যুক্ত থাকার পাশাপাশি এ বাহিনীর সদস্যরা রোহিঙ্গা নারীদের তুলে নিয়ে ধর্ষণের ঘটনাও ঘটায়।
পুলিশের তথ্যমতে, টেকনাফের বিভিন্ন শিবিরে আরও ছয়টি বাহিনী তৎপর রয়েছে। এগুলো হচ্ছে ছাদেক, হাসান, নুরুল আলম, হামিদ, নুর মোহাম্মদ ও গিয়াস বাহিনী। প্রতিটি দলের সদস্য ১২-২০ জন। ইতিমধ্যে এসব বাহিনীর ছয়জন খুন হয়েছেন। অন্য সদস্যরা আত্মগোপন করায় আপাতত বাহিনীর তৎপরতা শিবিরে নেই।
পুলিশের তথ্যমতে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ১৭ মে পর্যন্ত সাড়ে চার মাসে রোহিঙ্গাদের অভ্যন্তরীণ বিরোধ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন ৩২ জন রোহিঙ্গা। এছাড়া ক্যাম্পগুলোতে বাড়ছে নারী নির্যাতন, নারী ধর্ষণ, অপহরণসহ নানাবিধ সামাজিক অপরাধ।
‘কক্সবাজার বাঁচাও’ আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক আয়াছুর রহমান বলেন, রোহিঙ্গারা নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। তাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করা না গেলে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে। বর্তমানে উখিয়া-টেকনাফের ৩৪টি আশ্রয় শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১১ লাখ ১৮ হাজার ৯১৩ জন।