লামায় ইটভাটার ধোঁয়া আর তামাকের ঘ্রাসে পরিবেশ বিপর্যয়ের সম্মুখে…!!!


প্রকাশের সময় :১৫ জানুয়ারি, ২০১৮ ৩:১০ : পূর্বাহ্ণ 742 Views

উথোয়াই জয় (লামা) বান্দরবানঃ-সামাজিক বনায়ন বা পাহাড়ে বাগান।যার থেকে আমরা প্রতিনিয়ত অক্সিজেন পাই।সে সামাজিক বনায়ন বা পাহাড়ে সৃজনকৃত বাগান এখন যেন নেড়া হয়ে বসে আছে।বলা যায় ইতিমধ্যেই নেড়া হয়ে গেছে।কিছুতেই তা রক্ষা করা যাচ্ছে না।কেন না রক্ষা করা যাবে?কারণ এ মৌসুম যে নেড়া হওয়ার মৌসুম।কেনই বা এ মৌসুমে নেড়া করা হচ্ছে আমাদের সৃজনকৃত সামাজিক বনায়ন বা পাহাড়ে এক এক ফোঁটা করে ফেলানো মাথার ঘামের রোপনকৃত গাছগুলো? অবশেষে চোখের দেখা মিলে সে নেড়া হওয়া স্থলে যারা এতদিন আমাদের অক্সিজেন দিতো তাদের কি না করাতের সাহায্যে কর্তন করে ট্রলি টু ট্রলি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সে ইটভাটায় আর তামাক পুরানোর চুল্লিতে।এবার আসা যাক মূল কথায়। ৬৭১.৮৪ বর্গকিলোমিটার আয়তন জুড়ে লামা উপজেলায়। যেদিকে তাকাই সেদিকেই দেখা মিলে প্রকৃতি ও সৃজনকৃত সবুজ বনবনানী।আর তারও একটি ইউনিয়নের আয়তন ৬৪.৭৫ বর্গকিলোমিটার। যেখানে সবচেয়ে ইটেভাটার জোন।একটি নয় দুইটি নয় একেবারে ২৩টি ইটভাটা রয়েছে।যার মধ্যে অধিকাংশ ইটভাটা টিনের চিমনি,যা অবৈধভাবে স্থাপিত।তাহলে তো বুঝতেই পারছেন।আর এই ২৩টি ইটভাটার নিয়ন্ত্রণ করছেন অত্র অঞ্চলেরই এক প্রভাবশালী দাপুটে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এবং কবীর আহমেদ নামে এক ব্যাক্তি। এসব যেনো দেখার কেউ নেই,যারা আছেন তারা দেখেও না দেখার ভান করছে।যার ফলে অবৈধ ইট ভাটা গুলোতে অবাধে জ্বলছে আমার-আপনার সৃজনকৃত সামাজিক বনায়নের গাছ।যে গাছটি কিনা এক সময় আমার-আপনার জন্য অক্সিজেন দিতো,পারিবারিক কোন নির্মাণ কাজে বা বাগানে রোপনকৃত গাছটি বিক্রি করে হলেও ছেলে-মেয়ের পড়ালেখা খরচে কাজে লাগাতো।কিন্তু আজ তেমন না হয়ে উল্টো ভাবে ইটভাটায় জড়ো হচ্ছে সামাজিক বনায়নের হাজার হাজার মনের গাছগুলো।কোন এক কাজের ফাঁকে যাওয়া হয়েছিলো সে ইটভাটা জোনে।এতদিন অন্যের মুখে কথাগুলো কানে ভাসতো।কিন্তু সে দিন নিজ স্ব চোখে দেখেছি আর দেখছিলাম।স্থানীয় সূত্রে জানা যায় যেই সড়কের উপর ৫টনের অধিক যানবাহন চলাচলের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে অথচ সেই সড়কেই কি না প্রত্যেক দিন সরকারের নীতিমালা তোয়াক্কা না করেই ২৪ ঘন্টায় প্রায় ৮শত গাড়ি চলাচল করছে। কেও ইটভাটায় ইট পোড়ানোর জন্য ট্রাক টু ট্রাক জ্বালানী কাঠ নিয়ে ঢুকছে ইটভাটা গুলো তে আবার কেও কেও ট্রলি টু ট্রলি ইট নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কোন বিত্তবানের বসত বাড়ি নির্মাণ করার কাজে।আবার কিছু কিছু ইটভাটার সামনে লোক দেখানো কিছু কয়লা স্তুপ করে রাখা হলেও এসব কয়লা ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে আদৌ ব্যবহারই করা হচ্ছে না। এসব অবৈধ ইটভাটার কারণে এসব ইউনিয়নের বেশির ভাগ জায়গায় কৃষি জমি নষ্ট করে গড়ে তোলা হচ্ছে ইটভাটা।যার কারণে ফাইতং ইউনিয়নে ইটভাটা সংলগ্ন পাহাড়ি গ্রাম রাইম্যাখোলা,শিবাতলী পাড়া, মংব্রাচিং কারবারী পাড়া,ফাদু বাগান পাড়া, হেডম্যান পাড়া ও বাঙালি পাড়ার অধিবাসী কৃষকরা পড়েছেন বড় বিপাকে।অন্যদিকে লামায় কৃষি জমিকে গিলে খাচ্ছে তামাক।যে সময়ে কৃষকরা সবজি চাষ নিয়ে ব্যস্ত থাকার কথা সে সময়ে দৃশ্যমান লাভের আশায় ক্ষতির দিকটি জেনেও তারা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে তামাক চাষে।যেদিকে চোখ যায় সেদিকে শুধু দেখা মিলে তামাক ক্ষেত আর ক্ষেত। আর সে ক্ষেতে তামাক পুরানোর জন্য কৃষকরাও উঁচু উঁচু তামাক চুল্লিতে স্তুপ তৈরি করছে সামাজিক বনায়নের জ্বালানি কাঠ।তামাক চারা বড় হচ্ছে কিছু দিনের মধ্যে চুল্লিগুলোতে জ্বলে উঠবে জ্বালানি কাঠ।সে তামাক চুল্লিগুলি আর ইটভাটার চিমনি থেকে বের হওয়া বিষাক্ত কালো ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ায় স্থানীয় অধিবাসীদের সৃজনকৃত ফলজ বাগানের ফলন কমে যাচ্ছে।অন্য দিকে বিলুপ্ত হচ্ছে বন্যপ্রাণী আর রীতিমত স্বাস্থ্য ঝুঁকিসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে এলাকার শিশু থেকে শুরু করে বয়স্করাও।সবশেষে ইতি টানছি এই বলেই,ইটভাটার বিরুদ্ধে আইনানুগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক আর নেড়া হওয়া সামাজিক বনায়নে ভরে উঠুক সবুজের সমারোহ।কারণ একটি গাছ একটি প্রাণ,লক্ষ গাছ লক্ষ প্রাণ।লক্ষ প্রাণে বন তৈরি হয়,একটি বনে লক্ষ প্রাণ রয়।একটি বনে লক্ষ গাছ,লক্ষ পশুপাখী আসে আর আমরা তাদের যত্ন করে রাখি।

ট্যাগ :

আরো সংবাদ

ফেইসবুকে আমরা



আর্কাইভ
November 2024
M T W T F S S
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031  
আলোচিত খবর

error: কি ব্যাপার মামা !!