রোহিঙ্গা সংকটের এক বছর পূর্তি, বিশ্ব মানবতার আঁতুরঘর বাংলাদেশ


প্রকাশের সময় :২৯ আগস্ট, ২০১৮ ৭:১৯ : অপরাহ্ণ 552 Views

বান্দরবান অফিসঃ-রোহিঙ্গা সঙ্কটের এক বছর সময় পেরিয়ে গেছে। রোহিঙ্গাদের উপর মায়ানমার সেনাবাহিনীর নৃশংস নির্যাতনকে জাতিগত নিধন বলে আখ্যায়িত করেছে জাতিসংঘ। গত বছরের এই সময়ে মায়ানমার সেনাবাহিনীর অবর্ণনীয় নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে নিজের মাতৃভূমি ছেড়ে বাংলাদেশের কক্সবাজার সীমান্তে পাড়ি জমিয়েছিল রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা অধিবাসীরা।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবিক দিক বিবেচনা করে সেসময় প্রায় দশ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। এরপর থেকে রোহিঙ্গারা কক্সবাজার সীমান্তে বসবাস করে আসছে। স্থানীয় অধিবাসীরাও মানবতার কথা বিবেচনা করে রোহিঙ্গাদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।

বর্তমানে সারা বিশ্বে সব চাইতে বড় শরণার্থী শিবির হচ্ছে বাংলাদেশের রোহিঙ্গা ক্যাম্প। তৃতীয় বিশ্বের একটি জনবহুল দেশ হয়েও বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে যে মানবতার নজির সৃষ্টি করেছে বাংলাদেশ তা বিশ্বে বিরল। নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশ তার মানবতার দরজা খুলে দেয়াতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তথা বাংলাদেশকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়েছেন বিশ্বনেতারা। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে মানবতার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘মাদার অফ হিউম্যানিটি’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছে।

দশ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে আশ্রয় দেয়ার পাশাপাশি তাদের জীবন ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধাও সরবরাহ করেছে বাংলাদেশ সরকার। রোহিঙ্গাদের থাকার জন্য অস্থায়ী ঘর নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। নিরাপদ পানির জন্য স্থাপন করা হয়েছে পর্যাপ্ত টিউবওয়েল। তাদের মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ দেয়া হয়েছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। সোলার প্যানেলের মাধ্যমে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করে দিয়েছে সরকার।

এদিকে রোহিঙ্গাদের মানবিক সেবা দেয়ার পাশাপাশি তাদেরকে নিজ মাতৃভূমিতে ফেরত পাঠাতে কূটনৈতিক কার্যক্রমও চালু রেখেছে সরকার।

রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য মায়ানমারের সাথে আলোচনা অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ। বিভিন্ন বৈশ্বিক সম্মেলনে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিশ্বনেতাদের কাছে মায়ানমারের উপর চাপ বৃদ্ধিরও আহ্বান জানানো হচ্ছে যাতে মায়ানমার রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিয়ে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে। সে লক্ষ্যে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে পাঁচ দফা প্রস্তাবও উত্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ধীরে ধীরে আন্তর্জাতিক জনমত গড়ে ওঠে সংকট সমাধানের পক্ষে। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত নিতে সম্মত হয় মায়ানমার সরকার। ইতোমধ্যে বেশ কিছু রোহিঙ্গা পরিবারকে মায়ানমার ফেরত নিয়েছে।

ভুপেন হাজারিকার লেখা ”মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য” এই অমর গানটি যেন বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দানের মাধ্যমে পূর্ণতা পেয়েছে। মানবতার জন্য সমগ্র বিশ্বে অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে বাংলাদেশ।

ট্যাগ :

আরো সংবাদ

ফেইসবুকে আমরা



আর্কাইভ
November 2024
M T W T F S S
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031  
আলোচিত খবর

error: কি ব্যাপার মামা !!