বনবিভাগের কর্মকর্তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে জনসম্মুখে নির্বিচারে গাছ কাটছে


আলীকদম প্রতিনিধি প্রকাশের সময় :৩০ জানুয়ারি, ২০১৯ ৪:১৬ : অপরাহ্ণ 779 Views

বান্দরবানের আলীকদম উপজেলায় বনবিভাগের মাতামুহুরী সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে বনবিভাগের কর্মকর্তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে জনসম্মুখে নির্বিচারে কাঠ কাটছে পাচারকারী চক্র।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গত ২৩ জানুয়ারি আলীকদম উপজেলার মাতামুহুরী সংরক্ষিত বনাঞ্চলের বালু ঝিরি ও ঠান্ডা ঝিরি নামক স্থানে জনসম্মুখে কাঠ পাচাররকারী বড় সেগুন গাছ কেটে টুকরা টুকরা করে পাচার করার উদ্দেশ্যে স্তুপ করছে। উক্ত স্থানে বনবিভাগের কোন টহল দল বা বনাঞ্চল পাহাড়ায় নিয়োজিত কোন কর্মকর্তাকে দেখা যায়নি।
স্থানীয়রা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে গাছ পাচারকারীরা গাছ কাটলেও বন বিভাগের কোন কর্মচারীকে টহল বা পাহারা দিতে দেখা যায়নি। ফলে প্রতিবছর কোটি টাকার গাছ কর্তন করে নিয়ে যাচ্ছে কাঠ পাচারকারীরা এবং সে গাছ স্থানীয় কাঠ ব্যবসায়ী ও জোত মালিকদের নিকট বিক্রয় করছে। তারা আরও বলেন বিশেষ উৎকোচ দিয়েও মাঝে মাঝে দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের সন্তুষ্টি করে উক্ত গাছ কর্তন ও পাচার করতে হয়। কাগজে কলমে গাছ কাটা ও পাচার বন্ধ থাকলেও প্রকৃতপক্ষে গোপনে গাছ কর্তন করে পাচার করছে প্রতিনিয়ত। মাঝে মাঝে লোক দেখানো কিছু অভিযান পরিচালনা করে কিছু কাঠ জব্দ করে হতদরিদ্র লাকড়ি সংগ্রহকারী ও ছোট খাট (টাকায় নিয়োজিত) কাঠ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কাঠ চুরি কিংবা গাছ কর্তনের অপরাধে গুটিকয়েক মামলা দেওয়া হলেও মুল কাঠ পাচারকারী চক্রটি থেকে যায় ধরা ছুয়ার বাইরে। ফলে কাঠ পাচারকারী চক্রটি আরও আগ্রাসী হয়ে ওঠছে।
সংরক্ষিত বনাঞ্চলের উপকারভোগী মোঃ আলমগীর বলেন, আমরা উপকারভোগীরা বনাঞ্চল হইতে গাছ কর্তনে বাধা দিলে, তারা সঙ্গবদ্ধ হয়ে মারধর করে এবং তাদের সঙ্গীয় মহিলা দিয়ে সম্মান হানি করার হুমকি দেয়। তাই সম্মান খোয়ানোর ভয়ে আমরা নীরব থাকি।
এ বিষয়ে আলীকদম মাতামুহুরী রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা জমির উদ্দিন মিয়া চৌধুরী গাছ কাটার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, মাঝে মাঝে তারা চুরি করে গাছ কর্তন করে নিয়ে যায়! সেটা যেমন সত্য তেমনি চুরি করা গাছ অভিযান চালিয়ে আটক করা হয় সেটিও যথাযথ সত্য। তিনি আরও বলেন, মাতামুহুরী সংরক্ষিত ১২ হাজার ৮ শত ৫২ একর বনাঞ্চল। কিন্তু আমাদের লোকবল মাত্র ০৪ জন। তবুও আমরা দিনরাত বনাঞ্চল পাহারা দিয়ে যাচ্ছি। গত কিছুদিন পূর্বেও আমার এক সহকর্মী কাঠ পাচার ও গাছ কর্তনে বাধা দেওয়ায় পাচারকারীরা তাকে আটকে রেখে মারধর করে। পরে আমি খবর পেয়ে পুলিশ নিয়ে তাকে উদ্ধার করি। সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে ১৩ জানুয়ারী ২০১৯ইং তারিখ ভোররাত ৪ টার সময় একজন মহিলাকে আটক করা হয়েছে। পাচারকারী চক্রে পুরুষের পাশাপাশি নারীও রয়েছে। নারীরা কাঠ পাচারে সহায়তা করে। অল্প লোকবল হওয়া স্বত্তে¡ও সংরক্ষিণ বনাঞ্চল হতে গত ০১ মাসে ৫০০ ঘনফুট রদ্দা জব্দ করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
লামা বনবিভাগের বন কর্মকর্তা মোঃ কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, কাঠ পাচারকারী চক্রের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বনাঞ্চলটি দূর্গম এবং পাহাড়ী অঞ্চল হওয়ায় লোকবল স্বল্পতার কারণে কিছুটা সমস্যা হলেও আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। মাতামুহুরী বনাঞ্চল তদারকির জন্য আরও জনবল প্রয়োজন, উপর মহলে জনবল বাড়ানোর বিষয়টি বারবার জানানো হয়েছে বলে তিনি জানান।

ট্যাগ :

আরো সংবাদ

ফেইসবুকে আমরা



আর্কাইভ
November 2024
M T W T F S S
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031  
আলোচিত খবর

error: কি ব্যাপার মামা !!