বিএনপির বিভিন্ন দায়িত্বশীল সূত্রে জানা যায়, নির্বাচনের পূর্বেই দলের নেতৃত্বে পরিবর্তনের আভাস দিয়েছিলেন খোদ তারেক রহমান। খালেদার নির্দেশে আন্দোলনের অংশ হিসেবে ফুরফুরে মেজাজেই নির্বাচনের মাঠে ছিলো দলটি। কিন্তু নির্বাচনের আগে-পরে বিএনপির কোন গোপনীয় সিদ্ধান্তই আর গোপন থাকেনি। দলের শীর্ষ নেতাদের জন্য বিএনপির সব সিদ্ধান্তই একের পর এক ফাঁস হয়ে যায়। এসব তথ্য ফাঁসের ঘটনায় দলটির অন্যতম শীর্ষ নেতা আবদুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে তাবিথ আউয়াল সরাসরি জড়িত ছিল বলে বিশ্বস্ত সূত্র নিশ্চিত করেছে। এছাড়াও দলের ভেতর ভাঙন সৃষ্টির মাধ্যমে মির্জা ফখরুলের প্রতি তারেক রহমানসহ দলের নেতাকর্মীদের ক্ষুব্ধ করার প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার অভিযোগ রয়েছে আবদুল আউয়াল মিন্টুর দিকে। গুঞ্জন রয়েছে আবদুল আউয়াল মিন্টুকে বিএনপির মহাসচিব বানাতে একটি পক্ষ তারেক রহমানের সাথে থেকে জোর লবিং চালাচ্ছে।
এদিকে, ১৩ জানুয়ারি বিএনপির ঢাকা মহানগরীর এক গোপন বৈঠকে আবদুল আউয়াল মিন্টু ও তাবিথ আউয়াল ক্ষমতাসীনদের এজেন্ট হয়ে কাজ করছেন বলে মন্তব্য করেন দলটির একাধিক শীর্ষ নেতা। তাদের মতে, মিন্টু ও তার পুত্র বিএনপিকে ঢেলে সাজানোর নামে বিএনপিকে কৌশলে আন্দোলন বিমুখ দলে পরিণত করে দলটিকে ধীরে ধীরে তৃতীয় সারির দলে উপনীত করবেন বলেও অভিযোগ করেন। তারা আরো অভিযোগ করেন, ব্যবসায়ী নেতাদের বিএনপিতে বিভিন্ন পদ দেয়ায় রাজনীতির চেয়ে অর্থনীতির দিকে বেশি ধাবিত হচ্ছে বিএনপি। যার কারণে রাজনীতির মাঠে ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছে দলটি।
নেতৃত্ব পরিবর্তন এবং তথ্য পাচার করার বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির নীতিনির্ধারণী ফোরামের একজন সদস্য বলেন, আবদুল আউয়াল মিন্টুকে নিয়ে অনেক আগ থেকেই বিএনপিতে সন্দেহ ছিল। তিনি যেহেতু ব্যবসায়ী নেতা, তাই রাজনীতিতেও ব্যবসা করার চিন্তা করবেন, এটিই স্বাভাবিক। মিন্টু এবং তার ছেলে তাবিথ-এর কারণে দলের অনেক গোপন সিদ্ধান্ত এবং পরিকল্পনা ওপেন হয়ে গেছে। বিষয়টি এমন “ঘরের শত্রু বিভীষণ”। তবে তারেক রহমানকে অর্থনৈতিকভাবে তুষ্ট করা বারবার জবাবদিহিতার বাহিরে থাকছেন মিন্টু ও তার ছেলে। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। শুনেছি, মির্জা ফখরুল সাহেবকে সরিয়ে আবদুল আউয়াল মিন্টুকে বিএনপির মহাসচিব বানাতে একটি পক্ষ লন্ডনে তারেক রহমানের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে। মিন্টুর তরফ থেকে নাকি লন্ডনে এরই মধ্যে উপঢৌকনও পাঠানো হয়েছে। যদি মিন্টুর মত দুমুখো মানুষ বিএনপির হাল ধরে তবে আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি যে, অস্তিত্ব সংকটে পড়বে বিএনপি।
তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগের সংসার থেকে বিএনপির পতাকায় আশ্রয় নিলেও আবদুল আউয়াল মিন্টু স্বার্থবাদী চরিত্রেই আছেন বলে খোদ বিএনপির ভেতর থেকেই অভিযোগ উঠেছে। তারেক রহমানের তোপের মুখে পড়ার শঙ্কায় অনেক কিছু জেনেও সাহস করে কেউ মুখ খুলতে পারছেন না। কারণ মিন্টুর মাধ্যমেই বড় ধরণের অর্থনৈতিক সাপোর্ট পাচ্ছেন তারেক। তাই তারেক রহমানও দলের নেতা আবদুল আউয়াল মিন্টুকে বিএনপির মহাসচিব হিসেবে দেখতে চাইছেন বলেও গুঞ্জন উঠেছে। তবে আমার মনে হয়, মহাসচিব পরিবর্তন করার ক্ষেত্রে তারেক রহমান বিচক্ষণতার পরিচয় দেবেন এবং উপযুক্ত ব্যক্তি বিএনপির দায়িত্ব অর্পণ করবেন।
সূত্র বলছে, তারেক রহমানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়ে ছেলে তাবিথ আউয়ালকে স্থায়ী কমিটির সদস্য করার মাধ্যমে নিজের অবস্থানের জানান দিতে চান আবদুল আউয়াল মিন্টু। অপরদিকে লবিংয়ের মাধ্যমে মির্জা ফখরুলকে বিতাড়িত করে বিএনপির মহাসচিব হয়ে নতুন চমক সৃষ্টি করতে এক ধাপ এগিয়ে গেছেন আবদুল আউয়াল মিন্টু। এমনটাও লন্ডন সূত্র নিশ্চিত করেছে।