ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ। দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রেই লাগছে ডিজিটাল প্রযুক্তির ছোঁয়া। প্রায় সকল সরকারি কাজ এখন সম্পন্ন হয় ডিজিটাল পদ্ধতিতে। বর্তমানে সরকারি প্রায় সবগুলো সেবা প্রদানকারী সংস্থা ডিজিটাল পদ্ধতিতে সেবা প্রদান করে আসছে। প্রতিটি সেবা প্রদানকারী সংস্থার একটি নির্দিষ্ট নাম্বারে কল দিয়ে সেবার আবেদন জানালেই মিলছে কাঙ্ক্ষিত সেবা।
কোনো বিপদে পড়েছেন বা আপনার কেউ দুর্ঘটনায় পড়েছে? জরুরি সেবা লাগবে? পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, অ্যাম্বুলেন্স বা চিকিৎসা সেবা। কোনো নারী বা শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে? সরকারি আইনি সেবা লাগবে? বা প্রবাসে বিপদে পড়েছেন? প্রতিদিনকার জীবনে নানা সমস্যার মুখোমুখি হয় মানুষ। তথ্য ও যোগাযোগ-প্রযুক্তির এই যুগে বর্তমান সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এই সকল সমস্যা সমাধানে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে কল সেন্টার সেবা চালু রয়েছে। ওই কল সেন্টারগুলোতে কল করলেই অতি দ্রুত সেবা মিলছে।
জাতীয় জরুরি সেবা (৯৯৯)
যেকোনো পরিস্থিতিতে এখন সবচেয়ে জরুরি নম্বর হলো ৯৯৯। যেকোনো দুর্ঘটনার মুখোমুখি হলে জরুরি সেবা পেতে দেশের যেকোনো স্থান থেকে যে কেউ এই নম্বরে ফোন করতে পারেন। এই নম্বরে ফোন করে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও অ্যাম্বুলেন্স সেবা কিংবা এ–সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া যাবে। দিনরাত ২৪ ঘণ্টা এ কল সেন্টার চালু থাকে। যেকোনো ফোন থেকে বিনামূল্যে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করা যায়।
নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে (১০৯)
মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নারী নির্যাতন প্রতিরোধকল্পে মাল্টিসেক্টরাল কর্মসূচির আওতায় এই কল সেন্টারটি পরিচালনা করা হয়। এর নম্বর ১০৯। সব অপারেটর থেকে এই নম্বরে কোনো ধরণের চার্জ ছাড়াই কল করা যাবে। এই নম্বরে কল করে সাহায্যে চাইলে ঘটনাস্থলের জরুরি খবর স্থানীয় প্রশাসন, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান, পুলিশ প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট এনজিও সংগঠন-এই চার জায়গায় একই সঙ্গে পাঠানো হয়ে থাকে।
স্বাস্থ্য বাতায়ন সেবা (১৬২৬৩)
১৬২৬৩, এটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় পরিচালিত হেল্প লাইন। এই নম্বরে ফোন করে স্বাস্থ্যসংক্রান্ত যেকোনো বিষয়ে সরাসরি চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে আপনি পরামর্শ পেতে পারেন। দিনরাত ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে এই নম্বর।
চাইল্ড হেল্প লাইন (১০৯৮)
সুবিধাবঞ্চিত নির্যাতিত ও বিপদাপন্ন শিশুদের ২৪ ঘণ্টা জরুরি সহায়তা সেবা দেওয়া হয় এই কল সেন্টার থেকে। সমাজসেবা অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অপরাজেয় বাংলাদেশ এই কল সেন্টারটি পরিচালনা করছে। এই সেন্টারে কল করতে ১০৯৮ নম্বরে কল করতে হবে। এতে কোনো চার্জ প্রযোজ্য নয়।
দুর্যোগের আগাম বার্তা (১০৯৪১)
আবহাওয়া ও দুর্যোগ সম্পর্কে আগে থেকেই বার্তা দিতে এই কল সেন্টারটি পরিচালনা করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর। এ ছাড়া নদীবন্দরগুলোর জন্য সতর্ক সংকেত ইন্টারেক্টিভ ভয়েস রেসপন্সের (আইভিআর) মাধ্যমে দেওয়া হয়। ১০৯৪১ নম্বরে কল করে এসব সেবা পাওয়া যাবে।
সরকারি আইনি সেবা (১৬৪৩০)
বিনামূল্যে আইনি পরামর্শ ও আইনগত সহায়তা দিতে ১৬৪৩০ নম্বর চালু করা হয়। আইন ও বিচার বিভাগের অধীনে জাতীয় আইনগত সহায়তা সংস্থা এই সেবা দিয়ে আসছে। যেকোনো মোবাইল অপারেটর ও টিঅ্যান্ডটি নম্বর থেকে এই নম্বরে বিনামূল্যে ফোন করা প্রয়োজনীয় আইনি সেবা নেওয়া যাবে।
ডিএমপি জরুরি হেল্প লাইন (১০০)
রাজধানীবাসীকে নিরাপত্তা সেবা দিতে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ১০০ নম্বরের কল সেন্টার চালু করে ২০১৫ সালে। ১০০ নম্বরে কল করে অপরাধজনিত সমস্যা বা জরুরি সেবার কথা জানালে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। যেকোনো ফোন থেকে এই নম্বরে কল করতে কোনো খরচ লাগবে না।
কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সেবা (১৬১২৩)
কৃষি বিষয়ক তথ্য সহায়তায় ২০১৪ সালের জুনে এই কল সেন্টারটি যাত্রা শুরু করে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ কৃষি তথ্য সার্ভিস সেন্টারটি পরিচালনা করে। ১৬১২৩ নম্বরে কল করে কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ বিষয়ে যেকোনো সমস্যার পরামর্শ পাওয়া যাবে।
দুদক (১০৬)
দুর্নীতি ও অনিয়মের তথ্য জানাতে হটলাইন ১০৬ চালু করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। টেলিফোন বা যেকোনো মোবাইল ফোন থেকে কল করা যাবে এই নম্বরে। যে কেউ বিনামূল্যে এই নম্বরে কল করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে অভিযোগকারীর নাম ও পরিচয় গোপন রাখা হয়।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য ২০১৪ সালের ২৩ অক্টোবর এই সেবা সেন্টার চালু করে। এর দুটি হটলাইন নম্বর হলো ০১৭৯৯০৯০০১১ ও ০১৭৯৯০৯০০২২। এই দুটি নম্বরে কল করে প্রবাসী বাংলাদেশিরা যেকোনো ধরণের আইনি তথ্য, পরামর্শ ও কাউন্সেলিং সেবা পাবেন।
জাতীয় পরিচয়পত্র(১০৫)
জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন, সংশোধন ও হালনাগাদ সংক্রান্ত তথ্য ও পরামর্শ প্রদানের জন্য নির্বাচন কমিশন একটি হেল্পলাইন চালু করেছে। ১০৫ নম্বরে কল করে জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত তথ্য ও পরামর্শ সেবা পাওয়া যাবে।
ইউনিয়ন পরিষদ হেল্প লাইন (১৬২৫৬)
ইউনিয়ন পরিষদ পর্যায়ে যেকোনো ভাতা বা অনুদানসংক্রান্ত তথ্য ও পরামর্শ সেবা দিতে ২০১২ সালে যাত্রা শুরু করে ইউনিয়ন পরিষদ হেল্পলাইন ১৬২৫৬। যে কেউ দেশের যেকোনো স্থান থেকে ফোন করে এই সেবা নিতে পারবেন।
যত দিন যাচ্ছে ততই উল্লেখিত এসব হেল্পলাইনের নাম্বারে কল দিয়ে প্রয়োজনীয় সেবা গ্রহণের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব কল সেন্টার চালু হওয়াতে এখন দ্রুতই নানা রকম প্রয়োজনীয় সেবা পাচ্ছে জনসাধারণ।