নতুন আলোতে সোনালী স্বপ্নের হাতছানি


নিউজ ডেস্ক প্রকাশের সময় :২ জানুয়ারি, ২০১৯ ৩:৩৩ : অপরাহ্ণ 558 Views

আজ মঙ্গলবার বাংলা ১৮ পৌষে গ্রেগরিয়ান পঞ্জিকা অনুযায়ী যাত্রা শুরু করল আন্তর্জাতিক নববর্ষ ২০১৯। আর বাংলাদেশ পা রাখল স্বাধীনতা অর্জনের ৪৮তম বছরে।

নতুন সূর্যোদয়ের মধ্য দিয়ে ভরা পৌষের ধবল কুয়াশার হিমেল চাদর ছিন্ন করে নতুন সূর্য ছড়িয়ে দিয়েছে সোনালি আলোর সকাল। খোলা প্রান্তরে দেখা দিয়েছে সোনালি স্বপ্নের হাতছানি।

নতুন বছরে আছে যেমন নতুনকে বরণ করে নেওয়ার প্রত্যাশা ঠিক তেমনি আছে পিছনে ফিরে তাকিয়ে প্রাপ্তি -অপ্র্রাপ্তি মিলিয়ে দেখা। এমন মুহূর্তে সবারই প্রত্যাশা- ২০১৯ সাল বাংলাদেশের জন্য নতুন সমৃদ্ধি ও অগ্রযাত্রার ঢেউ নিয়ে আসুক, খুলে যাক সম্ভাবনার নবদিগন্ত। নতুন বছরে মানুষ চায় উজ্জ্বল আলোয় উদ্ভাসিত পথে হাঁটতে। দেশের সবাই একতাবদ্ধ হয়ে সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে পুরাতন সব গ্লানি মুছে দিয়ে দেশে চমৎকার গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি করে নতুন বছর ২০১৯-কে আলোকোজ্জ্বল করে তুলতে হবে।

পুরনো বছর ২০১৮ শেষ হওয়ার মাত্র একদিন আগে ৩০ ডিসেম্বর দেশজুড়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করেছে। এ মাসের মাঝামাঝি টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করতে চলেছে আওয়ামী লীগ। বঙ্গবন্ধু-তনয়া আবারও হবেন প্রধানমন্ত্রী। বাঙালির চোখে তাই এখন কেবলই সামনে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্নের ঝিলিক। বিপুল গণরায় নিয়ে আসা নতুন সরকারের কাছে মানুষের প্রত্যাশাও বিপুল। দেশে যেন আগামী পাঁচ বছর শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল অর্থনীতি, সমাজ ও রাজনীতি থাকে, এ প্রার্থনা সমগ্র দেশবাসীর।

নতুন বছর উপলক্ষে বিশেষ বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের সমৃদ্ধি ও অগ্রগতির পাশাপাশি দেশের মানুষের উন্নয়ন প্রত্যাশা করেছেন তারা। পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।

পুরো দেশ আজ বই উৎসবে মেতে উঠেছে। নতুন বছরের প্রথম দিন জাতির সাড়ে চার কোটি শিশু হাতে পাবে বিনামূল্যের পাঠ্যবই। স্কুল পড়ুয়া সকল শিক্ষার্থী কাক ডাকা ভোরে শীতকে উপেক্ষা করে ছুঁটে চলেছে যার যার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। এ এক অপার আনন্দ।শিক্ষা খাতে দেশ এগিয়েছে বহুদূর। তবে আরও দূরের পথ পাড়ি দিতে হবে সবাইকে। সে জন্য প্রয়োজন হবে মানসম্মত শিক্ষার। দরকার হবে শিক্ষা খাতে ব্যয় বরাদ্দ বাড়ানো।

নতুন বছরে দেশের অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করে তোলা সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা। ২০১৯ সালে পদার্পনের মধ্যে দিয়ে নতুন সরকারের হাত ধরে দেশের অর্থনীতিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।  গেল বছর নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে ছিল। নতুন বছরেও জিনিসপত্রের দাম যেন সাধারণ মানুষের হাতের নাগালেই থাকে। ২০১৯ সালে পদ্মা সেতুর কাজ শেষ হবে। এই সেতুর কাজ সম্পন্ন হলে তা দেশের দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির নতুন সোপান রচনা করবে।

অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি গুরুত্বপূর্ণ দুটি বিষয়। কর্মসংস্থান সৃষ্টি হলে তাতে বেকারত্ব কমে। আশার বিষয়, সদ্য নির্বাচিত রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির ওপরে জোর দিয়ে নতুন উদ্যোক্তা তৈরির উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। বিশ্বের উচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ৯। এটি আশাব্যঞ্জক।

জনমানুষের আরেকটি প্রত্যাশা হলো- নগরে যানজট দূর হোক। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকার যানজট মানুষের মূল্যবান কর্মঘণ্টা ও কর্মজীবনকেও নষ্ট করছে। রাজধানীবাসীর চাওয়া- মেট্রোরেলের কাজও দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাক। মেট্রোরেলের মূল অবকাঠামো নির্মাণের কাজ এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। এই কাজ শেষ হলে রাজধানীবাসী যানযটের অভিশাপ থেকে মুক্ত হবে।

সুস্থ ও সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার অন্যতম বড় অবলম্বন হলো নির্মল পরিবেশ। বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনগত উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা অন্যতম দেশ। এখানে আবহাওয়াগত পরিবর্তন দ্রুত ঘটছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলার সক্ষমতা আমাদের বাড়াতে হবে। পরিবেশের অন্যতম বড় উপাদান নদী। অথচ নদীমাতৃক এই দেশের নদীগুলো নাব্য হারাচ্ছে, দখল ও দূষণের শিকার হয়ে বিপন্নপ্রায়। ভরসার কথা, আওয়ামী লীগ তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, দেশের ১০ হাজার কিলোমিটার নৌপথ উদ্ধার করা হবে। এ কাজের বাস্তবায়ন যেন নতুন এই বছরের প্রথম থেকেই শুরু করা হয়। তিস্তা চুক্তি ঝুলে আছে বহুদিন ধরে। নতুন বছরে এ ইস্যুটি যেন সফল পরিণতি পায়। আর ঢাকার চারপাশের দখল ও দূষণের শিকার নদীগুলো উদ্ধার করে নির্মল পরিবেশের প্রত্যাশাও যেন পূরণ হয়।

ফেলে আসা বছরে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত (এলডিসি) দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হওয়ার পথে পা বাড়িয়েছে। এই যাত্রাপথে এগিয়ে যাওয়ার সব যোগ্যতা ও শর্ত পূরণ করেছে বাংলাদেশ। রাষ্ট্রের লক্ষ্য, ২০২৪ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হওয়া। এই রূপান্তরের পথে দ্রুতগতিতে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে সরকার-জনগণ সবাইকে। আঞ্চলিক বিবেচনায় নানা সূচকে বাংলাদেশ সারাবিশ্বে নানা দিক দিয়েই এগিয়ে আছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্র ও ছাত্রী সমতা বিধান হয়েছে। এ ছাড়া মাতৃমৃত্যুর হার ও জন্মহার কমানো, প্রাথমিক শিক্ষায় শতভাগ শিশুকে স্কুলে আনাসহ শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশ সারাবিশ্বে অকুণ্ঠ প্রশংসা কুড়িয়েছে।

প্রত্যাশা যেমন বিপুল, বাংলাদেশের সম্ভাবনাও তেমনি বিপুল। জনমানুষের সবচেয়ে বড় প্রত্যাশা- দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকুক। গণতন্ত্রহীনতা, সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ, রাজনৈতিক হানাহানি, সংঘাত, লড়াই আর সহিংসতা আর ফিরে না আসুক। নারীর প্রতি আরও মানবিক হোক রাষ্ট্র। আইনের শাসন সুপ্রতিষ্ঠিত হোক। মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারকাজ অব্যাহত থাকুক। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক দেশ হোক প্রিয় মাতৃভূমি।

ট্যাগ :

আরো সংবাদ

ফেইসবুকে আমরা



আর্কাইভ
November 2024
M T W T F S S
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031  
আলোচিত খবর

error: কি ব্যাপার মামা !!