চীন থেকে পাঠানো পাঁচ লাখ টিকা দুই ডোজ হিসেবে আড়াই লাখ মানুষকে দেওয়ার জন্য পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে সরকার। মেডিক্যাল শিক্ষার্থীদের এই টিকা দিয়ে কলেজ খুলে দেওয়ার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। দেশে আবারও করোনার সংক্রমণ বেড়ে গেলে যাতে এই শিক্ষার্থীদের হাসপাতালগুলোতে করোনা রোগীর সেবায় কাজে লাগানো যায়, মূলত সেই উদ্দেশ্যেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরিকল্পনা অনুসারে আগামী মঙ্গলবার থেকে দেশের ৩৬টি সরকারি মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীদের এবং আরো কিছু কেন্দ্রে এই টিকার প্রয়োগ শুরু হবে।
এদিকে করোনাভাইরাসের টিকার সংকট কাটাতে নানামুখী উদ্যোগের বড় ধরনের সুফল মিলতে পারে আগামী মাসে। একাধারে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কয়েক ধরনের টিকা দেশে আসার পথ খুলেছে বলে জানিয়েছে টিকাসংক্রান্ত জাতীয় কমিটির গুরুত্বপূর্ণ সূত্র।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের টিকাদান কার্যক্রমের পরিচালক ডা. শামসুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, চীনের উপহারের টিকা থেকে ৩০ হাজার দেওয়া হবে দেশে থাকা চীনা নাগরিকদের। দেড় লাখ দেওয়া হবে সরকারি সব মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীদের। এ ছাড়া আগে বাদ পড়া স্বাস্থ্যকর্মী ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যরাও এখান থেকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা পাবেন।
তিনি বলেন, ‘মেডিক্যাল শিক্ষার্থীদের টিকা দিয়ে কলেজ খুলে দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা চলছে। কারণ, যদি আবারও করোনার সংক্রমণ বেড়ে যায়, তবে তখন ওই শিক্ষার্থীদের আমরা হাসপাতালগুলোতে করোনা রোগীর সেবায় কাজে লাগাতে পারব।’ তিনি বলেন, বাকি টিকা আসার পর সেগুলো কিভাবে দেওয়া হবে তা ঠিক করা হবে।
টিকাসংক্রান্ত জাতীয় কমিটির সূত্র মতে, আগামী মাসের শুরুতেই কোভ্যাক্স থেকে এক লাখ ৬২০ ডোজ ফাইজারের টিকা এসে পৌঁছবে দেশে। এর সঙ্গে চীনের উপহারের আরো ছয় লাখ ডোজ টিকাও কাছাকাছি সময়ে এসে যাবে। আর এর চেয়ে বড় সুখবর হয়ে আসতে পারে সবচেয়ে বেশি প্রত্যাশিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা। ভারতের সেরামে উৎপাদিত টিকা পেতে দেরি হলেও মধ্যপ্রাচ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য থেকে একাধারে ৫০ লাখ ডোজের বেশি অক্সফোর্ডের টিকা দেশে আসার ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে।
এর মধ্যে কোনোটি আসবে বিনা মূল্যে, আবার কোনোটি কিনে আনতে হচ্ছে সরকারিভাবেই। পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগেও কিছু টিকা দেশে নিয়ে আসার জন্য এরই মধ্যে একাধিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও উদ্যোগ নিয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরও আগের তুলনায় অনেকটাই জোরালো যোগাযোগ রক্ষা করে চলছে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকেও এ ক্ষেত্রে আগের তুলনায় বেশি সক্রিয় ভূমিকা রাখা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
টিকা কমিটির একাধিক সূত্র জানায়, চীনের উপহারের টিকার পাশাপাশি কয়েক লাখ ডোজ কেনা টিকাও আগামী মাসের মধ্যেই দেশে আসার জোর সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি কোভ্যাক্স থেকে ফাইজারের এক লাখ ডোজ ছাড়াও অক্সফোর্ডসহ আরো একটি কম্পানির কিছু টিকা আগামী মাসের শেষে বা জুনের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে দেশে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। এসব কারণে আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে দেশে চলমান অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিয়ে উৎকণ্ঠায় না থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
গতকাল অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. রোদে আমিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সরকারি নতুন কোনো সিদ্ধান্ত নেই ১২ বা ১৬ সপ্তাহ পর টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে। তবে বিভিন্ন দেশে পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে, ১২-১৬ সপ্তাহ পরে দ্বিতীয় ডোজ দিলে কার্যকরিতা বেশি পাওয়া যায়। ফলে যাঁরা প্রথম ডোজ নিয়েছেন, তাঁদের সবার জানা দরকার যে তাঁদের মূল সুরক্ষার জায়গাটি তৈরি হয়ে গেছে। ৮০ শতাংশেরও বেশি সুরক্ষাবেষ্টনী তাঁদের শরীরে রয়েছে। আর দ্বিতীয় ডোজ বুস্টার হিসেবে কাজ করবে। ১২ সপ্তাহ না ১৬ সপ্তাহ পর দেওয়া হলো, সেটা কোনো উদ্বেগের বিষয় নয়। কোনো কোনো টিকা আছে, এক বছর পরে দিলে আরো ভালো কাজ করে। তবে আমাদের হাতে যখনই টিকা আসবে আমরা তখনই দিতে পারব। এমনকি দ্বিতীয় ডোজ না পেলেও যে প্রথম ডোজের কার্যকরিতা থাকবে না, সেটাও কিন্তু নয়।’
টিকা আসার ব্যাপারে ডা. রোদে আমিন বলেন, চেষ্টার কমতি নেই। বেশ কিছু সোর্স থেকেই টিকা আনার কাজ এখন এগিয়ে চলছে এবং অগ্রগতিও বেশ ভালো। তবে বিমানবন্দরে এসে না পৌঁছা পর্যন্ত নিশ্চিত করে বলা ঠিক নয়।
তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন দেশে প্রথম ডোজ এক টিকা এবং দ্বিতীয় ডোজ অন্য টিকা দিয়েও ভালো ফলাফলের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ ক্ষেত্রে আমাদের দেশেও বিশেষজ্ঞদের কাছে পরামর্শ চাওয়া হয়েছে। তাঁদের মতামতের সাপেক্ষে যাঁরা প্রথম ডোজ অক্সফোর্ডের টিকা নিয়েছেন তাঁদের অন্য টিকা দিয়েও সেকেন্ড ডোজ দেওয়ার চিন্তাভাবনা চলছে। এ ছাড়া যাঁরা রেজিস্ট্রেশন করেছেন কিন্তু প্রথম ডোজও দিতে পারেননি তাঁদেরও অন্য টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।’
এদিকে গতকাল অক্সফোর্ডের টিকার দ্বিতীয় ডোজ দিয়েছেন ৪১ হাজার ৪৬৭ জন। সব মিলিয়ে প্রথম ডোজ দিয়েছেন ৫৮ লাখ ১৯ হাজার ৯১২ জন ও দ্বিতীয় ডোজ দিয়েছেন ৩৯ লাখ ৭২ হাজার ২১৮ জন। এখন হাতে আছে চার লাখের অল্প কিছু বেশি। এতে আরো এক সপ্তাহের মতো চলবে বলে জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
Publisher - Lutfur Rahman (Uzzal)
Published By The Editor From chttimes (Pvt.) Limited (Reg.No:-chttimes-83/2016)
Main Road,Gurosthan Mosque Market, Infront of district food Storage, Bandarban hill district,Bandarban.
Phone - News - 01673718271 Ad - 01876045846
Copyright © 2024 Chttimes.com. All rights reserved.