দেশের রাজনীতিতে সব দলের অংশগ্রহণে গত ৩০ ডিসেম্বর শেষ হলো বহুল আলোচিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। যেখানে সারাদেশের প্রায় ৮০ শতাংশ জনগণের দেয়া বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করেছে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ। এ নির্বাচনে ২৯৯টি আসনের মধ্যে আ.লীগ পেয়েছে ২৫৭টি আসন, জাতীয় পার্টি ২২টি, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পাটি (বাসদ) ৩টি আসন, গণফোরাম ২টি, বিকল্প ধারা বাংলাদেশ ২টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) ২টি, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন ১টি, জাতীয় পার্টি (জেপি) ১টি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৩টি আসনে জয়ী হয়েছে।
তবে সব থেকে বড় চমক এসেছে বিভিন্ন সময় নিজেদের মোট চার মেয়াদের ক্ষমতায় দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য গড়ে তোলা বিএনপিতে। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভরাডুবি হলেও দলটি এবার পেয়েছে মাত্র ৫টি আসন। প্রায় আড়াইশ আসনে প্রার্থী দেয়ার পরও এমন নিম্নমানের পরাজয়ের কারণ হিসেবে সাধারণ ভোটার ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ‘নির্বাচনের প্রচারণার সময়গুলোতে মাঠে না থেকে ভোটার কেনার চেষ্টায় ধরা পরা, দলীয় নীতির অভাব ও তাদের করা অতীতের দুর্নীতির ক্ষতগুলো জনগণের মন থেকে দূর না হওয়াই বিএনপির এমন পরপর বড় পতন হয়েছে।’
অপরদিকে, যেখানে মহাজোটের প্রধান শেখ হাসিনার সরকার টানা তিনবার দেশ শাসনে এসেছে সেখানে বিএনপির প্রধান বেগম খালেদা জিয়া দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে রয়েছেন জেলে। তার ছেলেও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিভিন্ন মামলায় বড় সাজা পেয়ে গত এক যুগ ধরেই বিদেশে পালাতক রয়েছে।
দেশের আইনে কোনও ব্যক্তি যদি দুই বছরের বেশি সাজা পায়, তবে সে ওই সময়টিতে নির্বাচনের প্রার্থী হিসেবে অযোগ্য থাকে।
দুর্নীতিতে পর্যদুস্ত দলীয় নেতাদের ও যুদ্ধাপরাধীদের সাজা মুক্তির আন্দোলনের নামে যখন ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি জামায়াত জোট, তখনই তাদের নিবন্ধন ঝুঁকিতে পড়ে গিয়েছিল। আইনানুযায়ি তারা যদি এবারের নির্বাচনেও অংশ না নিত, তাহলে নিবন্ধন হারাতো দলটি।
কিন্তু জোট গঠনের পর নির্বাচন কমিশন (ইসি) যখন নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করে, এরপরই যুক্তরাজ্যে পলাতক আসামী তারেক রহমান তার দুর্নীতির ফাঁদ আবারো পাতে এবং ঐক্যফ্রন্টের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেয়। যেখানে তারেক তার নিজ দলের নেতাদের দলীয় প্রতীকে মনোনয়ন দেয়ার কথা বলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। এরপর চূড়ান্ত মনোনয়নের সময় দলের ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে জনপ্রিয়তাহীন নেতাদের ধানের শীষে মনোনয়ন দেয়।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, রমরমা মনোনয়ন বাণিজ্য চালিয়ে ঠিক তখনই তারেক রহমান তার বিএনপির বিলুপ্তির পথে এগিয়ে দিয়েছে। এর আগের নির্বাচনগুলো থেকেই দলীয় তৃণমূলের নেতাদের সাথে বিএনপির বিচ্ছেদের পিছনে তারেক রহমানের একরোখা নেতৃত্বে ও অযোগ্য সিদ্ধান্তগুলোকেই দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সব শেষে জাতীয় নির্বাচনে জনগণ বিএনপি থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়ায় যেন মরার উপর খাড়ার ঘা হিসেবে দেখা দিয়েছে নির্বাচনে লজ্জাজনক এ পরাজয়। বিএনপির ধানের শীষকে পুঁজি করে যারা এমপি হতে চেয়েছিল তারেক রহমানের লোভের পরিণামে এমন ব্যর্থতায় জোট ঐক্যফ্রন্টের সাথেও চলছে মনোমালিন্য।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতাদেরই বক্তব্যে, দলটির সব থেকে বড় বিষফোঁড়া লন্ডনে পলাতক তারেক জিয়া। ইনি সেখানে বসে টাকার লোভে নিজের বাবার গড়ে যাওয়া দলের বিরুদ্ধেই অতীত ও বর্তমানে বহু ষড়যন্ত্র ও নিম্নমানের কর্মকাণ্ড এমনকি জঙ্গিবাদের সাথেও জড়িয়ে গিয়ে বিএনপির রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ঘোর অন্ধকারে ফেলে দিয়েছে। ফলে নিজেদের ন্যাক্কারজনক কাজের খেসারত হিসেবে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার রক্ষার জন্য অনেক শীর্ষ নেতাই এখন ভাবছে জিয়া পরিবারকে বাইরে রেখে নিজেদের গুছিয়ে নেয়া।
ফলে বিএনপির শীর্ষ নেতা ও জোট শরীকদের এমন সিদ্ধান্তে বিএনপি দলটি শিগগির বিলুপ্তির পথে এগিয়ে যাচ্ছে বলে মানছে সর্বস্থরের রাজনীতিকরা।