অশান্ত হয়ে উঠছে পার্বত্যাঞ্চল,খুনোখুনিতে ব্যবহার হচ্ছে অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র


নিউজ ডেস্ক প্রকাশের সময় :২৮ মার্চ, ২০১৯ ১২:৪৭ : অপরাহ্ণ 676 Views

পার্বত্যাঞ্চলে খুনোখুনিতে ব্যবহৃত হচ্ছে অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র। এসএমজি, একে-৪৭ রাইফেল, এম-১৬ ও এম-৪ এর মতো অস্ত্র ব্যবহার করছে পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা। স্থানীয় সূত্র ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলেছে, বিবদমান প্রতিটি সশস্ত্র গ্রুপের কাছেই রয়েছে ভারী আগ্নেয়াস্ত্র। গত ১৮ মার্চ রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়িতে নির্বাচনী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর যে আক্রমণ হয়েছে, সেখানেও ভারী অস্ত্র ব্যবহার হয়েছে।ফলে অশান্ত হয়ে উঠছে পার্বত্যাঞ্চল।একটি সূত্র বলেছে,১৮ মার্চের আক্রমণস্থল থেকে এসএমজি ও একে-৪৭ রাইফেলের গুলির খোসা উদ্ধার হয়েছে।সেখান থেকে বিপুল ব্যবহৃত গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়। সন্ত্রাসীরা ওই অস্ত্র ব্যবহার করেছে সেখানে।১৮ মার্চ সন্ধ্যায় ভোট গণনা শেষে বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক বাঘাইহাট থেকে দীঘিনালা ফেরার পথে ৯ কিলোমিটার এলাকায় ব্রাশফায়ারে নিহত হন একজন প্রিজাইডিং অফিসারসহ মোট সাতজন। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরো একজন মারা যান।ঘটনায় আরো ১৬ জন গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি আছেন।স্থানীয় সূত্র জানায়,বাঘাইছড়ি সাজেকের কংলাক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে ভোট গননা শেষে ওই কেন্দ্রে দায়িত্বরতরা ভোট বাক্স নিয়ে উপজেলা পরিষদে ফিরছিলেন।এ সময় নির্বাচনী কাজে দায়িত্বরতদের বহনকারী চারটি গাড়ি ছিল।প্রথম গাড়িতে বিজিবি সদস্যরা ছিলেন ওই গাড়িগুলোকে নিরাপদে নেয়ার জন্য।দুর্বৃত্তরা পেছনের গাড়িটিতে হামলা চালায়।এতে হতাহতের ঘটনা ঘটে।তদন্ত কমিটির এক সদস্য বলেছেন,এই ঘটনায় ভারী অস্ত্র ব্যবহৃত হয়েছে।তদন্ত কমিটির প্রধান দীপক চক্রবর্তী গতকাল সাংবাদিকদের বলেছেন,ঘটনাটি ছিল একেবারেই পরিকল্পিত।যতদূর ধারণা,আগে থেকেই ভারী অস্ত্র নিয়ে ওঁৎ পেতে প্রস্তুত ছিল হামলাকারীরা।একটি সূত্র বলেছে,ঘটনাস্থল থেকে এসএমজি ও একে-৪৭ রাইফেলের গুলি উদ্ধার করা হয়েছে।তবে রাঙ্গামাটির এসপি নয়া দিগন্তকে বলেন,ব্যালাস্টিক পরীক্ষা ছাড়া বলা যাবে না ওগুলো কোন আগ্নেয়াস্ত্রের গুলি।তিনি বলেন,তিনি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন।আলামত উদ্ধারের সময় তিনিও ছিলেন।তবে পরীক্ষা ছাড়া বলা ঠিক হবে না ওগুলো কিসের গুলি।তিনি বলেন,পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসছে।গত বছর পাহাড়ি অঞ্চলে সশস্ত্র গ্রুপগুলোর মধ্যে হানাহানিতে অন্তত অর্ধশত নিহত হয়েছে।এর মধ্যে বেশকিছু চাঞ্চল্যকর খুনের ঘটনা ঘটেছে।গত বছরের ১৯ আগস্ট খাগড়াছড়ি জেলা সদরের স্বনির্ভর বাজার এলাকায় ইউপিডিএফ সমর্থিত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ পিসিপির সভাপতিসহ নিহত হয় সাতজন।নিহতরা হলেনÑ পিসিপির জেলা শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তপন চাকমা,সহসাধারণ সম্পাদক এলটন চাকমা, পলাশ চাকমা,রূপক চাকমা,বরুণ চাকমা,জীতায়ন চাকমা। এর আগে ১৩ জুলাই খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা চেয়ারম্যান চঞ্চুমনি চাকমা দুর্বৃত্তদের হামলায় গুরুতর আহত হন।একই দিনে খাগড়াছড়ির আলুটিলায় প্রতিপক্ষের গুলিতে নিহত ইউপিডিএফ কর্মী জ্ঞানেন্দু চাকমা লাশ নিতে এসে তারই ছোট ভাই কালায়ন চাকমাকে (২২) অপহরণ করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।আগের দিন জ্ঞানেন্দু চাকমা নিহত হন। এই ঘটনায় জেএসএস সংস্কারকে দায়ী করে ইউপিডিএফ।গত ৩ মে রাঙ্গামাটির নানিয়ারচর উপজেলা চেয়ারম্যান শক্তি চাকমাকে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।ওই ঘটনার পর অনেকেই আশঙ্কা করেছিলেন বড় ধরনের সহিংস ঘটনার।অ্যাডভোকেট শক্তিমান চাকমা ২০১০ সালে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি থেকে বেরিয়ে গিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (এম এন লারমা) নামে গঠিত নতুন দলে যোগ দেন।সংস্কারপন্থী এই নেতা ছিলেন ওই সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি।ওই আশঙ্কা ঠিকই এক দিন পর প্রমাণিত হয়।পরদিন ৪ মে শক্তিমান চাকমার দাহক্রিয়ায় অংশ নিতে গিয়ে পথে সশস্ত্র হামলায় নিহত হন ইউপিডিএফের (গণতান্ত্রিক) প্রধান তপন জ্যোতি চাকমা বর্মা,একই দলের নেতা সুজন চাকমা,সেতুলাল চাকমা ও টনক চাকমা। তাদের বাঙালি গাড়িচালক সজীবও নিহত হন।ওই ঘটনার মাস তিনেক আগে নিহত হয়েছে ইউপিডিএফের ছাত্র সংগঠন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাবেক সভাপতি মিঠুন চাকমা। মিঠুন হত্যার কয়েকদিন আগে ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক নামে দলটির আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল।মিঠুন ওই দলে যোগ দিয়েছিলেন।গত ৩ জানুয়ারি কোর্টে হাজিরা শেষে বাড়িতে গেলে একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী তাকে অপহরণ করে নিয়ে যায়।সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়,এর প্রতিটি ঘটনায়ই ভারী অস্ত্র ব্যবহৃত হয়েছে।গোপনে এই আগ্নেয়াস্ত্র সংগ্রহ করছে পাহাড়ি সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো।নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর হামলার ঘটনায় প্রাথমিকভাবে জেএসএস সন্তু গ্রুপকে সন্দেহ করা হয়েছে।তাদেরকে সহায়তার অভিযোগ উঠেছে ইউপিডিএফ প্রসীত গ্রুপের বিরুদ্ধে।সরাসরি দায়ী করা হচ্ছে বাঘাইছড়ি উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান জেএসএস সন্তু গ্রুপের নেতা বড় ঋষি চাকমাকে।সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়,পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের কাছে এসএমজি,একে-৪৭ রাইফেল,এম-১৬ এবং এম-৪ এর মতো আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে।প্রতি বছর যৌথ বাহিনী এসব সন্ত্রাসী ও তাদের আস্তানা থেকে বিপুল অস্ত্র উদ্ধার করলেও তাদের অস্ত্র ভাণ্ডার কমছে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র জানায়,২০১৭ সালে পাহাড়ি সশস্ত্র গ্রুপগুলোর কাছ থেকে ১২০ টি, ২০১৮ সালে ১৩০টি এবং চলতি বছরের প্রথম দু’মাসে ২০টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।এক দিকে অস্ত্র উদ্ধার হচ্ছে অপর দিকে অস্ত্রের মজুদ গড়ে তুলছে পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা।

তথ্য সুত্রঃ-আবু সালেহ আকন,দৈনিক নয়াদিগন্ত।

ট্যাগ :

আরো সংবাদ

ফেইসবুকে আমরা



আর্কাইভ
November 2024
M T W T F S S
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031  
আলোচিত খবর

error: কি ব্যাপার মামা !!