অশ্লীল ছবির বিস্তার বন্ধে প্রয়োজন অশ্লীল ছবি নিয়ন্ত্রণ আইন


নিউজ ডেস্ক প্রকাশের সময় :১ মার্চ, ২০১৯ ৩:৩৫ : অপরাহ্ণ 773 Views

তথ্য প্রযুক্তি ও ইন্টারনেটের কল্যাণে হাতের মুঠোয় এখন গোটা বিশ্ব। স্মার্টফোন অথবা কম্পিউটারে স্ক্রিনে ক্রমাগতই উকি দেয় বিভিন্ন অশ্লীল ছবি ও সাইটের লিংক। আর মুহূর্তের মধ্যেই ক্লিক করে এসব সাইটে অশ্লীল ছবি দেখতে প্রবেশ করছে কিশোর থেকে শুরু করে সব বয়সের নর-নারী। অশ্লীল ছবির আগ্রাসন থেকে সমাজ ও দেশকে রক্ষা করতে ইতোমধ্যে ৫ হাজারেরও বেশি অশ্লীল ছবির সাইট বন্ধ করেছে বর্তমান সরকার। তবে অশ্লীল ছবির বিষাক্ত ছোবল থেকে সবাইকে রক্ষা করতে এসব সাইট বন্ধ করার পাশাপাশি প্রয়োজন অশ্লীল ছবি নিয়ন্ত্রণ করতে যেসব সরকারি আইন অথবা বিধিমালা রয়েছে তার যথাযথ প্রয়োগ।
অশ্লীল ছবি নিয়ন্ত্রণ করতে প্রথমবারের মতো ২০১২ সালে অশ্লীল ছবি নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন করে বর্তমান সরকার। আইন অনুযায়ী অশ্লীল ছবি বহন, বিনিময়, মুঠোফোনের মাধ্যমে ব্যবহার করা, বিক্রি প্রভৃতি নিষিদ্ধ। এই আইন অনুযায়ী যৌন উত্তেজনা সৃষ্টিকারী কোনো অশ্লীল সংলাপ, অভিনয়, অঙ্গভঙ্গি, নগ্ন বা অর্ধনগ্ন নৃত্য-চলচ্চিত্র, ভিডিও চিত্র, অডিও ভিজুয়াল চিত্র, স্থির চিত্র, অঙ্কিত চিত্রাবলী, বা অন্য কোনো উপায়ে ধারণকৃত ও প্রদর্শনযোগ্য বিষয়— যার কোনো শৈল্পিক মূল্য নেই– তা অশ্লীল ছবি হিসেবে বিবেচিত হবে। অধিকন্তু, যৌন উত্তেজনা সৃষ্টিকারী অশ্লীল বই, পত্র-পত্রিকা, ভাস্কর্য, কল্প-মূর্তি, মূর্তি, কার্টুন বা প্রচারপত্রও অশ্লীল কন্টেন্ট বা বিষয়বস্তু হিসেবে বিবেচিত হবে। এসবের সফট ভার্সনও অশ্লীল কন্টেন্ট হিসেবে গণ্য হবে।
উল্লেখিত আইন অনুযায়ী অশ্লীল ছবি উৎপাদন, সংরক্ষণ, বাজারজাতকরণ, বহন, সরবরাহ, ক্রয়-বিক্রয় ও প্রদর্শন বেআইনি ও নিষিদ্ধ এই নিষিদ্ধ কর্ম সম্পাদনের জন্য শাস্তির বিবিধ বিধান রাখা হয়েছে। এ আইনের অধীনে সংঘটিত অপরাধ আমলযোগ্য এবং জামিনের অযোগ্য।
অশ্লীল ছবি নিয়ন্ত্রণ আইনে বলা হয়েছে, যে কোনো ব্যক্তি অশ্লীল এবং নোংরা ছবি উৎপাদনের উদ্দেশ্যে কোনো নারী, পুরুষ বা শিশুকে প্রলোভন দিয়ে জ্ঞাতে বা অজ্ঞাতে স্থির, ভিডিও বা চলচ্চিত্র ধারণ করলে বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৭ বছরের কারাদণ্ড ও ২ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড আরোপ করা যাবে। আরও বলা হয়েছে যে, যদি কোনো ব্যক্তি অশ্লীল ছবির মাধ্যমে কারও সম্মানহানি করে বা কাউকে ব্ল্যাকমেইল করে বা করার চেষ্টা চালায় তবে বিচারক ২ থেকে ৫ বছর মেয়াদী কারাদণ্ড আরোপ করতে পারবেন এবং তদুপরি, ১ থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড আরোপ করতে পারবেন। শিশুদের ব্যবহার করে অশ্লীল ছবি উৎপাদন ও বিতরণকারীদের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ শাস্তি ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং অধিকন্তু ৫ লাখ টাকা জরিমানা আরোপের বিধান রাখা হয়েছে।
এছাড়া উক্ত আইন অনুসারে অশ্লীল ছবির সিডি বা ডিভিডি তৈরির দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেফতারি পরোয়ানা ছাড়াই গ্রেফতার ও তার আস্তানায় তল্লাশি চালিয়ে আলামত আটক করা যাবে। তল্লাশিকালে আটককৃত সফট কপি, রূপান্তরিত হার্ড কপি, সিডি, ভিসিডি, ডিভিডি, কম্পিউটার বা অন্য কোনো ডিজিটাল বা ইলেকট্রিকাল ডিভাইস, এক্সেসরিজ, মোবাইল ফোনে সিম, যন্ত্রাংশ, অপরাধ কাজে ব্যবহৃত অন্য কোনো যন্ত্র বা যন্ত্রাংশ, সরঞ্জাম বা বস্তা আদালতে প্রমাণ বা প্রদর্শনী হিসেবে উপস্থাপন করতে হবে। এই আইনের ৫ ধারায় বলা হয়েছে যে অশ্লীল ছবি তৈরি কিংবা বহনের অভিযোগ পাওয়া গেলে তা পুলিশের উপ-পরিদর্শক বা তার সমমর্যাদার কর্মকর্তাকে দিয়ে ৩০ দিনের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন করতে হবে। তদন্তের প্রয়োজনে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনুমতি নিয়ে আরও ১৫ দিন এবং আদালতের অনুমোদন পাওয়া গেলে আরও ৩০ দিন পর্যন্ত বৃদ্ধি করা যাবে।
এছাড়া এ আইনে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির ৭ দিনের মধ্যে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা সম্ভব না হলে আদালত একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিতে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিতে পারবে। এ সময়ের মধ্যে অভিযুক্ত ব্যক্তি আদালতে আত্মসমর্পণ না-করলে তার অনুপস্থিতিতেই বিচার কার্য সমাধান হবে। কেউ এ অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হলে ৩০ দিনের মধ্যে তাকে আপিল করতে পারবেন। এ ছাড়া বিলে মিথ্যা অভিযোগ দায়েরকারীর জন্যও শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। এ আইনের অধীনে সংঘটিত অপরাধ আমলযোগ্য এবং জামিনের অযোগ্য অপরাধ হিসাবে অভিযোগ ছাড়াই রাষ্ট্র তথা আদালত আমলে নিতে পারবে।
অশ্লীল ছবি নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রণীত এসব আইন যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে অনেকটাই রোধ করা সম্ভব অশ্লীল ছবির ভয়াবহতা।

ট্যাগ :

আরো সংবাদ

ফেইসবুকে আমরা



আর্কাইভ
April 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031  
আলোচিত খবর

error: কি ব্যাপার মামা !!