ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ, সংক্ষেপে ডাকসু। ডাকসুর একটি গঠনতন্ত্র রয়েছে এবং ডাকসুর অস্তিত্ব রয়েছে ১৯৭৩ সালের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অর্ডিন্যান্সে। ডাকসুর গঠনতন্ত্রে বলা হয়েছে ডাকসু নির্বাচনের পর মাত্র এক বছর তার কার্যকারিতা থাকবে। এই সময়ের পর যদি ডাকসু নির্বাচন না হয় তবে ৩ মাস পর্যন্ত ওই কমিটির কার্যকারিতা থাকবে। আর এই ৩ মাস করতে করতে কেটে গেছে দীর্ঘ ২৮টি বছর।
বর্তমানে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আছে ডাকসু নির্বাচন। ইংরেজিতে যাকে বলা হয় ‘হট টপিক।’ ডাকসু নির্বাচন নিয়ে ইতোমধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সাজ সাজ রব পড়ে গেছে। আর তাতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা। বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ফিরিয়ে আনা, নানাবিধ সমস্যার সমাধানসহ সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে ডাকসু ও হল ছাত্রসংসদের নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। এর প্রয়োজনীয়তা সরকার উপলব্ধি করেছে। আর সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সদিচ্ছায় দীর্ঘ ২৮ বছরের খরা কাটতে চলছে ১১ মার্চ।
নির্বাচনের জন্য সবচেয়ে জরুরি বিষয় হচ্ছে সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ ও মাঠে সহাবস্থান। আর সেই অবস্থাটা একমাত্র নিশ্চিত করতে পারে ক্ষমতাসীন দল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ছাত্ররা বলছে সেই পরিস্থিতি ইতোমধ্যেই বিরাজ করছে ক্যাম্পাসে। আর সেটার প্রমাণ পাওয়া গেলো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ১৩টি ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনের শান্তিপূর্ণ অবস্থানে। দফায় দফায় সংগঠনগুলো নিজেদের মধ্যে এবং প্রশাসনের সাথে মিটিং করছে। এছাড়া ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ বলছে তারা নির্বাচন করতে বদ্ধ পরিকর। ডাকসু নির্বাচনের জন্য ক্যাম্পাসে সকল সংগঠনের সহ-অবস্থানের মাধ্যমে শন্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে জোর দিয়েছে দেশের সবচেয়ে পুরাতন ছাত্র সংগঠনটি। ছাত্র রাজনীতির ইতিহাসে ছাত্রলীগ একটা নতুন নজির সৃষ্টি করলো। ছাত্রদলের সাথে ছাত্রলীগের ভাতৃত্বপূর্ণ আচরণ তার সাক্ষ্য দেয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে ছাত্রদল নেতা-কর্মী পরিচয়ে কোনো নিয়মিত শিক্ষার্থী থাকলে কোনো ধরনের সমস্যা করবে না বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ছাত্রলীগ।
ইতোমধ্যে সব সংগঠনের অংশগ্রহণেই ডাকসু নির্বাচন হবে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। ছাত্রদলসহ সকল সংগঠন যাতে সমানভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে সেই বিষয়ে জোর দিচ্ছে প্রশাসন।
প্রাচ্যের অক্সফোর্ড ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ। শিক্ষা, সংস্কৃতি, রাষ্ট্র ও সমাজ সার্বিকভাবে রাজনৈতিক আন্দোলনের সূতিকাগার। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, একাত্তরের স্বাধীনতা অর্জন থেকে শুরু করে নব্বইয়ের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনসহ গণতান্ত্রিক, জাতীয় মুক্তি ও স্বাধিকার আন্দোলনে যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন তারা এ বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতি শিক্ষার্থী। আর যুগ যুগ ধরে সেই অকুতোভয় সৈনিকদের নেতৃত্ব দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-ডাকসু। আর সুস্থধারার রাজনীতির জন্য ডাকসুর বিকল্প নেই। ডাকসু নির্বাচনের মধ্য দিয়েই বিকশিত হবে গণতান্ত্রিক ও সুস্থধারার রাজনীতি এবং নতুন যুগের সূচনা হবে বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।