গোয়েন্দা প্রতিবেদনে তথ্যঃ-গোপন পথে আসছে অস্ত্র;ফের অশান্ত হচ্ছে পাহাড়


প্রকাশের সময় :২৫ এপ্রিল, ২০১৭ ১২:৩৫ : পূর্বাহ্ণ 669 Views

সিএইচটি টাইমস নিউজ ডেস্কঃ-বাংলাদেশের পূর্ব-দক্ষিণের পাহাড়ি অঞ্চলের ৩টি জেলায় আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা।এ তিনটি জেলা হচ্ছে-বান্দরবান,রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি।১৯৯৭ সালে জনসংহতি সমিতির সঙ্গে তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার শান্তি চুক্তি করে এ জনপদে শান্তি ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।কিন্তু শান্তি চুক্তির বিভিন্ন শর্ত বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতার অভিযোগ তুলে গত কয়েকবছর ধরে পাহাড়ে ক্রমেই বেড়ে চলেছিল উত্তাপ।সম্প্রতি তা আবার সশস্ত্র পথে হাটতে শুরু করেছে বলে নানান সূত্র জানা গেছে।তাছাড়া,জন সংহতি সমিতির পক্ষ থেকেও বারংবার সরকারকে হুঁশিয়ারী দেওয়া হয়েছে।বলা হয়েছে,শান্তিচুক্তি অবিলম্বে বাস্তবায়ন না হলে যে কোনও সময় পরিস্থিতি অবনতি ঘটতে পারে।অভিযোগ রয়েছে,ভারত ও মিয়ানমারের কয়েকটি সন্ত্রাসী গ্রুপের কাছ থেকে বাংলাদেশের পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা নতুন করে অস্ত্র সংগ্রহ করার।একই সঙ্গে এ সব অস্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে শান্ত পাহাড়ের জনপদকে ফের উত্তপ্ত করার কাজে। সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে,স্থানীয়ভাবে এ চক্রের সঙ্গে ইউপিডিএফ (ইউনাইটেড পিপলস্ ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট) ও জনসংহতি সমিতির মত আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের নেতারা জড়িত।তাদের পাশে নাম উঠে এসেছে বেশ কয়েকজন জনপ্রতিনিধিরও।প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে এ সব তথ্য জানানো হয়েছে।এতে বলা হয়েছে,হত্যা-অপহরণের মত জঘন্য কাজে এ সব অস্ত্র ব্যবহার করেছে পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা।এছাড়া রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় যেন কোনও জঙ্গি সন্ত্রাসী তাদের অপকর্ম ও দেশ বিরোধী কার্যক্রম চালাতে না পারে তার জন্যেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে ওই গোয়েন্দা প্রতিবেদনে।স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এ সম্পর্কে বলেন,এই পাহাড়ি অঞ্চলের সীমান্ত ব্যাপক বিস্তৃত এবং দুর্গম।এখানে দূর্গম-দুর্ভেদ্য পাহাড়ি সীমান্ত যেমন রয়েছে,তেমনি রয়েছে বনাঞ্চলবেষ্টিত বিস্তৃত সীমান্তও।তার ফাঁক-ফোকর গলিয়ে দু-একটি অস্ত্র-শস্ত্র আসা অস্বাভাবিক নয়।তবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এ সব দমনে সর্বাত্মক চেষ্টা করছেন বলে দাবি করেন তিনি।গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলে তৎপর বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠী সাম্প্রতিকালে আবারও নানা ধরনের অরাজকতায় মেতে উঠেছে।কয়েকটি ঘটনার বিবরণ তুলে ধরে ওই প্রতিবেদনে সন্ত্রাসী দলগুলির অস্ত্র সংগ্রহের কৌশল সম্পর্কে জানিয়েছে,তারা (সন্ত্রাসী) বাংলাদেশের সীমান্তে লাগোয়া দু’টি দেশের (ভারত ও মায়ানমার) বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠির কাছ থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করছে।গত বছরের আগস্ট ২৫ টি রাইফেল ও গুলির চালান এইসব সন্ত্রাসী দলের হাতে চলে এসেছে।তার বাইরেও গোপনে আনা ১৬টি একে ৪৭ রাইফেলের একটি চালান সেনাবাহিনীর একটি দল আটকে দিয়েছে।এ সব অস্ত্র পার্বত্য চট্টগ্রামকে অস্থিতিশীল করতে আনা হচ্ছিল গোয়েন্দা সূত্র নিশ্চিত হয়েছে।প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে,মিয়ানমারের আরাকান লিবারেশন পার্টি,আরাকান আর্মি,রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন,ভারতের মিজোরামের মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্ট ও আসামের উলফার মত সশস্ত্র দলগুলির কাছ থেকে অস্ত্র আনার জন্য ইতিমধ্যে টাকার লেনদেনও সম্পন্ন করেছে পাহাড়ের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা।প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,বান্দরবানের থানচি উপজেলার জেএসএস (জন সংহতি সমিতি) এর সভাপতি এবং উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান চ সা থোয়াই মারমা ওরফে পক্স,তার ছোট ভাই মাং ব্রা এবং রুমা উপজেলার জেএসএস এর সভাপতি লু প্রুর তত্ত্বাবধানে ভারতের মিজোরাম থেকে অস্ত্র আনা হয়।আর এ সব অস্ত্র আনা নেওয়ার কাজ করে ভারত-বাংলাদেশ ট্রাইবংশন এলাকার কমান্ডার বো থো উইন এর নেতৃত্বে একটি দল।এ দলে অন্তত আট জন পাহাড়ি সন্ত্রাসী রয়েছে বলে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র নিশ্চিত করেছে।এছাড়াও ‘বড় মদক’ এলাকায় নৌকা চালাক হ্লা মং এই চক্রের অন্যতম একজন নেতা। তবে এ সবই অপপ্রচার বলে দাবি করেছেন অভিযুক্ত হিসেবে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে নাম আসা উল্লেখিত ব্যক্তিরা।থানচি উপজেলার জেএসএস সভাপতি এবং উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান চ সা থোয়াই মারমা ওরফে পক্স দাবি করেন,এ ধরনের ষড়যন্ত্র তার বিরুদ্ধে অতীতেও করা হয়েছিল,বর্তমানেও করা হচ্ছে।তবে,তিনি এ সব কাজে জড়িত নন।চ সা থোয়াই মারমার কথায়-এখানে আর্মি,বিজিবি,পুলিশসহ গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে,তাদের চোখ আড়াল করে এ সব কিভাবে সম্ভব? তার আরও দাবি হচ্ছে,এ সব তার বিরুদ্ধবাদীদের ষড়যন্ত্র মাত্র।রুমা উপজেলার জেএসএস এর সভাপতি লু প্রু দাবি করেছেন,তাকে হয়রানি করার জন্যই প্রশাসনের কাছে এমন অভিযোগ জমা করা হয়েছে।লু প্রু জানান, তিনি কেমন লোক তা স্থানীয় প্রশাসন ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা ভাল করেই জানেন।এদিকে,নানা উপায়ে বেশ কিছু অস্ত্রের চালান দেশে প্রবেশ করলেও ভবিষ্যতে আর যেন এভাবে অস্ত্র-শস্ত্র না আসতে পারে তা ঠেকাতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে আরেও তৎপর হওয়ার জন্য বলা হয়েছে প্রতিবেদনে।যেহেতু প্রতিবেশি দেশ দু’টি থেকে অস্ত্র আসছে,তাই তা ঠেকাতে ওই দেশগুলির সাথে যোগাযোগ করে এই বিষয়ে তাদের অবহিত করার সুপারিশও রয়েছে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে।উৎসঃ-(কুদ্দুস আফ্রাদ,ঢাকা অফিস,দৈনিক পূর্বকোন)

ট্যাগ :

আরো সংবাদ

ফেইসবুকে আমরা



আর্কাইভ
November 2024
M T W T F S S
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031  
আলোচিত খবর

error: কি ব্যাপার মামা !!