স্বল্প খরচে সরকারি স্কুলগুলোতে স্বতস্ফুর্তভাবে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারে শিক্ষার্থীরা। যেখানে শিক্ষার মান উন্নয়নে বছরের প্রথমদিনেই শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দিচ্ছে সরকার। অপরদিকে বেশকয়েক বছর ধরে বেসরকারি স্কুলগুলোর কর্তৃপক্ষের চালানো ‘ভর্তি বাণিজ্যে’ অভিভাবকদের ওপর যেনো ‘স্ট্রিম রোলার’ চলছে। যেখানে আয়ের সাথে সামঞ্জস্য রেখে সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ চালাতে অনেকটাই হিমশিম খেতে দেখা গেছে তাদের।
সরকারের নীতিতে ভর্তির ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ফি আদায় নিয়মবহির্ভূত কাজ এবং অন্যায়। বর্তমান সরকারও গত দশ বছরে বিভিন্ন পন্থায় ভর্তি বাণিজ্য বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছিল। কিন্তু তাতেও যেনো নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছেনা শিক্ষা ক্ষেত্রকে ব্যবসায় শাখা সৃষ্টির পায়তারায় জড়িতদের। বছর গড়ানোর সাথে সাথেই বেশ কিছু শীর্ষস্থানীয় স্কুলে ভর্তি ফি’সহ আনুসাঙ্গিক খরচ বাড়ানো হচ্ছে ওইসকল স্কুল কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তেই।
ভর্তি বাণিজ্যের কারণে স্কুলের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জ্ঞানারোহনে যেনো কোনও ধরনের সমস্যা না হয় সে লক্ষ্যে সরকার অবশেষে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে এগোতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তিনি সংশ্লিষ্টজনদের হুঁশিয়ারি দিয়ে জানিয়েছেন, ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ফি নেয়া হলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
দেশের সকল বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতি আহ্বান জানিয়ে দীপু মনি বলেছেন, ‘যে সকল বিদ্যালয়ে নিয়ম বেঁধে দেয়া আছে সেই নিয়ম মেনে তারা ভর্তি করবেন। কোনো ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ফি আদায়ের প্রমাণ পাওয়া গেলে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
স্কুলে ভর্তি পরীক্ষা বা ভর্তির সময় অভিভাবকদের চরম অনিশ্চয়তায় ভুগতে দেখা যায় হয়। এ ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সরকারি স্কুলের মতো বেসরকারি স্কুলেও সুনির্দিষ্টভাবে ভর্তি ফি বেঁধে দেয়া উচিত। স্কুলে ভর্তির মৌসুমে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অভিভাবকদের সরকার নির্ধারিত ভর্তি ফি’র বাইরেও ‘গলাকাটা’ অর্থ দিতে হয়। ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ে স্কুল কমিটিগুলোর বাড়তি অর্থ আদায়ের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে বরাবরই নিজেদের দায় সারার চেষ্টা করে স্কুল কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে নতুন শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘সরকারের নিয়ন্ত্রণে যেটুকু থাকবে, তাতে নিয়ম মানা হবে। যদি কোনো স্কুল এই অতিরিক্ত ফি নিয়ে থাকে তাহলে সাক্ষ্য-প্রমাণ সাপেক্ষে সেই স্কুলের বিরুদ্ধে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’
যদি কোনো স্কুল এ ধরনের অতিরিক্ত ফি আদায় করবার চেষ্টা করে, তাহলে তারা যেন সরকারের সংশ্লিষ্টদের কাছে সেই তথ্য-প্রমাণ দেন সে বিষয়ে অভিভাবকদের কাছে অনুরোধ করেন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি জানান, ‘আমরা নিজেরাও তথ্য সংগ্রহ করছি যে কোথাও এধরনের কিছু হচ্ছে কিনা। হলে অবশ্যই আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।।
স্কুলগুলোতে ভর্তির ওপর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ নীতিমালায় বলা হয়েছে, ‘ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় অবস্থিত এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে ৫,০০০ টাকার অতিরিক্ত অর্থ আদায় করতে পারবে না। ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার আংশিক এমপিওভুক্ত স্কুলগুলো উন্নয়ন এবং এমপিও বহির্ভূত শিক্ষকদের বেতন-ভাতা প্রদানের জন্য শিক্ষার্থী ভর্তির সময় মাসিক বেতন, সেশন চার্জ ও উন্নয়ন ফি’সহ বাংলা মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৮,০০০ টাকা এবং ইংরেজি মাধ্যমে সর্বোচ্চ ১০,০০০ টাকা গ্রহণ করতে পারবে। উন্নয়ন খাতে কোনো প্রতিষ্ঠান ৩,০০০ টাকার বেশি আদায় করতে পারবে না বলে নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।’