

উথোয়াই মার্মা জয়,বান্দরবান সংবাদদাতাঃ- প্রতিবছর আদিবাসীদের ঘরে বৈসুক-সাংগ্রাই-বিজু আসে নতুন সাজে।দিয়ে যায় আনন্দের ফুলঝুরি, কিছু বেদনার স্মৃতি।এই আনন্দ-বেদনার মিশ্র প্রতিক্রিয়া ১৪টি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর দেহমনে জেগে ওঠে নতুন পরিবর্তনের শিহরণ, স্বপ্ন দেখে দিন বদলের,স্বপ্ন দেখে যেন নতুন এক সকালের।যার জন্য নতুন বছরকে বরণ করে নিতে পাহাড়ি জনপদে উৎসবে রং লেগেছে।নতুন বছরকে বরণ এবং পুরাতন বছর বিদায়কে ঘিরে পার্বত্য চট্রগ্রামের তিন জেলার ১৪টি ক্ষুদ্র আদিবাসী পাহাড়ি জাতিসত্ত্বার নিজস্ব সামাজিক ঐতিহ্য নিয়ে সমন্বিতভাবে সাংগ্রাই উৎসব পালন করে থাকে। শহরাঞ্চলে যা ‘বৈসাবি’ নামে পরিচিত।মারমা সম্প্রদায় সাংগ্রাই, ¤্রাে সম্প্রদায় চাংক্রান, খেয়াং সম্প্রদায় সাংগ্রান,খুমী সম্প্রদায় সাংগ্রায়, চাকমা সম্প্রদায় বিঝু ও তঞ্চঙ্গ্যা বিষু এবং ত্রিপুরা সম্প্রদায় বৈসু, এই চার সম্প্রদায়ের এই উৎসবকে সমষ্টিগত বৈসাবি বলা হয়।আদিবাসীদের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের উৎসবের যেমন ভিন্ন ভিন্ন নাম রয়েছে,তেমনি উৎসবের তিনটি দিনের নামও আলাদা।মারমারা প্রথম দিনকে সাংগ্রাই আকনিয়াহ,দ্বিতীয় দিনকে সাংগ্রাই আক্রাইনিহ ও শেষ দিনকে লাছাইংতার বলে।ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের লোকজন উৎসবের প্রথম দিনকে হারি বৈসুক,দ্বিতীয় দিনকে বিসুমা ও তৃতীয় দিনকে বিসিকাতাল বলে।চাকমাদের কাছে এগুলো ফুল বিজু, মূল বিজু ও গোজ্যেপোজ্য দিন হিসেবে পরিচিত।তবে পাহাড়ে মারমা সম্প্রদায়ের বৈসাবি উৎসবের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ থাকে রিলংপোয়েঃ। যা অন্য ভাষা-ভাষির লোকের কাছে মৈত্রী বর্ষণ, জলকেলি উৎসব বা ওয়াটার ফেস্টিবল বলে পরিচিত।এদিন সকল পাপাচার ও গ্লানি ধুয়ে-মুছে নিতে তরুণ-তরুণীরা একে অপরের গায়ে পানি ছিটানোর উৎসবে মেতে উঠে।পুরাতন বছরের সব গ্লানি, দুঃখ ও বেদনা ধুয়ে মুছে নতুন বছর যাতে সুন্দর এবং স্বাচ্ছন্দময় হয় সেজন্যই এসব প্রয়াস। পাহাড়ের প্রতিটি পাড়ায় পাড়ায় চলে পানি খেলা বা জলকেলি উৎসব। কিশোর-কিশোরী,তরুণ-তরুণী থেকে শুরু করে সব বয়সের মানুষ এই খেলায় মেতে উঠেন।উৎসব উদ্যাপনের দিন একই হলেও বান্দরবানের মারমা সম্প্রদায় বর্মি পঞ্জিকা অনুসারে এক দিন পরে উৎসব শুরু করে।অনেকে এলাকায় দলবেঁধে বুদ্ধমূর্তি গোসল করানো হয়।এরপর সারা দিন প্রস্তুতি চলে পরবর্তী দিন বা উৎসবের মূল দিনের খানাপিনা আয়োজনের।উৎসবের দ্বিতীয় দিনে প্রতিটি বাড়িতে নানা মুখরোচক খাবারের আয়োজন করা হয়।তৃতীয় দিনে দলবেঁধে মন্দিরে গিয়ে নতুন বছরের সুখ,শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা বা ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানাদি পালন করা হয়।
এদিকে,বান্দরবানের প্রধান পাহাড়ি জাতিসত্ত্বা মারমা সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী সাংগ্রাই উৎসব উপলক্ষে ৪ দিনব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সমবেত প্রার্থনা,২দিনব্যাপী রিলংপোয়েঃ (পানি খেলা),পিঠা তৈরি,ঘিলা খেলা, বৌদ্ধ মূর্তি স্নান,হাজারো প্রদীপ প্রজ্জ্বলন,বয়স্ক পূজা এবং আদিবাসী নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী নৃত্য-গানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।মারমাদের প্রাচীন ও বিলুপ্তিপ্রায় বিভিন্ন খেলাধুলা এই উৎসবকে আরো আকর্ষণীয় করে তোলে।সাংগ্রাই উৎসবকে ঘিরে বান্দরবানে সাত উপজেলায় পাহাড়ি পল্লিগুলোতে সাজ সাজ রব।