তারা যেন ‘ঢাল নেই, তলোয়ার নেই, নিধিরাম সর্দার’। কর্মীবিহীন এসব নেতাদের প্রতি এভাবেই তোপ দাগালেন বিএনপির তৃণমূল কর্মীরা। বিএনপির সাথে ঐক্যফ্রন্টের জোট গঠনের পূর্বে থেকেই ক্ষোভ দানা বাঁধছিলো তৃণমূলে। জোট গঠনের পরে তা ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে। এরপর বিএনপি নেতাদের পাশ কাটিয়ে বিভিন্ন আসনে ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের মনোনয়ন দেয়ায় তা রূপ নেয় বিদ্রোহে। খোদ তৃণমূল কর্মীরাই ‘মোটা অঙ্কের টাকা লেনদেন’ এর অভিযোগ আনেন। অভিযোগের মূল তীর ছিল পলাতক তারেকের দিকেই। অনেক নেতাই প্রকাশ্যে তারেকের বিষেদাগার করেন। বিদ্রোহ ও ক্ষোভের এ আগুন থেকে রেহাই পাননি ঐক্যফ্রন্ট নেতারাও।
বিভিন্ন আসনে প্রচার চালাতে গিয়ে বিএনপির তৃণমূলের সহযোগিতা পাচ্ছেন না তারা। এমনকি একাধিক আসনে রয়েছেন বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী। এসব প্রার্থী ও তাদের সমর্থকেরা কেন্দ্রের সিদ্ধান্তকে করছেন থোড়াই কেয়ার। এমনকি নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে গিয়েও বিএনপি নেতাকর্মীদের তোপের মুখে পড়ছেন ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করা ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা। বিএনপি নেতাকর্মীরা তাদের ‘ভাড়া করা’ বা ‘রোহিঙ্গা’ বলে অভিহিত করছেন।
বিএনপির তৃণমূলের একজন কর্মী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, উড়ে এসে জুড়ে বসা এসব অতিথি পাখিকে আমরা মেনে নিবো না। যারা নির্বাচনে নিশ্চিতভাবে জামানত হারাবেন, তাদের পাশে আমরা নেই।
ইতোমধ্যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে সুলতান মনসুর, মাহমুদুর রহমান মান্না, শাহাদাত হেসেন সেলিমসহ ঐক্যফ্রন্টের বেশ কয়েকজন নেতার। ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা কামাল হোসেন তো জামানত হারাবার ভয়ে নির্বাচনেই আসেননি।
লক্ষ্মীপুর-১ (রামগঞ্জ) আসনে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী সাহাদাত হোসেন সেলিম। সেখানে তাকে ভালোভাবে নিচ্ছেন না বিএনপি নেতাকর্মীরা। এই ব্যাপারে উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি নুর নবী চেয়ারম্যান বলেন, ‘সাহাদাত হোসেন সেলিম বিএনপির পিঠে ছুরি মারা সুযোগসন্ধানী লোক। এছাড়াও তিনি গত ৫ বছরে রামগঞ্জের কোনো খবর রাখেননি। কোনো নেতাকর্মীর আপদে বিপদে দেখা যায়নি তাকে। আওয়ামী লীগের দ্বারে দ্বারে ঘুরে পাত্তা না পেয়ে কৌশলে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হয়েছেন। তাই অধিকাংশ বিএনপি নেতাকর্মী তাকে প্রত্যাখ্যান করেছে।’
ঐক্যফ্রন্টের নেতা সুলতান মনসুর। তিনি ধানের শীষের প্রার্থী কিন্তু তার পোস্টারে নেই জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া কিংবা তারেক রহমানের ছবি। আছে শুধুই ধানের শীষ। প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়েও নেই জিয়া পরিবারের কারো ছবি। ফলে ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা।
স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে এ নিয়ে দেখা দিয়েছে বিরূপ প্রতিক্রিয়া। অনেকেই বলছেন ধানের শীষের প্রার্থীর ব্যানারে নেই জিয়া পরিবারের কারো ছবি এটা ভালোভাবে নিচ্ছেন না তৃণমূল নেতাকর্মীরা। এমনকি বিভিন্ন স্থানে তার দিকে ছুঁড়ে দিচ্ছেন প্রশ্নের বান। অনেকেই চুপে চুপে ভাড়াটিয়া প্রার্থী বলেও উল্লেখ্য করছেন তাকে।
নির্বাচনী প্রচারণায় গিয়েই বিএনপি কর্মীদের তোপে পড়েছেন মাহমুদুর রহমান মান্নাও। একটি নির্বাচনী সভায় তাকে উদ্দেশ্য করে স্থানীয় এক বিএনপি নেতা বলেন, ‘এখানে কর্মী সভায় আপনার দলের ক’জন উপস্থিত হয়েছেন? একজনও তো নাই। বগুড়ায় আসছেন ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে।’ বিএনপির ওই নেতার কথায় বিরক্ত হয়ে মান্না বলেন, ‘কে কোন দলের তা কোন বিষয় নয়, বিষয় হলো ‘ধানের শীষ’ প্রতীক।
ঢাকা-৭ আসনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করা গণফোরামের নেতা মোস্তফা মোহসীন মন্টুও পড়েছেন বিব্রতকর পরিস্থিতিতে। এ আসনের বিএনপি নেতাকর্মীরা তাকে কোনো প্রকার সহযোগিতা করছেন না। ফলে একলা চলো নীটিতে এগোচ্ছেন কর্মীবিহীন এ নেতা।
ঢাকা-৭ এর চেয়েও খারাপ অবস্থা গাজীপুর-৩ আসনে। এখানে ধানের শীষ প্রতীক দেওয়া হয়েছে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের ইকবাল সিদ্দীকিকে। বিএনপির স্থানীয় একজন নেতা বলেছেন, ৩০ বছর রাজনীতি করি। এ নামে এই এলাকায় কোন রাজনীতিবিদ দেখি নাই।