সিএইচটি টাইমস নিউজ ডেস্কঃ-রাঙামাটি জেলার লংগদু উপজেলার সদর ইউনিয়ন যুবলীগ সাংগঠনিক সম্পাদক নয়ন হত্যাকাণ্ডের ঘটনাকে কেন্দ্র করে পাহাড়ীদের ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় শুরু হয়েছে পারস্পারিক দোষারোপ ও অপপ্রচারের বন্য। বাঙালী ও পাহাড়ী সমর্থিত সংগঠনগুলো একে অপরকে দোষারোপ করে গণমাধ্যমে প্রেসরিলিজ ও ফোন করতে থাকে অনেকে।এদিকে লংগদুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে সামাজিক গণমাধ্যমেও চলছে দুই পক্ষের প্রচার ও অপপ্রচার।এসব প্রচারণায় সত্যতার চেয়ে দোষারোপ ও উষ্কানীই বেশী পরিলক্ষিত।পার্বত্য নাগরিক পরিষদের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আলকাছ আল মামুন ভুইয়া এক টেলিফোন সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, ” সাদিকুল ও নয়ন হত্যাকাণ্ডের দায়ে পাহাড়ীরা যখন কোণঠাসা তখন মিডিয়া ও আন্তর্জাতিক মহলের সহায়তা লাভের উদ্দেশ্যে জেএসএস সন্ত্রাসীরা নিজেরাই নিজেদের ঘরে আগুন দিয়ে বাঙালীদের উপর দোষ চাপাচ্ছে।অতীতের অভিজ্ঞতায় পার্বত্যবাসীর জানা আছে,এটি পাহাড়ীদের খুব পুরাতন কৌশল।কারণ এ ঘটনায় তারা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সহমর্মিতা লাভের পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ ত্রাণ লাভ করে।তাদের ছনের ঘরের পরিবর্তে টিনের ঘর ওঠে,নগদ টাকা পায়।কাজেই এ ধরণের আগুনে তাদের বরং লাভই হয়।যদিও এই ত্রাণের টাকার সিংহভাগ উপজাতীয় সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো ভোগ করে। বাঘাইছড়ির ঘটনায়,তাইন্দঙের ঘটনায় আমরা পাহাড়ীদের এই অস্ত্রের ব্যবহার দেখেছি।২০১০ সালে বাঘাইছড়িতে চাকমারা নিজেরাই নিজেদের ঘরে আগুন দিয়ে বাঙালীদের দোষারোপ করেছিল বলে দৈনিক ইনকিলাবের কাছে স্বীকার করেছিল তৎকালীন সাজেক চেয়ারম্যান এল থাঙ্গা পাঙ্খু।এই সত্য প্রকাশের জন্য তার জীবনে নির্মম পরিণতি নেমে এসেছিল।আমরা প্রশাসনের কাছে দাবী করি লংগদুর ঘটনার প্রকৃত চিত্র দেশবাসীর কাছে তুলে ধরে দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হোক।” পার্বত্য গণপরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি এডভোকেট পারভেজ তালুকদার জানিয়েছেন, “কোন পাহাড়ী ছনের ঘর পুড়ালে টিনের ঘর পায় টিনের ঘর পুড়ালে পাকা ঘর পায়।এসব দেখিয়ে বিদেশীদের কাছ থেকে কোটি ডলার আনে।অতীতে বহুবার এসব হয়েছে।রমেল চাকমা একজন সন্ত্রসী ছিল।সে একে ৪৭ নিয়ে নানিয়ার চর এ চালকসহ ট্রাকভর্তি চাল পুড়িয়ে ছিল।আর সে ছিল UPDF নানিয়ার চর শাখার সেক্রেটারী।সে নিরীহ মোটর সাইকেল চালক ছাদিকুল হত্যার নির্দেশদাতা।অথচ তাকে নিয়ে কম রাজনীতি হয়নি।তাকে পুলিশ গ্রেফতার করতে গেলে সে সিএনজির আঘাতে মারাত্বক ব্যথা পায় এবং চট্টগ্রাম মেডিকেলে ৮ দিন পর মারা যায়।তার ঘটনায়ও পাহাড়ীরা নিজেদের ঘর পোড়াতে চেয়েছিল।কারণ একটি ঘর পোড়া ছবি সমান একলাখ ডলার।আর ঘর পোড়ানোর বিষয়টা গুজব হতে পারে।কারণ নয়ন হত্যার প্রতিবাদে লংগদু সদরে যখন মানুষ জানাজায় ব্যস্ত তখন সেখান থেকে ১৫ কিমি দূরে উপজাতীয় অধ্যুষিত এলাকায় বাঙালিরা জানের ভয় নিয়ে কোন দু:খে যাবে? যেসব ছবি এসেছে সেগুলো গারো সাঁওতালদের ঘটনার।চাইলে মিলিয়ে দেখতে পারেন।১৯৮৬ ৮৭ সালে উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা বাঙালিদের ঘর পুড়িয়ে দিত।বাঙালিরা প্রতিবাদ করলে তারা কৌশলে সাম্প্রদায়িক দাঙা লাগিয়ে দিত আর সে সুযোগে পাহাড়ীদের ঘর পুড়িয়ে দিত।আর পাহাড়ীদের হত্যা করত।ভয়ে নিরীহ পাহাড়ীরা ভারতে আশ্রয় নিত।আর সে আশ্রিত শরণার্থীদের নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে বিচার দিত আর কোটি কোটি ডলার এনে অস্ত্র কিনে সন্ত্রাস করত।এভাবে হত্যা হয়েছে ৩০,০০০ বাঙালি।১৯৮০ সালে পার্বত্য চট্রগ্রামে .০৫ % খ্রিস্টান ছিল আজ ১৭ % বিজ্ঞজন ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাজনীতি কোথায় বুঝতে পারছেনর। সপ্ন দক্ষিন এশিয়ায় একটি খ্রিস্টান রাস্ট্র কায়েমের।মোটর সাইকেল চালক নুরুল ইসলাম নয়ন হত্যার প্রতিবাদ ও তীব্র নিন্দা জানিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমঅধিকার আন্দোলন, রাঙ্গামাটি জেলা শাখার সভাপতি জনাব জাহাঙ্গীর আলম মুন্না,জেলা সাধারণ সম্পাদক জনাব জাহাঙ্গীর কামাল, জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মোঃ আবু বক্কর ছিদ্দিক,পৌর কমিটির সভাপতি কাজী মোঃজালোয়া, সাধারণ সম্পাদক মোঃশাহজাহান আলম পার্বত্য বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি মুহাম্মদ ইব্রাহীম,জেলা সিঃ সহসভাপতি মোঃনজরুল ইসলাম,সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃআসাদুজ্জামান খাঁন,সহ-সভাপতি মোঃবাদশা,যুগ্ম সম্পাদক এহসান উল্লাহ মুন্না,কলেজ সভাপতি মোঃনজরুল ইসলাম,পৌর কমিটির আহবায়ক মোঃআবছার সহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।নেতৃবৃন্দ বলেন, “নিহতের পরিবার ও স্থানীয় জনগণের ভাষ্য মতে তাকে দুইজন উপজাতি যাত্রী ভাড়া নেওয়ার কথা বলে ডেকে নিয়ে যায়।মহালছড়ির সাদিকুলকে যে ভাবে ডেকে নিয়ে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করা হয়েছে ঠিক একই ভাবে লংগদু উপজেলার নুরুল ইসলাম নয়ন কেও হত্যা করা হয়েছে।এ অঞ্চলকে বারবার অশান্ত করার অপচেষ্টায় উপজাতি সন্ত্রাসীদের একটি গ্রæপ কয়েকদিন পর পর পার্বত্য নিরিহ বাঙালিদের হত্যা,গুম,অপহরণ করেই যাচ্ছে,কিন্তু এগুলোর সুষ্ঠ তদন্ত পূর্বক বিচার না হওয়ায় আজ আবার এক নিরিহ মোটর সাইকেল চালককে অকালে জীবন দিতে হলো।আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।আমরা লক্ষ্য করছি লংগদুতে বাঙালিরা যখন নয়নের লাশের জানাজা ও বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ব্যস্ত তখন জেএসএস কর্মীরা নিজেরা নিজেদের ঘরে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। এটা তাদের পুরাতন অভ্যাস। এতে তাদের বিপুল লাভ। কারণ ছনের ঘরের পরিবর্তে টিনের ঘর ও সাথে বিপুল পরিমাণ ত্রাণ পায়। ২০১০ সালে বাঘাইছড়িতেও একই ঘটনা ঘটিয়েছিল। যে এলাকায় আগুন ধরানো হয়েছে সেটা সম্পূর্ণ চাকমা ও জেএসএস অধ্যুষিত এলাকা। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতেই বাঙালিদের পক্ষে সেখানে প্রবেশ সম্ভব নয়।তাদের এই চক্রান্ত রুখে দাড়ানোর জন্য পাহাড়ের প্রতিটি শান্তিকামী মানুষের প্রতি আহবান জানাচ্ছি।” লংগদুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে জেএসএসের (মূল) কেন্দ্রীয় তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মঙ্গল কুমার চাকমার পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “আজ রাঙ্গামাটি জেলার লংগদু উপজেলা সদরের তিনটিলা ও পার্শ্ববর্তী মানিকজুর ছড়ায় সেনা-পুলিশের ছত্রছায়ায় সেটেলার বাঙালি কর্তৃক জুম্মদের ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটসহ সংঘবদ্ধ সাম্প্রদায়িক হামলায় পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি তীব্র প্রতিবাদ ওনিন্দা জ্ঞাপন করছে। এ হামলায় লংগদু সদরের তিনটিলা এলাকায় জুম্মদের দুই শতাধিক ঘরাবাড়ি ও দোকানপাট এবং মানিকজুর ছড়ায় কমপক্ষে ৪০টির ঘরবাড়িসহ জুম্মদের প্রায় ২৫০টি ঘরবাড়ি সম্পূর্ণভাবে ভস্মীভূত হয়েছে।বেলা ১২টার দিকে স্থানীয় প্রশাসন এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে। কিন্তু ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে এই প্রেস বিজ্ঞপ্তি লেখার সময়সেনাবাহিনীর প্রহরায় সেটেলার বাঙালিরা দক্ষিণ মানিকজুরছড়া, বাত্যা পাড়া ইত্যাদি জুম্ম গ্রামে অগ্নিসংযোগ শুরু করেছে বলে জানা গেছে।উক্ত জঙ্গী মিছিল ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ,বিএনপি,জাতীয় পাটি, জামায়াতে ইসলাম প্রভৃতি জাতীয়রাজনৈতিক দল নির্বিশেষে এবং তথাকথিত সমঅধিকার আন্দোলন ও অন্যান্য সেটেলার বাঙালিদের সংগঠনের লোকজন অংশগ্রহণকরে বলে জানা যায়।তারই অংশ হিসেবে আজ সকল সাড়ে ১১টার দিকে উক্ত মোটর সাইকেল চালককে হত্যার প্রতিবাদে রাঙ্গামাটিশহরে ক্ষমতাসীন দলের যুবলীগ এক জঙ্গী মিছিল বের করে।এতে জুম্ম বিরোধী সাম্প্রদায়িক শ্লোগান প্রদান করা হয় বলে জানা যায়।জুম্মদের জায়গা-জমি জবরদখল ও স্বভূমি থেকে উচ্ছেদ,পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করা,সর্বোপরি জুম্মঅধ্যুষিত পার্বত্য চট্টগ্রামকে মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলে পরিণত করার হীন উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রযন্ত্র তথা শাসকশ্রেণির মদদে এই হামলা সংঘটিত হয়েছে বলে জনসংহতি সমিতি মনে করে।পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি জরুরী ভিত্তিতে সেনা-পুলিশের ছত্রছায়ায় সেটেলার বাঙালিদের এই হামলা বন্ধ করার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষগুলোকে আহ্বান জানাচ্ছে এবং এই অগ্নিসংযোগ ও হামলার সাথেজড়িত সেনা-পুলিশ ও সেটেলার বাঙালিদের আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানাচ্ছে।” অন্যদিকে জেএসএস এমএন লারমা গ্রুপের কেন্দ্রীয় তথ্য,প্রচার ও গবেষণা সম্পাদক সুধাকর ত্রিপুরা এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, রাঙ্গামাটি জেলার লংগদু উপজেলা সদরের তিনটিলা ও পার্শ্ববর্তী মানিকজুরছড়ায় গতকাল ১ জুন মোটর সাইকেল চালকের খুনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সেনা-পুলিশের ছত্রছায়ায় সেটেলার বাঙালি কর্তৃক জুম্মদের ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটসহ সংঘবদ্ধ সাম্প্রদায়িক হামলায় পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জ্ঞাপন করছে।এ হামলায় লংগদু সদরের তিনটিলা এলাকায় জুম্মদের দুই শতাধিক ঘরাবাড়ি ও দোকান পাট;মানিকজুরছড়ায় কমপক্ষে ৪০টির ঘরবাড়ি এবং বাত্যা পাড়ায় প্রায় ৪০টি ঘরাবাড়িসহ জুম্মদের প্রায় ৩০০টির অধিক ঘরবাড়ি সম্পূর্ণভাবে ভস্মীভূত হয়েছে।জানা যায় যে,গতকাল ১ জুন ২০১৭ খাগড়াছড়িতে নুরুল ইসলাম নয়ন নামে একজন সেটেলার বাঙালি মোটর সাইকেল চালকের লাশ উদ্ধারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে আজ আনুমানিক সকাল ৯টার দিকে সেনাবাহিনী ও পুলিশের ছত্রছায়ায় লংগদু উপজেলায় বাত্যা পাড়া থেকে সেটেলার বাঙালিদের এক সাম্প্রদায়িক জঙ্গী মিছিল বের করে। মিছিলটি লংগদু সদরের তিনটিলা এলাকায় পৌঁছলে সেটেলার বাঙালিরা কোন উস্কানী ছাড়াই জনসংহতি সমিতির অফিসসহ জুম্মদের ঘরবাড়ি ও দোকানগুলোতে আগুন লাগিয়ে দেয় এবং লুটপাটসহ জুম্মদের উপর হামলা চালায়। বেলা ১২টার দিকে স্থানীয় প্রশাসন এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে। কিন্তু ১৪৪ ধারা চলা অবস্থায় আইনশৃংখলা বাহিনীর উপস্থিতিতে সেটেলার বাঙালিরা জুম্ম গ্রামে অগ্নিসংযোগ শুরু করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।এদিকে আজ সকল সাড়ে ১১টার দিকে উক্ত মোটর সাইকেল চালককে হত্যার প্রতিবাদে রাঙ্গামাটি শহরে ক্ষমতাসীন দলের যুবলীগ এবং খাগড়াছড়িতে বাঙগালী সেটেলার সংগঠন মিছল বের করে ও খাগড়াছড়ি পৌরসভায় মিলিত হয়। জুম্মদের জায়গা-জমি জবরদখল ও তাদের নিজস্বভূমি থেকে উচ্ছেদ,পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করা,সর্বোপরি জুম্ম অধ্যুষিত পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাঙ্গালি অধ্যুষিত অঞ্চলে পরিণত করার হীন উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রযন্ত্র তথা শাসকশ্রেণির মদদে এই হামলা সংঘটিত হয়েছে বলে জনসংহতি সমিতি মনে করে।পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি জরুরী ভিত্তিতে রাষ্ট্রীয় আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সার্বক্ষণিক উপস্থিতিতে সেটেলার বাঙালিদের এই হামলা বন্ধ করার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষগুলোকে আহ্বান জানাই এবং এই অগ্নিসংযোগ ও হামলার সাথে জড়িতদের আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি, ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত জুম্মদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ ও যথাযথ পুর্ণবাসন প্রদান করতে হবে,পাশাপাশি মোটরসাইকেল চালকের খুনীদের বিচারের আওতায় আনার জন্যও জনসহতি সমিতি জোর দাবী জানাচ্ছে।” অন্যদিকে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর রাঙামাটি জেলা ইউনিটের প্রধান সংগঠক শান্তিদেব চাকমা শুক্রবার সংবাদ মাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে রাঙামাটির লংগদুতে পাহাড়িদের উপর সাম্প্রদায়িক হামলা ও তিন শতাধিক ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।বিবৃতিতে তিনি এ হামলাকে পরিকল্পিত আখ্যায়িত করে বলেছেন,অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি করার মাধ্যমে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে পরিকল্পিতভাবে এ হামলা চালানো হয়েছে।বিবৃতিতে তিনি অভিযোগ করে বলেন,আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সেটলারদের এই মিছিল ও সমাবেশের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টির কিছুক্ষণ পরে সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ সহযোগীতায় লংগদু উপজেলা সদরের পাহাড়ি অধ্যুষিত দোকানপাট ও বিভিন্ন গ্রামের ঘরবাড়িতে নির্বিচারে হামলা,অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করা হয়।এতে পাহাড়িদের কমপক্ষে ৩ শতাধিক ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে হামলাকারীরা।ফলে পাহাড়িরা প্রাণের ভয়ে ঘরবাড়ি ছেড়ে জঙ্গলে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। বর্তমানে এলাকায় আতঙ্কজনক পরিস্থিতি বিরাজ করছে।বিবৃতিতে তিনি অবিলম্বে লংগদুতে সাম্প্রদায়িক হামলার সুষ্ঠু বিচার বিভাগীয় তদন্ত,ক্ষতিগ্রস্তদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ ও নিরাপত্তা বিধান করা এবং হামলাকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।একই ঘটনায় পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের সভাপতি সোনালী চাকমা,গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি অংগ্য মারমা,হিল উইমেন্স ফেডারেশন এর সভাপতি নিরূপা চাকমা,পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি বিনয়ন চাকমা,সাজেক নারী সমাজের সভাপতি নিরুপা চাকমা,ঘিলাছড়ি নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি কাজলী ত্রিপুরা ও প্রতিরোধ সাংস্কৃতিক স্কোয়ার্ড এর সভাপতি জ্ঞান কীর্তি চাকমা,সাজেক ভূমি রক্ষা কমিটির সভাপতি নতুন জয় চাকমা (কার্বারী) শুক্রবার সংবাদ মাধ্যমে প্রদত্ত এক যুক্ত বিবৃতিতে ‘রাঙামাটির লুঙুদু উপজেলায় সেনা পুলিশ প্রশাসনের সহায়তায় সেটলারদের বর্বরোচিত হামলায় এক বৃদ্ধাকে খুন,৩০০ এর অধিক ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও সহায়সম্পদ লুটপাটের’ তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ(পিসিপি) ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম লংগুদুর ঘটনার প্রতিবাদে ঢাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে।বিকাল ৪ টায় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত সমাবেশে পিসিপি’র কেন্দ্রীয় সভাপতি বিনয়ন চাকমার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফ সংগঠক মাইকেল চাকমা,গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের যুগ্ম সম্পাদক বরুন চাকমা,পিসিপি’র ঢাকা শাখার সভাপতি রোনাল চাকমা,সেটলারদের অগ্নিসংযোগে নিহত বৃদ্ধা গুরোবালা চাকমার নাতনি বিকল্প চাকমা এবং সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন লেখক শিবিরের সভাপতি হাসিবুর রহমান ও জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের ঢাকা জেলার সাধারণ সম্পাদক হেমন্ত দাশ।সমাবেশ পরিচালনা করেন পিসিপি’র সাধারণ সম্পাদক অনিল চাকমা।সমাবেশ শেষে মিছিল হয়। মিছিলটি পল্টন মোর ঘুরে আবার প্রেসক্লাবের সামনে শেষ হয়।একই ঘটনার প্রতিবাদে শুক্রবার বিকাল ৩ টায় তিন সংগঠন (পিসিপি,ডিওয়াইএফ ও এইচডব্লিউএফ) এর উদ্যোগে কুদুকছড়িতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।শুরুতেই বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি কুদুকছড়ি বড় মহাপুরুম উচ্চ বিদ্যালয় গেইট থেকে শুরু হয়ে বাজারের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিন শেষে পুনরায় স্কুল গেইটে এসে এক প্রতিবাদি সমাবেশে মিলিত হয়।প্রতিবাদ সমাবেশে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ(পিসিপি) রাঙ্গমাটি জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক কংচাই মারমা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মন্টি চাকমা বক্তব্য প্রদান করেন।সমাবেশটি গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক ধর্মশিং চাকমা সভাপতিত্বে পরিচালনা করেন পিসিপি রাঙ্গামাটি জেলা শাখার অর্থ সম্পাদক জয়ন্ত চাকমা।এদিকে এ ঘটনার প্রতিবাদে খাগড়াছড়িতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ,হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম।শুক্রবার বিকাল ৫.৩০ঘটিকার দিকে পানখাইয়া পাড়া থেকে মিছিল শুরু হয়ে মধুপুর বাজার প্রদক্ষিণ করে মধুপুর ও সাতভাইয়া পাড়া মোড়ে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন,পাহড়ি ছাত্র পরিষদের জেলা শাখার সহ-সভাপতি তপন চাকমা,হিল উইমেন্স ফেডারেশন এর জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক রেশমি মারমা।
সামাজিক গণমাধ্যমে অপপ্রচারঃ-
লংগদুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে সামাজিক গণমাধ্যমে নানা প্রকার অপপ্রচার ও উষ্কানীমূলক পোস্ট দিচ্ছে পাহাড়ী/বাঙালী বিভিন্ন একাউন্ট থেকে। বাঙালীরা এ ঘটনায় পাহাড়ীদের দায়ী করছে অন্যদিকে পাহাড়ীরা বাঙালীদের দায়ী করছে। অন্যদিকে পাহাড়ী বিভিন্ন একাউন্ট থেকে ঘটনা সম্পর্কে অতিরঞ্জিত তথ্য দিয়ে, মিথ্যা ও অন্য ঘটনার ছবি দিয়ে অপপ্রচার চালিয়ে পরিস্থিতি অবনতির দিকে ঠেলে দেয়ার অপচেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।রতন চাকমা চিকো (Ratan Chakma Cikko) নামের আইডি থেকে বলা হয়েছে,১৪৪ দারা জারি করেও পুরো লংগুদু সদরের আছে পাশে পাহাড়ীদের সব ঘর জ্বালিয়ে দিলো জানোয়ারের বাচ্চাগুলো,কাদের সহযোগিতায় এ কাজ করা হয়েছে তা সবাই জানে।এখন খবর পাওয়া যাচ্ছে এরকম হামলা করার জন্য অনেক জায়গায় চেষ্টা করা হচ্ছে,সুতরাং সবাই সতর্ক থাকুন আর এসব জানোয়ারদের প্রতিরোধ করুন।পিংকি চাকমা (Pingki Chakma) আইডি থেকে বলা হয়েছে, “লংগদু ঘটনার প্রকৃত জবাব দিতে হলে একমাত্র নল (বন্দুকের নল) দিতে পারবে৷ সমাবেশ, মিশিল মনে হয় কোন কাজে আসবে না৷ যতোদিন জুম্মরা প্রকৃত গেরিলা হতে পারবেনা ততোদিন জুম্মদের কপালে দুঃখ আছে ৷আজ দীর্ঘ প্রতিক্ষায় লংগদু বাসী অপেক্ষায় ছিল কোন দল তাদের বাচাবেঁ জেএসএস, ইউপিডিএফ নাকি সংস্কার কিন্তু কোন দল হামলাকারীদের সামনে যায়নি তাহলে তিনও টা দল কাপুরুষ ??? যদিও আজকে ইউপিডিএফ, সংস্কার বিক্ষোভ মিশিল করে থাকে কিন্তু জেএসএসকে দেখা যায়নি৷ আমি মনে করি জুম্মদের নতুন করে অস্ত্র হাতে নিতে হবে তাছাড়া রাস্তা নেই৷ যে দল আগে সঅস্ত্র আন্দোলন শুরু করবে সে দলকে জনগণ চাই, সে দল সত্যিকারের বিপ্লবী দল৷” নয়ন ত্রিপুরা (Noyon Tripura) নামের আইডি থেকে বলা হয়েছে, “ইচ্ছা করতেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ালেখা ছেড়ে দিয়ে পাহাড়ে গিয়ে অস্ত্র প্রশিক্ষণ নিতে এবং সেটেলারদের বিরুদ্ধে এবং যুদ্ধ করতে।সময় এসেছে এবার ভাববার,হয় স্বাধীনভাবে বেচে থাকার জন্য লড়তে হবে আর না হয় এইভাবে সেটেলার আর সেনাবাহিনীদের হাতে মরতে হবে।যেই দেশের সেনাবাহিনী বিশ্বে শান্তিরক্ষা মিশনে বিশ্বের কাছে অনেক প্রশংসনীয় দাবিদার সেই সেনাবাহিনী পাহাড়/পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি/আদিবাসী দের উপর অত্যাচার, হত্যা, ঘুম, অগ্নিসংযোগ এর মুল হোতা।যাদের উপস্থিতে এইসব ঘটনা হচ্ছে তাদের কে আর কতদিন দেখে থাকবো???হয় বাঁচবো না হয় মরবো।এক হও জুম্ম জনতা চাই পাহাড়ের স্বাধীনতা।কলম ছেড়ে অস্ত্র ধর পাহাড়কে সেটেলার মুক্ত করো।মা-বোনদের কান্না বৃথা যেতে দিওনা।এই পাহাড় তোমার আমার যুদ্ধ করতে হবে আমাদের সবার।” আবু উবায়দা নামের ফেসবুক আইডি থেকে বলা হয়েছে, ”লাশ দাফন নিয়ে ব্যস্ত লংগদু উপজেলার বাঙ্গালী।জানাযা নামাজে সমবেত হচ্ছিল বিভিন্ন এলাকা হতে দলে দলে।ঠিক তখনই লংগদু উপজেলায় জেএসএস এর ঘাটি কাঠাতলীতে অগ্নি সংযোগের সংবাদ পেলো সমবেত মানুষ।ঘটনাটা কি?????? ঘটনা হচ্ছে নয়ন হত্যার মূল হোতা লংগদু উপজেলার বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মী দীপালো চাকমা। যার সাথে নয়ন হত্যার দুদিন আগে নয়নের সাথে তর্ক হয়। সেই তর্কের রেশ ধরে জেএসএস নেতা দীপালো নয়নকে জেএসএস সদস্য দ্বারা হত্যা করিয়েছে।গতকাল দীপালোকে নয়নের মোটর সাইকেলে নজর রাখতে ডাংগা বাজার,দীঘিনালায় দেখা গিয়েছে।এমনকি এই হত্যায় উপজেলা জেএসএস এর বড় বড় নেতাদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে…….এটা এখন মোটামুটি সুস্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।ঠিক তখনই নয়নের জানাযায় লোকজন সমবেত হওয়ার মাধ্যমে তিব্র আন্দোলনের আভাস পেয়ে জেএসএস নিজের ঘাটিতেই অগ্নী সংযোগ করেছে।উদ্দেশ্য নিজেদের ঘরে অগ্নি সংযোগ করে আন্দোলন ভিন্ন ঘাতে প্রভাবিত করা।নয়ন হত্যাকে ধামাচাপা দিয়ে নিজেদের ক্ষতিগ্রস্থ হিসেবে মিডিয়ায় তুলে ধরা।” এদিকে লংগদুর ঘটনায় পাহাড়ী বিভিন্ন আইডি থেকে যেসব অগ্নিকাণ্ডের ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে অপপ্রচার করা হচ্ছে,অনুসন্ধান চালিয়ে দেখা গেছে তার বেশিরভাগই অন্য ঘটনার ছবি।এসবের কোনটি গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতাল পল্লীতে আগুন দেয়ার ছবি।কোনোটি টঙ্গীতে বয়লার বিষ্ফোরণের ছবি,আবার কোনোটি বরিশালে বিস্কুটের গোডাউনে আগুনের ছবি।বিষয়টি নিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তারা জানান,বিষয়টি তারা মনিটরিং করছেন।সঠিক সময়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।উৎসঃ-পার্বত্য নিউজ ডটকম