একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শোচনীয় পরাজয়ের পর একের পর এক বিতর্কিত কর্মকাণ্ড করে কঠোর সমালোচনার মুখে পড়ছে বিএনপি। প্রথম নির্বাচন বর্জন করে সরকারের প্রতি অনাস্থা পোষণ করলেও শেষ পর্যন্ত সেই সরকারের কাছে নতুন নির্বাচনের দাবি জানিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি। এবার বিএনপি নেত্রী বেগম জিয়ার মুক্তি এবং একাদশ নির্বাচন বাতিলের দাবিতে হাতে গোনা মাত্র ২০ জন কর্মী নিয়ে মিছিল করে দল ও রাজনৈতিক অঙ্গনে সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ।
নির্বাচন পরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বিএনপি যখন দেশের মানুষের উপর আস্থা হারিয়ে বিদেশিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে ক্ষমতায় যাওয়ার নতুন স্বপ্ন দেখা শুরু করেছে, ঠিক সেই মুহূর্তে রিজভী আহমেদের এমন বিব্রতকর কর্মসূচি সকলের নিকট বিএনপিকে রাজনৈতিক দল হিসেবে হাস্যকর এবং অজনপ্রিয় করে তুলবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তবে মাত্র ২০ জন কর্মী নিয়ে মিছিল করে মোটেও অনুতপ্ত বা লজ্জিত নন রিজভী আহমেদ। বিষয়টিকে তিনি প্রতিবাদ কর্মসূচির সূচনা বলেও মনে করেন।
বিভিন্ন গণমাধ্যমের বরাতে জানা যায়, শুক্রবার (১১ জানুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে রাজধানী ঢাকার দৈনিক বাংলা মোড়ে এ বিক্ষোভ মিছিল হয়। বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক মুহম্মদ মুনির হোসেন স্বাক্ষরিত এ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। মিছিলে নেতৃত্ব দেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। মিছিলটি দৈনিক বাংলা মোড় থেকে শুরু হয়ে ফকিরাপুলে গিয়ে শেষ হয়। মিছিলে ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী অংশ নেন বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হয়। কিন্তু ছবিতে দেখা যায় মিছিলে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা সর্বোচ্চ ২০ জন। এ সময় তারা খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাতিলের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন বলেও দাবী করা হয় সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।
রিজভী আহমেদের এমন ঝটিকা মিছিল প্রসঙ্গে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি অনেকটা ক্ষোভের সঙ্গেই বলেন, রিজভী আহমেদকে নিয়ে বিএনপি শুরু থেকেই বিব্রত। তিনি প্রতিবার অসময়ে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্ম দিয়ে বিএনপিকে জনগণের সামনে বিব্রত ও অপমানিত করেন। এছাড়া তিনি কিন্তু আমার কাছ থেকে কোন রকম অনুমতি ছাড়াই অতিউৎসাহী হয়ে ঝটিকা মিছিলটি করেছেন। আমরা আন্দোলনে অবশ্যই যাব, তবে আইনি লড়াই শেষ করে। সব কিছুতে বাড়াবাড়ি করেন রিজভী। তার এমন হাস্যকর দুঃসাহসিকতার জন্য আমি অবশ্যই ব্যাখ্যা চাইব।
মিছিলের সমালোচনা প্রসঙ্গে রিজভী আহমেদ বলেন, কোন ভাল কাজ করতে গেলে সমালোচনা হবে, এটি স্বাভাবিক। নেত্রীর মুক্তি এবং নির্বাচন বাতিল চেয়ে ঝটিকা মিছিল করে কোন অন্যায় করিনি আমরা। জনগণের মন থেকে প্রায় হারিয়ে যাওয়া বিএনপির অস্তিত্ব জানান দিতেই বেশ কিছু নেতাকে নিয়ে মিছিল করেছি। এটা আমার রাজনৈতিক অধিকার। এছাড়া আমি তো সাধারণত মিছিল করার সুযোগ পাই না। এখন বুঝতে পারছি আমার কর্মকাণ্ড নিয়ে নতুন করে রাজনীতি করবেন সিনিয়র নেতৃবৃন্দ। আমার আসলে মন্দভাগ্য।