স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন প্রধান প্রফেসর তোফায়েল আহমেদ বলেছেন,নির্বাচন না হলে পার্বত্য জেলা পরিষদ বৈধতা হারিয়ে ফেলবে।জেলা পরিষদের নির্বাচন করতে হলে ঐকমত্যের প্রয়োজন আছে।সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনদের মধ্যে কিছু ছাড় দেওয়ার প্রশ্ন আসবে।পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ এবং জেলা পরিষদের নির্বাচনের ব্যাপারে ঐকমত্য না হলে নির্বাচন হবে না।স্থানীয় পর্যায়ে একটি জোরালো ঐকমত্য গড়ে তুলতে হবে এমনটাই তিনি মনে করেন।দেশের বিভিন্ন জেলায় অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভাগুলোতে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে জাতীয় প্রতীক না রাখতে জোরালো দাবি উঠেছে উল্লেখ করে দাবীটি কে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেখছে কমিশন এমনটাও সভায় তিনি উল্লেখ করেন।
সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) সকালে রাঙামাটি সার্কিট হাউজ সভাকক্ষে আয়োজিত বান্দরবান জেলা এর বিভিন্ন অংশীজনদের সাথে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন প্রফেসর তোফায়েল আহমদ।তিনি বলেন পার্বত্য চট্টগ্রামে পৃথক ভোটার তালিকা এখনকার আইনে সম্ভব হবে না।নির্বাচন কমিশনের যে আইন আছে তাতে নির্বাচন কমিশনের পৃথক তালিকা করা সম্ভব হবে না।যে তালিকা আছে সেই তালিকায় নতুন করে কিভাবে অন্তর্ভুক্ত করা যায় সবাইকে তা নিয়ে ভাবতে হবে।আমাদের আলোচনার ভিত্তিতেই একটা পথ বের করতে হবে।যে যার অবস্থানে অনড় থাকলে এই নির্বাচন হবে না।নির্বাচন না হলে এই প্রতিষ্ঠান এর কোনো বৈধতা থাকবে না।এসময় তিন পার্বত্য জেলার সার্বিক বিষয় সংবেদনশীলভাবে দেখছে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন এমনটা উল্লেখ করে অন্তর্বর্তী সরকারের সময়েই জেলা পরিষদ নির্বাচন করা উচিৎ বলেও মন্তব্য করেন কমিশন চেয়ারম্যান প্রফেসর তোফায়েল।
প্রফেসর তোফায়েল আরও বলেন,পার্বত্য চট্টগ্রামে চাকরির ক্ষেত্রে প্রচুর দুর্নীতি ও বৈষম্য হচ্ছে।সেক্ষেত্রে একটা সমতা,স্বচ্ছতা ও যোগ্যতার নীতি অনুসরণ করতে হবে।এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতি ঠিকাদাররা ট্যাক্স না দেওয়ার সুবিধা নিয়ে বাঙালিদের কাছে কাজ বিক্রি করছে,এতে উন্নয়ন কাজে প্রচুর দুর্নীতি হচ্ছে,কাজগুলো ঠিকমতো হচ্ছে না।সর্বক্ষেত্রে ১২/১৪জন লোক কন্ট্রাকগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে।কমিশন সদস্য অধ্যাপক ফেরদৌস আরেফিনা ওসমান,এ্যাডভোকেট আবদুর রহমান,ড.মাহফুজ কবীর, মাশহুদা খাতুন শেফালী,ড.মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম,লেখক ও মানবাধিকার কর্মী ইলিরা দেওয়ান,ড.কাজী মারুফুল ইসলাম এসময় উপস্থিত ছিলেন।সভায় সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজ্বন) সভাপতি ও মানবাধিকার কর্মী অং চ মং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং সদস্যদের ভাতা বৃদ্ধি,নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর সময় কমিয়ে আনা,প্রকল্পে কাজ শুরু এবং শেষ করাটা ভিডিও ধারণ করে তা প্রতিবেদন প্রকাশ করা, পরিষদের কার্যক্রম সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে কিনা তার জন্য মনিটরিং কমিট গঠন,উপজেলা পর্যায়ের সকল কর্মকর্তাদের কর্মস্থলে অবস্থান নিশ্চিত করা,জেলা পরিষদের সদস্যদের ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স নির্ধারনসহ ৭টি প্রস্তাব উত্থাপন করেন।
সভায় বান্দরবান সদরের সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুছ অতিদ্রুত জেলা পরিষদগুলোতে নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানিয়ে তিন পার্বত্য জেলা পরিষদে বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী থেকে এক জন করে ভাইসচেয়ারম্যান পদ সৃষ্টি করার দাবি জানান।এসময় তিনি পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাচন কে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্বারোপ করার আহবান জানিয়ে আরও বলেন,নির্বাচিত জেলা পরিষদ কার্যকর থাকলে পার্বত্য চট্রগ্রামে পাহাড়ি-বাঙালী জনগোষ্ঠীর বহু সমস্যা সহজে সমাধান হতো।সাবেক এই উপজেলা চেয়ারম্যান,এমন একটি আয়োজনকে স্বাগত জানিয়ে বান্দরবান জেলায় আরও বড় পরিসরে এমন একটি মতবিনিময় সভা পুনরায় আয়োজনের আহবানও জানান।উন্নয়নকর্মী লেলুং খুমী স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রার্থীদের বয়স নির্ধারনের প্রস্তাব উত্থাপন করেন।লেলুং খুমি আরও বলেন,জেলা পরিষদের সাথে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বিত কার্যক্রম পরিচালনা নিশ্চিত করতে হবে।
মতবিনিময় সভায় থানচি উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ক্যাহ্লাচিং মারমা,বান্দরবান জেলা এর নারী অধিকার কর্মী নেমকিম বম,সাংবাদিক বুদ্ধজ্যোতি চাকমা,সাংবাদিক ও বান্দরবান জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি সদস্য লুৎফুর রহমান (উজ্জ্বল),ছাত্র প্রতিনিধি আসিফ মাহমুদ,হ্যাডমেন প্রতিনিধি উ নি হ্লাসহ বিভিন্ন শ্রেনীপেশার অংশীজনরা এসময় উপস্থিত ছিলেন এবং মতামত ও সুপারিশ উত্থাপন করেন।জানা যায়,স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন,স্থানীয় সরকার বিভাগ, রাঙামাটি জেলা প্রশাসন এবং ইউএনডিপি এর যৌথ আয়োজনে মতবিনিময় সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।বান্দরবান জেলার ১২ জন প্রতিনিধি মতবিনিময় সভায় স্থানীয় সরকার সংস্কার বিষয়ক বিভিন্ন প্রস্তাব মতবিনিময় সভাটিতে উপস্থাপন করেন।একই দিন বিকেলে রাঙামাটি জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে রাঙামাটি জেলার বিভিন্ন অংশীজনদের সাথে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।